ভূমির টেকসহিত্ব: ভূমি মানুষের জীবিকা অর্জন ও উৎপাদনের একটি অপরিহার্য মাধ্যম। ইসলাম ও ভূমির মালিকানা ও ব্যবহারের বিস্তারিত নীতিমালা উপস্থাপন করেছে। যার মধ্যে পতিত জমি আবাদ করা, জমিতে পানি সেচ ইত্যাদি বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদে ব্যবহার যথার্থ করার জন এতে সরকারের নিয়ন্ত্রন এবং এর এক পঞ্চমাংশ সরকারী কোষাগারে জমার বিধান রাখা হয়েছে। একই ভাবে ভূমিতে মানুষের ব্যক্তি মালিকানার স্বীকৃতি দেয়া হলে ও তা থেকে উৎপাদিত ফসলের নির্দিষ্ট অংশ নির্ধারিত খাতে ব্যয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শান্তি নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ঃ টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, সবার ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করা এবং সর্বস্তরে কার্যকর জবাবদিহিতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য জাতিসংঘের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার ও গুরুত্বরোপ করেছে। সমাজে সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব, ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলাম প্রথমত মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন করার কর্মসূচি গ্রহণ করে। দ্বিতীয়ত আইনের শাসন প্রয়োগ করে তা বাস্তবায়নে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহন করে, যাতে শান্তি, নিরপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি শ্লোগান সর্বস্ব না হয়ে অর্থবহ এবং বাস্তব হয়ে ওঠে। ইসলাম ন্যায়বিচারকে উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে গণ্য করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচার কার্য পরিচালনা করো, তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা কত উৎকৃষ্ট আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বশ্রেষ্টা। ইসলাম ন্যায় বিচার সদাচার ও প্রয়োজনীয় বিধান প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়েছে মানুষকে। এ দায়িত্ব পালন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বিচার ব্যবস্থায় সর্বোতভাবে সুবিচার প্রতিষ্ঠার উপর বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন তিনি বলেন: এরপর যদি দলটি (আল্লাহর হুকমের দিকে) ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়পরায়ণতার সাথে ফয়সালা করবে এবং সুবিচার করবে। আল্লাহ নিশ্চয়ই সুবিচারকারীদের ভালবাসেন।
ইসলামের ন্যায় বিচারের ধারণা এমন যে ন্যায় বিচারের স্বার্থে পিতামাত, আত্মীয় স্বজন এমনকি নিজের বিরুদ্ধে ও সত্যের সাক্ষ্য দেয়া অপরিহার্য। মহান আল্লাহ বলেন: হে ঈমানদারগণ! তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক। আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্য দান কর, যদি ও তা তোমাদের নিজেদের বা পিতামাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয় স্বজনের বিপক্ষে হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়া, তবে আল্লাহ তাদে শুভাকাক্সক্ষী তোমাদের চেয়ে বেশি। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ সম্পর্কে অবগত।
সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ইসলাম নির্দেশনা দিয়েছে এবং রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হিসেবে ঘোষণা করেছে। অশান্তি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। ইসলাম এমন প্রগতিশীল ব্যবস্থা, যা মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে যা কিছু ভালো তার সবই গ্রহন করে এবং মানবতার জন্য যা কিছু খারাপ ও ক্ষতিকর তার সবই এড়িয়ে যায়। সামাজিক শান্তি নিশ্চিত করার জন্যে ইসলাম সকল বিশৃঙ্খলা মূলক কাজ নিষিদ্ধ করেছে। অন্যায়ভাবে যারা মানুষকে খুন করে তাদেরকে আইনগত ভাবে হত্যা করার বিধান দেওয়া হয়েছে। এমনকি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকে হত্যার চেয়েও জঘন্য হিসেবে ইসলাম অভিহিত করেছে। আল্লাহর বিধান দ্বারা উদ্দীপ্ত ইসলামী জীবন ব্যবস্থা ও রাষ্ট্র পুরোপুরি টেকসই ও কল্যাণকর।
বৈষম্য দূরীকরণ ঃ দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তদেশীয় বৈষম্য হ্রাস করা, বিশেষ করে দ্রুত ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নতরি সুফল ভোগের জন্য জাতিসংঘ দরিদ্রদের সহায়তা প্রদানে গুরুত্বরোপ করেছে। ইসলাম বিশ্বের সব বর্ণ, গোত্র ও জাতিগত বৈষম্য দূরীভূত করে।
ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় ধনী, গরিব, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, সাদা, কালো, মুসলিম, অমুসলিম ইত্যাকার কোন পার্থক্য করা হয় না। আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে সকল মানুষকে সমঅধিকার সম্পন্ন মনে করা হয়। টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈষম্য দূরীকরনের ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি নিম্নরুপ:
লিঙ্গ সমতা: ইসলাম চায় এমন একটি সমাজ তৈরি করতে, যেখানে নারী ও পুরুষের সমান সুযোগ থাকবে এবং সমতা ভিত্তিতে সকলে মৌলিক অধিকার ভোগ করবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: মুমিন পুরুষ বা নারী যে কেউ সৎকর্ম করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণু পরিমাণ ও জুলুম করা হবে না।
বর্ণ বৈষম্য দূরীকরণ: ইসলামে বর্ণ বৈষম্য ও বংশের শ্রেষ্ঠত্ব বলতে কিছু নেই। কুরআন মাজীদে মানুষকে একজাতি হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। “আল্লাহর বাণী- হে মানব জাতি আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি, এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরের পরিচিত হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক সমভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার।
নিশ্চয়ই আল্লাহ সবজ্ঞ। সব কিছুর খবর রাখেন। মানুষের মধ্যে দেশ, কাল, বর্ণ, ভাষা ও গোত্রের পার্থক্য দূর করে মহানবী স. বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। যেখানে বৈষম্যের লেশও খুঁজে পাওয়া যায় না। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: শুধুমাত্রা তাকওয়ার ভিত্তিতে ছাড়া অনারবগণের উপর আরবগণের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, আরবগণের উপরও অনারবগণের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, একইভাবে লালের উপর কালোর ও কালোর উপর লালের ও কোন মর্যাদা নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন