শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গোয়েন্দা পরিচয়ে ডাকাতি করতেন দুই এএসআই

গ্রেফতারের পর কারাগারে : ডাকাতিতে ব্যবহৃত হতো সরকারি অস্ত্র, গাড়ি ও হ্যান্ডকাফ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় দুই এএসআইয়ের সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ। স¤প্রতি একটি ঘটনায় গ্রেফতারও করা হয়েছে তাদেরকে। পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে জমা দেয়া এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। অভিযুক্ত এএসআই দুজন হলেন- নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার এএসআই মাসুম শেখ এবং গেন্ডারিয়ার আরআরএফ মিলব্যারাকের শহীদ শেখ।
পুলিশ জানায়, মামলার এজাহারে দুই পুলিশ সদস্যদের নাম না থাকলেও ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের পর জবানবন্দিতে উঠে আসে তাদের নাম। তাদের নেতৃত্বে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করতো। এমনকি এসব কাজে ব্যবহার করা হতো সরকারি অস্ত্র, গাড়ি ও হ্যান্ডকাফ। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই দুই এএসআইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। চলছে বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া। ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগের ডিসি মো. রাজীব আল মাসুদ বলেন, আসামি এএসআই শহীদ ও মাসুম শেখ বেশ কিছু দিন ধরে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করে আসছিলেন। সংঘবদ্ধ একটি অপরাধী চক্র ডিবি পরিচয় দিয়ে অপরাধ করে আসছিল। সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এ চক্রের সাথে আরো কেউ জড়িত রয়েছে কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির লালবাগ বিভাগের এসি ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, এএসআই শহীদ শেখ ও মাসুম শেখ দীর্ঘদিন ধরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে আসছিলেন। তাদের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একটি অপরাধীচক্র রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে অপরাধ করে আসছিল। অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পর শহীদ ও মাসুমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ডাকাতির কাজে ব্যবহার করা পিস্তল, হ্যান্ডকাফ ও একটি প্রাইভেট কার।
মামলার নথিপত্রের তথ্য থেকে জানা গেছে, আবদুল আওয়াল নামের এক ব্যক্তি রামপুরার একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর তিনি রামপুরার টিভি সেন্টারের সামনে দাড়িয়ে ছিলেন। তখন কথিত বাবু নামের এক ব্যক্তি মাদরাসাশিক্ষক আওয়ালের কাছে এসে বলেন পেশায় তিনি রিকশাচালক। তিনি লেখাপড়া জানেন না। ১০০ রিয়াল ভাঙানোর জন্য তিনি সাহায্য চান। কথোপকথনের একপর্যায়ে আওয়াল ওই ব্যক্তির কাছে জানতে চান, রিয়াল কোথায় পেয়েছেন? জবাবে বাবু জানান, তার পরিচিত একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ওই রিয়াল রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছেন। কথিত রিকশাচালক বাবুর কথায় বিশ্বাস করে রিয়াল ভাঙিয়ে দেন আওয়াল। পরে কথিত পরিচ্ছন্নতাকর্মী হায়দারকে আওয়ালের কাছে হাজির করেন বাবু। মোট ১ হাজার ৮৬০ রিয়াল ভাঙানোর জন্য মাদরাসাশিক্ষক আওয়ালকে অনুরোধ করেন কথিত পরিচ্ছন্নতাকর্মী হায়দার। রিয়ালগুলো ভাঙিয়ে দিলে অর্ধেক টাকা আওয়ালকে দেয়ার প্রস্তাব দেন বাবু ও হায়দার। তাদের রিয়ালগুলো বুঝিয়ে নেয়ার জন্য আওয়ালকে রামপুরার লোহাজ হোটেলের সামনে আসতে বলেন বাবু ও হায়দার। প্রলোভনে পড়া মাদরাসাশিক্ষক আওয়াল রিয়ালগুলো নেয়ার জন্য নিজের ব্যাংক হিসাব থেকে ৫ লাখ টাকা তুলে আসেন লোহাজ হোটেলের সামনে। আওয়াল ৫ লাখ টাকা বাবু ও হায়দারকে বুঝিয়ে দেন। তখন বাবু ও হায়দার আওয়ালের হাতে প্যাকেটভর্তি কথিত রিয়াল তুলে দেন।
তখন সেখানে একটি প্রাইভেট কার এসে থামে। প্রাইভেট কার থেকে নেমে তিনজন ব্যক্তি আওয়ালের কাছে আসেন এবং নিজেদের ডিবি পুলিশের পরিচ দেন। আওয়ালকে জোর করে প্রাইভেট কারে তুলে হ্যান্ডকাফ পরান কথিত ডিবি পুলিশের সদস্যরা। রিয়ালগুলো কার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন, কাগজপত্র কোথায় ইত্যাদি নানা কথা জানতে চায় ডিবি পরিচয় দেয়া তিন ব্যক্তি। আওয়ালকে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর কথা জানান তারা। আওয়ালকে অবৈধ ব্যবসায়ী হিসেবে গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরার হুমকি দেয়া হয়। তবে ১০ লাখ টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে বলেও জানানো হয়। তার ব্যাংক হিসাবে যত টাকা আছে, তা দেবেন বলে জানান আওয়াল। আওয়ালের ব্যাংক হিসাব থেকে আরও সাড়ে তিন লাখ টাকা তুলে নেয় কথিত ডিবি পুলিশের দল। মাদরাসাশিক্ষক আওয়ালের কাছে প্রথমে যিনি রিকশাচালকের পরিচয় দিয়ে রিয়াল ভাঙানোর ফাঁদ পেতেছিলেন, আসলে তিনি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্য। তার প্রকৃত নাম আনিছুর রহমান। আর হায়দার পরিচয় দেয়া কথিত পরিচ্ছনতাকর্মী হলেন প্রতারক চক্রের আরেক সদস্য শওকত। প্রকৃতপক্ষে পুলিশ সদস্য এএসআই শহীদ শেখ ও মাসুম শেখ আওয়ালের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের ডিসি মো. ওয়ালিদ হোসেন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে দুজন এএসআই এর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়। তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে আমরা অপরাধী হিসেবেই দেখি। পুলিশ সদস্য হওয়ার কারণে তাদের কিন্তু কোনো রকমের ছাড় দেয়া হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন