আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোল্ডেন মনির ঘুষ দিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাজ বাগিয়ে নিতেন। গোল্ডেন মনিরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত বুধবার রাজউকের পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করে গৃণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বসুকে। দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ সংশিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রদীপ কুমার বসুর সঙ্গে গোল্ডেন মনিরের সম্পৃক্তা তদন্তে তারা বেশ কিছু নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব নথিতে দেখা যায়, প্রদীপ কুমার বসু গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানে ত্রæটিপূর্ণ নির্মাণ কাজ করায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহিদ উলাহ খন্দকার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দুর্নীতির বিষয়টি প্রমানিত হওয়ার পরও শহীদ উলাহ খন্দকার স্বাক্ষতির অপর এক প্রজ্ঞাপনে তার একটি বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি এক বছরের জন্য স্থগিত রেখে লুঘু দন্ডে দন্ডিত করা হয়। দুদকের কর্মকর্তারা জানান, একজন ব্যক্তির দুর্নীতি সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ার পরও তাকে লঘু দন্ড দেওয়া এবং বিধি লংঘন করে দন্ড দেওয়ার মাত্র ৮ মাসের আগে পদোন্নতি দেওয়ার নেপথ্যে বড় অংকের ঘুষ লেনদেন হয়েছে। এক্ষেত্রে গোল্ডেন মনির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পক্ষ নিয়ে বড় অংকের অর্থ ব্যয় করেন উৎকোচ হিসেবে।
দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, পরিপত্র গোপন রেখে শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৮ মাস আগে প্রদীপ কুমার বসুকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ১৫তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বসুকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে মূল ব্যাচের সঙ্গে ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা দেওয়ার বিধিগত সুযোগ ছিল না। তার পরও পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে দুদক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। পাশাপাশি গোল্ডেন মনির কাকে কাকে ঘুষ দিয়েছেন সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, গত ৯ ডিসেম্বর প্র্রদীপ কুমার বসুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাকে প্রয়োজনে পুন:রায় তলব করে এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। কমিশন ইতিমদ্যে তার আত্মীয়-স্বজনের নাম-ঠিকানা ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিয়েছেন। সেগুলো জব্দ করার প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে গোল্ডেন মনিরের সম্পৃক্ততায় গত বুধবার রাজউকের পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কমিশন। কমিশনের উপ-পরিচালক সামছুল আলম নেতৃত্বে তদন্ত দলের জেরায় তিনি অনেক প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান। এবিষয়ে জানতে চাইলে সামছুল আলম কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন পরিচালক জানান, গোলেন্ডন মনিরের অবৈধ সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে যারা বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করেছেন এবং মনিরের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়েছেন তাদের মধ্যে ৭ জনকে তলবী নোটিস পাঠানো হয়েছে। প্রদীপ কুমার বসু ও শাহীনুল ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছেন রাজউকের সিবিএ নেতা আব্দুল জলিল আকন্দ, নিম্নমান সহকারী মো. ওবায়দুলাহ ও উচ্চমান সহকারী আব্দুল মালেক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম ওরফে সোনা শফিক ও বিএনপি নেতা সাবেক কাউন্সিলর এম এ কাউয়ুম। এদের মধ্যে কাইয়ুম বিদেশে আত্মগোপনে রয়েছেন। অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।
গত ২০ নভেম্বর গোল্ডেন মনিরকে গ্রেফতার করে র্যাব। তিবি বর্তমানে কারাগারে আছেন। ২০১২ সালের করা মামলায় গত ৩ ডিসেম্বর মনিরের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় দুদক। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অপর একটি অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন