বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

গ্যাসের মূল্য ৬৫% বাড়লে জনজীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে

যাত্রী কল্যাণ সমিতি অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি গ্যাসের মূল্য অযৌক্তিকভাবে এক লাফে ৬৫% বাড়ানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে গণপরিবহন, পণ্যপরিবহন, শিল্প, আবাসিকসহ প্রতিটি সেক্টরে নৈরাজ্য দেখা দেবে। জনজীবনে ভয়াবহ দুর্ভোগ নেমে আসবে। মধ্যম আয়ের দেশে যাত্রার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। শিল্পখাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটি।
গতকাল বুধবার সকালে নগরীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারার প্রতিবাদে সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জনতার গণশুনানি’তে বক্তারা এই অভিযোগ করেন।
শুনানিতে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, পেট্রো বাংলার অধীন কোম্পানিগুলো ভুল তথ্য-উপাত্ত দিয়ে রাজস্ব ঘাটতি মেটানোর কথা বলে এক লাফে গ্যাসের দাম ৬৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ বাড়ানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে। অথচ ইতিমধ্যে বিইআরসি’র গণশুনানিতে উঠে এসেছে প্রতিটি কোম্পানি লাভজনক রয়েছে এবং এদের শত শত কোটি টাকার এফডিআর ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে। মাত্র বছরে ৮৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের টার্গেট নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের কাছে গ্যাসের মূল্য বাবদ অতিরিক্ত ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি আদায়ের মহোৎসবে নেমেছে বলেছে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
শুনানিতে বক্তারা বলেন, ১৯৯৩ সালে বহুজাতিক কোম্পানির গ্যাসের দামের ওপর সব ধরনের কর ও ভ্যাট অব্যাহতি দিলেও পেট্রোবাংলা গ্রাহকদের কাছ থেকে কর-ভ্যাট বাবদ অর্থ আদায় অব্যাহত রাখে। পরে এই টাকা সরকার মওকুফ করলেও গ্রাহকদের ফেরত দেয়নি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের গণপরিবহনগুলো তেল ও গ্যাসে চলাচল করলেও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেলে তেলে চালিত পরিবহনেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মহোৎসব শুরু হয়। ইতিমধ্যে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে সরকার ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ৩ টাকা কমালেও গণপরিবহনে কোনো ভাড়া কমেনি। অথচ এই কমানো মূল্যের প্রায় ৯৬৫ কোটি টাকা  পরিবহন মালিকদের পকেটে যাচ্ছে। অথচ মাত্র এক বছর পূর্বে জ্বালানি তেলের সঙ্গে সমন্বয়ের কথা বলে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হলেও তেলের মূল্য কমানোর পর গ্যাসের মূল্য কমানো উচিত ছিল বলে দাবি করে সংগঠনটি।
শুনানিতে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, সরকার দুর্নীতি ও ভুল নীতির কারণে বারবার গ্যাস বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে জনগণের নাভিশ্বাস তুলছে। অথচ এই খাতে সংস্কার আনা গেলে গ্যাস বিদ্যুতের মূল্য আরও কমানো সম্ভব। এই খাতে সরকার এক টাকা মূল্য বাড়ালে জনগণের খরচ বাড়ে নানা খাতে ১০ টাকা। গ্যাসের মূল্য বাড়লে গ্যাস যেহেতু জ্বালানি খাতের প্রাথমিক উৎস সেহেতু বিদ্যুতের মূল্য ও বেড়ে যাবে, পণ্য পরিবহন, গণপরিবহন, শিল্প, ব্যবসা বাণিজ্য সকল খাতে খরচ বেড়ে যাবে। তিনি অনতিবিলম্বে এই জনবিরোধী প্রস্তাব বাতিলের দাবি জানান।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ইতোমধ্যে বিইআরসির শুনানিতে নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন তাদের যুক্তি-তর্ক দিয়ে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে গ্যাসের মূল্য এক পয়সাও বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কয়েকগুণ খরচ বাড়িয়ে লুটপাটে যোগান দেয়ার জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটার আয়োজন চলছে।
সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বিইআরসি যদি জনমত ও যুক্তি উপেক্ষা করে গ্যাসের দাম বাড়ায় তবে পরদিন থেকে দেশ অচল করার কর্মসূচির জন্য দেশবাসীকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
জনতার গণশুনানিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন। এই সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার, বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন ওনার এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসিন পারভেজ, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা মাহমুদুল হাসান রাসেল, মনিরুল হক, সামসুদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন