বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নদীর নাব্যতা এবং দখল ও দূষণরোধে সফলতা

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নৌপরিবহন খাতের ভূমিকা গুরুত্বপূণর্ : নৌ-প্রতিমন্ত্রী

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

সারাদেশে নৌ-পথ খননে ৩৪টি ড্রেজার সংগ্রহ ও সুষ্ঠু ফেরি পারাপারের লক্ষ্যে ১৭টি ফেরি নির্মাণ,১০ হাজার কিলোমিটার নৌ-পথ খননের কার্যক্রম, নদী তীর দখলমুক্ত করা এবং নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়াজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা নিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। গত ২০২০ সাল জুড়ে ছিলো উচ্ছেদের পর পুনঃদখলরোধে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে নদীর উভয় তীরে ওয়াকওয়ে, পাকা সিঁড়ি, বসার বেঞ্চ, ইকোপার্ক নির্মাণ, নদীর পাড় বাঁধাই, গাইড ওয়াল নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা এবং দখল ও দূষণরোধে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গঠন করা। পানগাঁওয়ে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মিত হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের গতিশীলতা আনয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং চট্টগ্রাম বন্দরে বে-টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। মেরিটাইম সেক্টরে মানব সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেট, রংপুর, বরিশাল ও পাবনায় চারটি নতুন মেরিন একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গত এক বছরে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সফলতা ও উন্নয়নের পাল্লা ভারি। 

নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, নৌপরিবহন অধিদপ্তর, বিআইডবিøউটিএ, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি)সহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নৌপরিবহন খাতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ পায়রা বন্দর ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজ দ্রতগতিতে এগিয়ে চলছে। তিনি বলেন, নদীর দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নৌপরিবহন খাতের ভূমিকা গুরুত্বপূণ। কৃষি, মৎস্য সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম বিবেচনায় নিয়ে নদী রক্ষায় সার্বিক ও সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও সার্বিক নির্দেশনায় নৌ- সেক্টর দ্রæত বিকশিত হচ্ছে। বিভিন্ন নদী বন্দরের আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন করা হয়েছে।
দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি-রফতানির চাহিদা মেটাতে একবিংশ শতাব্দীর যুগোপযোগি, আধুনিক ও পরিবেশ বান্ধব সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পটুয়াখালীতে দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রা বন্দর নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারের মেগা প্রকল্প হিসাবে পায়রা বন্দরে একটি কন্টেইনার টার্মিনাল, একটি বাল্ক টার্মিনাল, একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, একটি প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, বিদ্যুৎ প্লান্ট, মডার্ন সিটি, বিমান বন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলাসহ ১৯ টি কম্পোনেন্টের কাজ চলমান রয়েছে। আগামী ২০২৩ সনে পায়রা বন্দরকে বিশ^মানের একটি আধুনিক বন্দর এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে অর্থনীতির সহায়ক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের উপর অতিরিক্ত চাপ কমানো এবং ব্যাপক সংখ্যক জাহাজ এবং কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যে সরকার কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করছে।
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং ছয়টি জাহাজ সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও ছয়টি জাহাজ সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে এবং ঢাকার মতিঝিলে একটি ২৫তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বিদেশী জাহাজে কর্মরত নাবিকদের জন্য মেশিন রিডেবল পরিচয়পত্র ‘আইডি কার্ড’ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌ-পথে নৌ-যান দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে নৌ-যানের সার্ভে ও রেজিষ্ট্রেশন পদ্ধতি উন্নত এবং নৌ-যানের ডিজাইন অনুমোদন প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন ও অনলাইনে করা হয়েছে। বেনাপোল স্থলবন্দরসহ নতুন দশটি স্থলবন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধু নদী পদক’ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বিআইডবিøউটিএ :নৌপথ খনন ও নাব্যতা বজায় রাখার লক্ষ্যে সরকারের গত দু’ মেয়াদে ৩৪টি ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়েছে। গত এক বছরে ৩৫টি ড্রেজার সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রায় ২,৩৩২ কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হয়েছে। ১০ হাজার কিলোমিটার নৌ-পথ খননের কাজ চলমান রয়েছে। নদী তীরের জায়গা অবৈধ দখল ও দূষনরোধে ঢাকা শহরের চারিদিকে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু এবং তুরাগ নদীর তীরভূমি হতে ২০,১৫৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং ৭২৬ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। উচ্ছেদকৃত জায়গা পুনঃদখলরোধে ২,০০০টি স্থায়ী ও টেকসই সীমানা পিলার নির্মাণ, ২৩.৫ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে এবং শ্যামপুর ও খানপুরে দু’টি ইকোপার্ক নির্মাণ করা হয়েছে।
বিআইডবিøউটিসি: যাত্রি ও যানবাহন চলাচল সহজ ও দ্রæততর করার লক্ষ্যে গত দু’মেয়াদে ১৭টি ফেরী নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ৩৫টি বাণিজ্যিক ও ৮টি সহায়ক পানিযান সংগ্রহ করা হবে। ষ্টিমার মডেলের ২টি বৃহৎ যাত্রীবাহী নৌ-যান এম.ভি বাঙালি’ এবং ‘এম. ভি মধুমতি’ নির্মাণ করা হয়েছে।
নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর:
অভ্যন্তরীণ নৌ-পথে নৌ-যান দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে নৌ-যানের সার্ভে ও রেজিষ্ট্রেশন পদ্ধতি উন্নত এবং নৌ-যানের ডিজাইন অনুমোদন প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন ও অনলাইনে করা হয়েছে। কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও কুতুবদিয়ার লাইটহাউজসমূহ আধুনিক প্রযুক্তিসহ পুনঃনির্মাণ, নিঝুমদ্বীপ, চরকুকড়িমুকড়ি, কুয়াকাটা ও দুবলারচরে নতুন লাইটহাউজ, টাওয়ার ভবন ও রেডিও স্টেশন এবং আগারগাঁওয়ে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন :
নদীর তীরভূমি অবৈধ দখল ও দূষণরোধ স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে এনে নদীর বহুমাতৃক ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রয়োজনে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনের উদ্যোগে ১২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পাবনার বড়াল নদী উদ্ধার করা হয়েছে। দেশের ৬৪টি জেলার জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে জেলার নদীসমূহের ৪৯,১৬২টি অবৈধ দখলদারে তালিকা পাওয়া গেছে।
পানগাঁও কন্টেইনার টার্মিনাল:
চট্টগ্রাম থেকে নৌ-পথে কন্টেইনার ঢাকা আনা নেয়ার জন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার পানগাঁও বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। যা নৌ-মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অনেক দায়িত্ব পালন করেছেন।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর:
ভবিষ্যত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাহিদাকে সামনে রেখে বাংলাদেশের কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৬ মিটার গভীরতা এবং ৮,০০০ টিইইউ’স (বিশ ফুট দৈর্ঘের কন্টেইনার) ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন কন্টেইনার জাহাজ প্রবেশ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য কক্সবাজার জেলার মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়নের প্রাথমিক কাজ আগামী ২০২৬ সালে শেষ হবে।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ:
গত ২০১৩ সালে পায়রা সমুদ্র বন্দরের উদ্বোধনের পর থেকে ক্ষুদ্র আকারে আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গত ২০১৬ থেকে পায়রা বন্দরে বহিঃনোঙ্গরে অপারেশনাল কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত ১০৪টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের অপারেশনাল কার্যক্রম সম্পন্ন করে সরকারের ২৩৬ কোটি টাকা আয় হয়েছে। আগামী ২০২৩ সালে বন্দরকে বিশ্বমানের একটি আধুনিক বন্দর এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে অর্থনীতির সহায়ক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ:
দেশের মোট আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৯২ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে হ্যান্ডলিং করা হয়ে থাকে। এ বন্দরকে আরও গতিশীল করতে ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক শিপিং জার্ণাল ‘লয়েডস লিস্ট’ এর জরিপে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০টি কন্টেইনার পোর্টের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর ২০০৯ সালে ৯৮তম অবস্থান থেকে মাত্র ১১ বছরে ৪০ ধাপ এগিয়ে ২০২০ সালে ৫৮তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ:
বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে মোংলা বন্দর বর্তমানে আধুনিক বন্দরে রূপান্তরিত হয়েছে। এ বন্দরে বর্তমানে ৬টি নিজস্ব জেটি, ব্যক্তিমালিকানাধীন ৭টি জেটি এবং ২২টি এ্যাংকোরেজ এর মাধ্যমে মোট ৩৫টি জাহাজ একসাথে হ্যান্ডেল করা সম্ভব। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে আয় করেছে ৩৩৮ কোটি টাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন