কক্সবাজারের চকরিয়ায় ভেজাল ও নিম্নমানের মরিচ বীজ রোপন করে স্বর্বশান্ত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক কৃষক। ফলন আসার শুরুতেই মরে যাচ্ছে বেশিরভাগ মরিচ ক্ষেত । দুইটি কোম্পানির ভেজাল ও নিম্নমানের মরিচ বীজ ক্রয় করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ কৃষকদের। এ অবস্থায় প্রতারণার শিকার হয়ে কৃষকের মুখে হাসির বদলে চলছে নীরব কান্না। ক্ষতিপুরনের পাশাপাশি এ অসাধু বীজ কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নিয়ে মানববন্ধন করেছে জেলা কৃষক লীগ।
জানা যায়, কক্সবাজারের চকরিয়ার পূর্ববড় ভেওলা এলাকায় মাতামুহুরী নদীর পাড়ে প্রতি বছর মরিচসহ রকমারি সবজি চাষ করে কৃষকরা ভালো ফলন পান। এ বছর বেশিরভাগ কৃষক মরিচ চাষ করে সর্বশান্ত হয়েছে। পাঁচ শতাধিক কৃষকের নীরব কান্না এখন মরিচ চাষকে ঘিরে। সুপ্রীম সীড কোম্পানির সানড্রফ ও শহীদ এগ্রো সীড কোম্পানির ভেজাল মরিচ বীজ রোপণ করে প্রতারণার শিকার হয়েছে কৃষকরা। এসব বীজ জমিতে রোপণ করার পর ফলন হয়নি। ফলন আসার শুরুতেই মরে যাচ্ছে ক্ষেতের বেশিরভাগ মরিচ গাছ।
এভাবে প্রতারণার শিকার হয়ে কৃষকের মুখে হাসির বদলে চলছে নীরব কান্না। কেউ গরু ছাগল বিক্রি করে, কেউ এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে, অথবা ধার-দেনা করে মরিচ চাষ করেছে। এ চাষ থেকে উৎপাদন করে মেয়ের বিয়ে, বোনের বিয়ে দেবারও পরিকল্পনা ছিল অনেকের। কেউ আবার এ চাষ করে ভবিষ্যতে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু অসাধু বীজ কোম্পানির প্রতারণায় সর্বশান্ত হয় পাঁচ শতাধিক কৃষক। আর ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষকের কান্নাই যেন থামছে না। প্রতারণায় সর্বশান্ত কৃষকরা মানববন্ধন করে ক্ষতিপুরণের পাশাপাশি এ অসাধু বীজ কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান।
মরিচ চাষি রহিম উল্লাহ বলেন, আমি ঘরের গরু বিক্রি করে এই মরিচ চাষ করেছিলাম। কিন্তু আমি এত বড় ধরা খাব চিন্তাও করতে পারিনি। এখন আমার কিছুই নেই বললেই চলে। আমার সব মরিচ গাছ মরে গেছে। আমি এর বিচার চাই।
আরেক মরিচ চাষি লিয়াকত মিয়া জানান, আমার সংসারের একমাত্র উপার্জন এই মরিচ ক্ষেত। কিন্তু বীজ কোম্পানি সুপ্রীম সীড কোম্পানির সানড্রফ ও শহীদ এগ্রো সীড নামের এই দুই কোম্পানির ভেজাল বীজের কারণে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি ঋণের বুঝায় রয়েছে। জানিনা আমি কিভাবে এই ঋণ শুধ করব।
মরিচ চাষি সাইফুল করিম জানান, এই অসাধু মরিচ বীজ কোম্পানিরা ভাল বীজের কথা বলে নষ্ট বীজ দিয়ে দরিদ্র কৃষকদের ঠকিয়েছে। তারা গরিবের টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য এই অপকর্ম করেছে। কৃষকবান্ধব সরকারের কাছে এর বিচার চাই।
এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পূর্ব ভেওলা ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান সোহেল বলেন, চশরিয়ার ভেজাল বীজ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের অপকর্মের কারণে কৃষক ভাইয়েরা বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। তারা মাত্র ৩ মাসের জন্য এই চাষ করে। এই টাকা দিয়েই তারা সারা বছরের ঘর সংসার চালান। তাই কৃষকভাইদের প্রতি এই অন্যায়ের বিচারের দাবী জানাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
কৃষকদের এমন প্রতারণা করার ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্ধিন চৌধুরী জানান, প্রতারক বীজ কোম্পানি নকল বীজ বিক্রি করে কৃষকের সর্বশান্ত করেছে। চকরিয়ায় পাঁচ শতাধিক কৃষক দশ কোটি টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছে। কৃষকদের সাথে এমন প্রতারনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপুরনের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুটটু জানান, ভেজাল মরিচ বীজের কারণে পাঁচশত কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষককে ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা করে দেয়ার চেষ্টা করা হবে। এসব ভেজাল বীজ যাতে বিক্রি করে কৃষকদের সর্বশান্ত করতে না পারে সে জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, কৃষকদের সাথে এ ধরনের প্রতারণা করা ফৌজদারী দন্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ক্ষতিপুরনের পাশাপাশি এ অসাধু বীজ কোম্পানিসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে কৃষকদের নিয়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে জেলা কৃষক লীগ। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশে ক্ষতিপুরণের পাশাপাশি প্রতারক বীজ কোম্পানি নকল বীজ বিক্রিতে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানানো হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন