শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

৭ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলে এক বছরে ৩০ লাখ টন দানাদার খাদ্য ফসল উৎপাদন হচ্ছে

মাঠে মাঠে চলছে আমন কাটা ধুম

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:১০ এএম

পৌষের সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে এখন আমন কাটার ধুম চলছে। ভাটি এলাকা হওয়া ছাড়াও এবার আম্পান ও ভাদ্রের অমাবশ্যার ভড়া কাটালে ভর করে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ার আর প্রবল বর্ষনের প্লাবনে আবাদ বিলম্বিত হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৫৫ ভাগ জমির আমন কাটা শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। ‘আম্পান’ সহ একের পর এক প্রকৃতিক বিপর্যয়েও দক্ষিণের কৃষিযোদ্ধারা বসে থাকেন নি। সদ্য সমাপ্ত খরিপ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় ৭ লাখ ১৫ হাজার ৯২২ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ সম্পন্ন করেন এ অঞ্চলের কৃষকগন। যা মূল লক্ষ্যমাত্রার ৯৯.৯৪% বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই জানিয়েছে। আর এবার উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে প্রায় ১৮ লাখ টন চাল। যা অর্জনের ব্যাপারে আশাবাদী ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
গত বছর দেশের ৫৬ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টন আমন উৎপাদনের সাফল্যের পরে সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে দেড় কোটি টনেরও বেশী আমন চাল উৎপাদনের লক্ষ স্থির করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে দেশের প্রায় ৮০ ভাগ আমন কর্তন সম্পন্ন হয়েছে।
আদীকাল থেকে দুই বাংলায় আমন প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল থাকলেও সময়ের বিবর্তনে ১৯৭০ সালের পরে আমাদের দেশে বোরো’র আবাদ প্রচলন হবার পরে এখন তা দেশের প্রধান খাদ্য ফসলের স্থান করে নিয়েছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলে এখনো আমন তার পুরনো অবস্থান ধরে রেখেছে।
এবার দেশের ৫৫ লাখ ৪৯ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৫৮ হাজার টন আমন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করেছিল কৃষি মন্ত্রনালয়। আবাদ লক্ষ্য অর্জনের পরে উৎপাদনের সে স্তরে পৌছার ব্যাপারে আশাবাদী কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর। ফলে বিদায়ী খরিপ মৌসুমে আউশ এবং চলতি রবি মৌসুমে গম ও বোরো সহ দেশে দানাদার খাদ্য ফসল উৎপাদন ৪ কোটি টন অতিক্রম করবে বলে আশা করছেন দায়িত্বশীল মহল।
এদিকে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও হাইব্রিড আমন ধানের আবাদ ও উৎপাদন বাড়ছে। এবারের আমন মৌসুমে দেশে প্রায় পৌনে ২ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড আমনের আবাদ হয়েছে। যার ফলন হেক্টর প্রতি প্রায় ৫ টনের কাছে। দক্ষিণাঞ্চলেও সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে হেক্টরে প্রায় ১ হাজার হাইব্রিড আমনের অবাদ হয়েছে। উৎপাদন ছিল হেক্টর প্রতি প্রায় ৪ টন চাল।
এদিকে ‘বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট-ব্রি’ গতবছর ‘ব্রি ধান-৮৭’ নামের নতুন একটি হাইব্রিড জাতের আমন ধান উদ্ভাবন করেছে। যার ফলন হেক্টর প্রতি ৬ টন বলে জানা গেছে। এটি আমন মৌসুমের আগাম জাত বলে ব্রী’র মহাপরিচালক জানিয়েছেন। এ জাত ২০০৮ সালে উদ্ভাবিত ‘ব্রি ধানÑ৪৯’এর চেয়ে এক সপ্তাহ আগে ওঠে। কিন্তু ফলন অন্য হাইব্রিড জাতের ধানের তুলনায় ১ টনেরও বেশি। ব্রি ধান-৮৭’র দানা চিকন ও লম্বা। এ জাতের ধানের পূর্ণবয়স্ক একটি গাছের উচ্চতা ১২২ সেন্টিমিটার। এর কান্ড শক্ত বিধায় গাছ লম্বা হলেও সহজে ঢলে পড়ে না। ধান পাকার সময় কান্ড ও পাতা সবুজ থাকে। পরিপুষ্ট এক হাজার ধানের ওজন ২৪ গ্রামের বেশি।
তবে দক্ষিণাঞ্চলে এখনো ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের আবাদ কাঙ্খিত মাত্রায় সম্প্রসারন ঘটছে না। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে এখনো প্রায় ৪০% জমিতে সনাতন জাতের আমনের আবাদ হচ্ছে। যার উৎপাদন হেক্টর প্রতি এক থেকে দেড় টনের বেশী নয়। কিন্তু সে পরিস্থিতি উত্তরনে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের খুব যোড়াল কোন পদক্ষেপও লক্ষনীয় নয়। অথচ দক্ষিনাঞ্চলে বর্তমানে যে পরিমান জমিতে আমনের অবাদ হচ্ছে, তার ২৫ ভাগ হাইব্রিড এবং ৭৫ ভাগ উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদ করলে এ অঞ্চলে ১২ লাখ টনেরও বেশী খাদ্য উদ্বৃত্ত রাখা সম্ভব বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। তবে এরপরেও এককালে ‘বাংলার শষ্যভান্ডার’ খ্যাত দক্ষিণাঞ্চল এখনো খাদ্যে প্রায় ৭ লাখ টন উদ্বৃত্ত এলাকা।
আগামী দিন পনেরর মধ্যেই এ অঞ্চলে আবাদকৃত পুরো জমির আমন কর্তন সম্পন্ন হবে বলে আশা করছে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। ফলে কৃষকের গোলা পরিপূর্ণহবে ধানে। তবে এবার ভড়া আমন মৌসুমেও চালের দাম বেড়ে চললেও ধানের দামের সাথে তার ফাড়াক ব্যপক। এ অঞ্চলে এখনো ধানের মন ৭শ থেকে সাড়ে সাতশ টাকার বেশী নয়।
এবার আমন মৌশুমে প্রায় ১৮ লাখ টনের উৎপাদন লক্ষ্য অর্জিত হবার পাশাপাশি চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে ৬ লক্ষাধীক টন বোরো চাল উৎপাদনের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। এছাড়া সমাপ্ত খরিপ মৌসুমে আরো প্রায় সোয়া ৬ লাখ টন আউশ উৎপাদন হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে। ফলে এক বছরে ৩০ লক্ষাধীক টন দানাদার খাদ্য ফসল উৎপাদন সম্ভবনার কথা জানিয়েছেন ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। এর সাথে অন্তত ১০ হাজার টন গম উৎপাদনের লক্ষেও আবাদ চলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Jack Ali ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৫ পিএম says : 0
Our farmers are working very hard to produce rice then why we need to import rice from the enemy of Bangladesh... India????????????????this is all conspiracy.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন