বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ইংল্যান্ডে করোনায় আক্রান্ত ৮৫ জনে একজন, তবু ভ্যাকসিনে অনীহা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৭:৩৪ পিএম

ইংল্যান্ডে ৮৫ জনে একজন আক্রান্ত, তবু ভ্যাকসিনে অনীহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখন নতুন ধরনের করোনাভাইরাস ব্রিটেনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সংক্রমণ এত দ্রুত বাড়ছে যে, সরকারি হিসাবেই ইংল্যান্ডে এখন প্রতি ৮৫ জনের মধ্যে একজন আক্রান্ত হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক লাখের বেশি। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে লন্ডনে। কিন্তু লন্ডনের স্বাস্থ্য কর্মীরা বলছেন, সংক্রমণের ভীতি বাড়লেও মানুষের মধ্যে ভ্যাকসিন গ্রহণের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। লোকজনকে ভ্যাকসিন গ্রহণের আহ্বান জানানো হলেও তেমন একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। -বিবিসি
ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য বিভাগের (এনএইচএসের) কর্মকর্তা মোস্তফা ফারুক লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যমলেটস এলাকার একটি জিপি সেন্টার বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ভ্যাকসিন কর্মসূচির প্রথম সপ্তাহেই তারা ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের সন্দেহ, বিভ্রান্তি এবং আপত্তির মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, 'আমরা যখন ফোন করে ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছি, অনেক মানুষ গড়িমসি করছেন, নানা প্রশ্ন করছেন। অনেকে সরাসরি প্রত্যাখ্যানও করছেন।' ব্রিটেনে গত ১৫ ডিসেম্বর ফাইজার এবং বায়োএনটেকের তৈরি ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে। প্রথম দফায় ৮০ বছর এবং তার বেশি বয়সীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। মোস্তফা ফারুক জানান, প্রথম সপ্তাহে টাওয়ার হ্যামলেটসের ৩৬টি জিপি সার্ভিসের মাধ্যমে ৮০ বা তার বেশি বয়সী ৯৩৫ জনকে টিকা দেওয়ার টার্গেট নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আপত্তি ও অনীহার কারণে লক্ষ্যমাত্রার ৪৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। ফলে বেঁচে যাওয়া ভ্যাকসিনগুলো চিকিৎসক, নার্স বা অন্য স্বাস্থ্য কর্মীদের দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করতে চিকিৎসকরা নিজেরাই তাদের বাসায় ফোন করেছেন। কিন্তু তারপরেও অনেকেই ভ্যাকসিন নিতে সরাসরি অস্বীকার করেছেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, একজন স্বাস্থ্যকর্মী একদিনে ২৫ জনকে ফোন করেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে প্রায় সাতজনই সরাসরি ভ্যাকসিন নিতে অস্বীকার করেছেন। বাকি পাঁচজন নানা কারণে আসতে অপরাগতার কথা জানিয়েছেন।

মোস্তফা ফারুক বলেন, মানুষের মধ্যে ব্যাপক সন্দেহ কাজ করছে। তাদের নানা প্রশ্ন রয়েছে। কেউ বলছেন, কিভাবে এত তাড়াতাড়ি এই ভ্যাকসিন আনা সম্ভব হলো? ঠিকমত ট্রায়াল হয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন তারা। অনেকে সন্দেহ করছেন যে, বয়স্কদের হয়তো গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তাদের জিপি সার্জারি থেকে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য যাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে তাদের অর্ধেকেরও বেশি নানা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ভ্যাকসিনবিরোধী বিভিন্ন গ্রুপ সামাজিক মাধ্যমে যেসব প্রচারণা চালিয়েছে অনেক মানুষ তাতেও প্রভাবিত হচ্ছেন। একই কথা বলেছেন, টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার সমাজকর্মী নবাব উদ্দিন। তিনি ইস্ট হ্যানডস নামের একটি দাতব্য সংস্থার সঙ্গে জড়িত। নবাব উদ্দিন জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের ওপর পরিচালিত সংক্ষিপ্ত একটি জরিপে তারা দেখেছেন, কোভিড এবং এর ভ্যাকসিন নিয়ে তাদের মধ্যে নানা বিভ্রান্তি-সন্দেহ কাজ করছে। ওই জরিপের ৬৫ শতাংশই বলেছেন, ভ্যাকসিন নেবেন কিনা তা নিয়ে তারা নিশ্চিত নন। তারা অপেক্ষা করে দেখবেন। তিনি বলেন, সমাজের কিছু অংশে সঠিক তথ্য প্রবাহের দারুণ ঘাটতি রয়েছে। মানুষের ভেতরে নানা ধরনের অদ্ভূত সব ধারণা রয়েছে। অল্প শিক্ষার কারণে বিশেষ করে বয়স্করা নিজেরা খবর তেমন পড়েন না বা দেখেন না। অন্যের কাছে শোনেন এবং কান কথা বিশ্বাস করেন, নানা গুজব ঘোরাফেরা করে। তবে ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, প্রথম সপ্তাহেই ছয় লাখেরও বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিশ্বের অনেক দেশের মতো ব্রিটেনেও মুসলিমদের একাংশের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে সন্দেহ আছে। ব্রিটিশ বোর্ড অব স্কলারস অ্যান্ড ইমামস (বিবিএসআই) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইসলামি শরিয়তের ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। তারা চলতি সপ্তাহে তাদের একটি বিবৃতিতে বলেছে, কোভিড ভ্যাকসিনের ধর্মীয় গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অনেকেই তাদের কাছে প্রশ্নে করছেন।

সংগঠনটি বলছে, এসব ভ্যাকসিনে যদি হালাল কায়দায় জবাই না করা গরুর বা শুয়োরের কোলাজেন থেকে তৈরি জেলাটিন থাকে তাহলে তা হালাল হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরও অনেক মুসলিম চাইছেন। বিবিএসআইয়ের সঙ্গে অনেক চিকিৎসকও জড়িত। তারা তাদের এক বিবৃতিতে মুসলিমদের আশ্বস্ত করেছেন যে, ফাইজার বা মডার্নার ভ্যাকসিনে কোনো জেলাটিন ব্যবহৃত হয়নি। তারা নানা হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ইসলামে অসুস্থতা থেকে নিরাময়ের চেষ্টার নির্দেশ রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন