শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কবর যিয়ারত করা ও মৃতদের জন্য দোয়া করা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

কবর যিয়ারত করা ও মৃতদের জন্য দোয়া করা সুন্নাতে নাবুবী (সা.)-এর অন্তর্ভুক্ত। এর ওপর মুসলিম উম্মাহর ইজমা বা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সুতরাং এর বিপরীত ধারণা পোষণ করা ঈমানদারের লক্ষণ নয়। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের দরবারে স্বীয় আম্মাজানের কবর যিয়ারত করার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। মহান আল্লাহপাক তাঁকে যিয়ারতের অনুমতি প্রদান করেন এবং তিনি স্বীয় আম্মাজানের কবর যিয়ারত করার উদ্দেশে তাঁর কবরস্থানে গমন করেছিলেন।

হযরত সুলাইমান ইবনে বুরাইদাহ (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমি আমার আম্মাজানের কবর যিয়ারত করার অনুমতি চাইলে আল্লাহপাক আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি কবরস্থানে গমন করলাম এবং আম্মাজানের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করার অনুমতি চাইলাম। আল্লাহপাক দোয়া করার অনুমতি প্রদান করেননি। (মুসনাদে আহমাদ)।

এ ঘটনার পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সা.) কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন। অনুমতি লাভ করার পর তিনি কবর যিয়ারত করার নির্দেশ প্রদান করেন। হযরত বুরাইদাহ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু এখন আমি বলছি তোমরা কবর যিয়ারত করো। (সহীহ মুসলিম)।

বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.) কবর যিয়ারতের তরীকাও মুসলমানদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। যাতে করে তারা সহীহ-শুদ্ধভাবে কবর যিয়ারত করতে পারে। হযরত বুরাইদাহ (রা.) হতে আরও বর্ণিত আছে তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদেরকে শিক্ষা দিতেন তারা যখন কবরস্থানে গমন করে তখন যেন এরূপ বলে : ‘আস্সালামু আলাইকুম ইয়া আহলাদ দিয়ারে অর্থাৎ হে কবরবাসী মুমিন মুসলিমগণ! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমরাও অচিরেই তোমাদের সাথে মিলিত হব। আমরা আল্লাহপাকের দরবারে আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য নিরাপত্তা ও মাগফেরাত কামনা করছি।’ (সহীহ মুসলিম)।

বস্তুত : প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত কোনো কবরস্থানের নিকট দিয়ে গমন করারকালে কবরবাসীদেরকে সালাম দেয়া এবং তাদের জন্য দোয়া করা। হযরত আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) মদীনার কিছু সংখ্যক কবরের পাশ দিয়ে গেলেন। কবরের পাশ দিয়ে যাবার সময় সেদিকে মুখ করে বললেন :‘আস্সালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর, অর্থাৎ হে কবরবাসীরা! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। মহান আল্লাহ পাক যেন আমাদেরকে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেদেন। তোমরা তো আমাদের পূর্বসূরী আর আমরা তোমাদের উত্তর সূরী।” (জামে তিরমিজী : ইমাম তিরমিজী বলেন, এটি হাসান (উত্তম) হাদীস)।

হাবীবে কিবরিয়া মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) অনেক সময় রাতের শেষাংশে বাকীউল গারকাদ (জান্নাতুল বাকীতে) গমন করতেন এবং কবরবাসীদের জন্য দোয়া করতেন। হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) যে রাতে আমার গৃহে কাটাতেন, শেষ রাতের দিকে উঠে মদীনার কবরস্থান জান্নাতুল বাকীতে চলে যেতেন। আর বলতেন : ‘আসসালামু আলাইকুম, হে কবরস্থানের অধিবাসী মুমিনগণ! তোমাদের ওপর সালাম বর্ষিত হোক। আর তোমাদের জন্য অর্জিত হোক ঐ সকল জিনিস যার প্রতিশ্রুতিকাল কিয়ামতের দিবসের জন্য তোমাদের সাথে করা হয়েছে ও একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ দেয়া হয়েছে। আর আমরা ও মহান আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় খুব তাড়াতাড়ি তোমাদের সাথে মিলিত হব। হে আল্লাহ! বাকীউল গারকাদের বাসিন্দাদেরকে ক্ষমা করেদিন। (সহীহ মুসলিম)।

উপরোক্ত আলোচনার নিরিখে জানা যায় যে, মুমিন-মুসলমান পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত করার বৈধতা সম্পর্কে কোনোই দ্বিমত নেই। তবে মহিলাদের ধৈর্য-সহিষ্ণুতা ও আত্মসম্ভরণের মাত্রা কম বিধায় রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের কবরযিয়ারত করাকে অপছন্দ করতেন। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) কবর যিয়ারতকারী মহিলাদেরকে ভর্ৎসনা করেছেন। (মোসনাদে আহমাদ)। এই ভর্ৎসনার কারণ হলো বেশিরভাগ মহিলা কবরস্থানে গমন করে আহাজারি, রোনাজারি, বিলাপ, চিৎকার শুরু করে দেয়। যা সুন্নাতে নাবুবীর খেলাপ। কিন্তু মহিলারা যদি ধৈর্য সহকারে পর্দা-পুশিদাসহ কবর যিয়ারত করতে চায়, তাহলে করতে পারে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু মাইছারাহ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর (রা.) মক্কার বাইরে ইন্তেকাল করেছিলেন। তাঁর শবদেহ মক্কা মোয়াজ্জমায় আনয়ন করা হয় এবং মক্কার কবরস্থান জান্নাতুল মোয়াল্লায় তাঁকে সমাহিত করা হয়। তারপর উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা (রা.) তাঁর কবর যিয়ারত করেন এবং তাঁর জন্য দোয়া-মোনাজাত করেন ও তাঁর শোক প্রকাশে কাসিদা পাঠ করেন। (আদ্ দুররাতুল লামিয়া)।

এই বর্ণনার আশোকে স্পষ্টতঃই অনুধাবন করা যায় যে, পাক-সাফ ও সংযতপন্থায় মহিলারাও করব যিয়ারত করতে পারেন। এতে দোষের কিছুই নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:০৯ এএম says : 0
কবর জিয়ারত করা সুন্নত। এটি হৃদয়কে বিগলিত করে। নয়নযুগলকে করে অশ্রুসিক্ত। স্মরণ করিয়ে দেয় মৃত্যু ও আখিরাতের কথা। ফলে এর দ্বারা অন্যায় থেকে তওবা এবং নেকির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হয় পরকালীন মুক্তির প্রেরণা।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
কবরস্থানে গেলে প্রথমে কবর জিয়ারতের দোয়া পড়বে। এরপর কবরবাসীর ইসালে সওয়াবের নিয়তে কিছু দরুদ শরিফ, সুরা ইত্যাদি পড়ে মাইয়্যেতের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবে।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
কবরবাসীর কাছে কিছু কামনা করা, সালাত আদায় করা বা সিজদা করা, তার অসিলায় মুক্তি প্রার্থনা করা, সেখানে দান-সদকা ও মানত করা, গরু-ছাগল, মোরগ ইত্যাদি দেওয়া বা কোরবানি করা ইত্যাদি শিরকেরই অন্তর্ভুক্ত। তাই কোনো কবর ঘিরে এমনটি করা ঠিক নয়।
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) মহিলা কবর জিয়ারতকারী, তার ওপর মসজিদ নির্মাণকারী ও তাতে বাতি প্রজ্বালনকারীদের অভিশাপ দিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩২৩৬)
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
মৃত ব্যক্তির জন্য কুরআন-হাদীসে বর্ণিত দুয়া সমূহ পাঠ করার পাশাপাশি নিজের ভাষায় যতখুশি দুআ করতে হবে। পিতামতার জন্য সন্তানের দুয়া সবচেয়ে বেশি কার্যকর ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
Shabnam Mustari Labonno ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
আসসালামু আলাইকুম,,কবরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কিভাবে সালাম দিতে হয়?
Total Reply(0)
Nayeem Hussen ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫৩ এএম says : 0
জেনে খুব ই ভালো লাগলো। মহিলাদের কবর জিয়ারতের বিষয়টি অস্পষ্ট ছিল। আলহামদুলিল্লাহ্ আপনার মাধ্যমে আজকে জানলাম। জাজাকাল্লাহু খায়রান।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন