শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

আল্লাহর ভয়ই পারে মানুষকে নিরাপদে রাখতে

মুফতি মুহাম্মাদ আকতার আল-হুসাইন | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:১০ এএম

একজন মুসলিম হিসেবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম ও রাসূলুল্লাহ (সা.) এর তরীকা মেনে চলাটা হলো পূর্ণাঙ্গ ইবাদত। আর এটা তখন সম্ভব হবে যখন কারো অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভয় থাকবে। কারণ ভয় না থাকলে মানুষ কোন হুকুম পালন করতে চায় না।
চলমান সময়ে করোনা নামে ভাইরাস কিছুটা হলেও এটা শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। মানুষ ভয়ে আজ কতটা আতঙ্কিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এই করোনার চাইতে যে সবচেয়ে বেশি যাকে ভয় করতে হবে, যার শাস্তিকে বেশি ভয় করতে হবে, তিনি হলেন আমাদের একমাত্র মালিক রাব্বুল আলামীন। কারো অন্তরে যদি তাঁর প্রতি প্রকৃত ভয় চলে আসে তাহলে সে দুনিয়া আখেরাতে অনেক লাভবান হয়ে যাবে। তাই আজ আমরা সে বিষয়ে কুরআন হাদিসের আলোকে সংক্ষেপে জানব ইনশা আল্লাহ। আল্লাহকে ভয় করার মত করতে হবে। একজন মানুষ প্রকৃত মুসলিম হতে হলে আল্লাহকে ভয় করার মত করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয়। আর তোমরা মুসলমান হওয়া ছাড়া মারা যেও না’ (সুরা আল-ইমরান, আয়াত-১০২)। আল্লাহকে ভয়কারী অধিক মর্যাদাসম্পন্ন। প্রত্যেক নর ও নারীকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। এবং তাদেরকে একে অপরের উপর মর্যাদা দিয়েছেন।
কিন্তু যে তাঁকে বেশি ভয় করবে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন হবে। ইরশাদ হচ্ছে- ‘হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত’ (সুরা হুজরাত, আয়াত-১৩)। হাদিস শরীফে এসেছে- হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করা হলো হে আল্লাহর রাসূল সা! মানুষের মধ্যে উত্তম কে? তিনি বললেন- সেই উত্তম যে আল্লাহকে বেশি ভয় করে” (বুখারী ও মুসলিম)। ধারণার বাহিরে রিযিক পেতে হলে আল্লাহর ভয়ের প্রয়োজন। আল্লাহ হলেন সমস্ত মাখলুকের রিযিক দাতা। এমন কোন সৃষ্টি নেই যাকে আল্লাহ রিযিক দেন না। আর কোন মানুষ যদি আল্লাহকে ভয় করে তাহলে সে নিজেও জানতে পারবে না কোথায় থেকে আল্লাহ তাকে রিযিক দান করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে- ‘এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন : (সূরা তালাক, আয়াত-৩)।
হাদিস শরীফের মধ্যে এসেছে- হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- তোমরা যদি প্রকৃতভাবেই আল্লাহ্ তায়ালার উপর নির্ভরশীল হতে তাহলে পাখিদের যেভাবে রিযিক দেয়া হয় সেভাবে তোমাদেরকেও রিযিক দেয়া হতো। এরা সকালবেলা খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যা বেলায় ভরা পেটে ফিরে আসে” (তিরমিয়ী ও ইবনে মাজাহ)। সঠিক কথা বলা ও সঠিক আমলের জন্য আল্লাহর ভয় থাকা প্রয়োজন। হক কথা বলা ঈমানের একটি অন্যতম দাবী। আর সঠিক আমল না করতে পারলে সারা জীবন ইবাদত করেও জান্নাত নসিব হবে না। আর এ দুটি বিষয় তখন আপনি করতে পারবেন যখন আপনার অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভয় থাকবে। ইরশাদ হচ্ছে- ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল’ (সুরা আহযাব, আয়াত-৭০)। আরো ইরশাদ হচ্ছে- ‘ তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন।
আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল’ (সুরা আহযাব, আয়াত-৭১)। আল্লাহর ভয় থাকলে যেকোনো কাজ সহজ হয়ে যায়। মানুষের জীবনে কত ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু এই সময় যদি আল্লাহর ভয় থাকে তার অন্তরে তাহলে কঠিন কাজটিও সহজ হয়ে যায়। ইরশাদ হচ্ছে- ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন। (সূরা তালাক, আয়াত-৪)। আল্লাহর ভয় থাকলে হক বাতিলের পার্থক্য করা সম্ভব হবে। মানুষকে আল্লাহ অনেক জ্ঞান দিয়েছেন তাই সে ভালো মন্দ বিচার করতে পারে। কিন্তু এটার জন্য সবচেয়ে জরুরী হলো আল্লাহর প্রতি ভয় থাকা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘হে মুমিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদের জন্য ফুরকান প্রদান করবেন, তোমাদের থেকে তোমাদের পাপসমূহ দূর করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল’ (সুরা আনফাল, আয়াত-২৯)। তিনি তোমাদের মধ্যে আন্তরিক দৃঢ়তা, বিচক্ষণ ক্ষমতা ও সুন্দর হিদায়াত সৃষ্টি করে দেবেন যার মাধ্যমে তোমরা হক ও বাতিলের পার্থক্য করতে পারবে। (যুবদাতুত-তাফসীর)।
আল্লাহর ভয় থাকলে কিয়ামতের কথা চিন্তা করা যায়। এই জগতের সব কিছু একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে।
এটাই চিরন্তন সত্য। এবং একদিন কিয়ামত সংগঠিত হবে। যেখান মানুষ তাঁর প্রতিটি আমলের হিসাব দিতে হবে। আর দুনিয়ার জমিনে যদি কারো অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকে তাহলে সে কিয়ামতের জবাবদিহির কথা চিন্তা করবে। এবং সে দিনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আর প্রত্যেকের উচিত চিন্তা করে দেখা সে আগামীকালের জন্য কি প্রেরণ করেছে; তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত’ (সুরা হাশর, আয়াত-১৮)। ক্ষমা ও বড় প্রতিদান পাবে। আমরা যেহেতু আল্লাহকে না দেখে তাঁর উপরে ঈমান এনেছি। তাঁকে ভয় করে তাঁর হুকুম আহকাম পালন করছি। তাই কিয়ামতের ময়দানে তিনি আমাদের ক্ষমা করে বড় প্রতিদান দিবেন। ইরশাদ হচ্ছে- ‘ নিশ্চয় যারা তাদের রবকে না দেখেই ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও বড় প্রতিদান। (সূরা মুলক, আয়াত-১২)। আল্লাহ নিজেই ভয় কারীদের সাথে থাকেন।
শয়তান মানুষের চিরশত্রু। সে সব সময় মানুষকে দিয়ে গুনাহের কাজ করাতে চায়। কিন্তু এই সময় যদি বান্দার অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকে তাহলে আল্লাহ নিজেই বান্দাকে সাহায্য করেন গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে। পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ হচ্ছে- ‘ নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সাথে, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মশীল’ (সূরা নহল ১২৮)। আল্লাহর প্রতি ভয় থাকলে সত্যবাদীদের সঙ্গী হওয়া যায়। মানুষ অনেক সময় সত্যি মিথ্যা নির্ণয় করতে বা পক্ষ নিতে সিদ্ধান্ত হীনতায় পড়ে যায়। কিন্তু তখন যদি তাঁর অন্তরে আল্লাহকে দিয়ে ভয় থাকে তাহলে সে সত্যের পক্ষে থাকতে পারবে। ইরশাদ হচ্ছে- ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (সুরা তওবা, আয়াত-১১৯)। আল্লাহকে ভয়কারীরাই কৃতকর্য।
প্রত্যেক মানুষ চায় জীবনে সফলতা অর্জন করতে। কিন্তু এই সফলতা অর্জন করতে হলে আল্লাহ ও রাসুল (সা.) এর আনুগত্য করতে হবে। এবং আল্লাহর ভয় অন্তরে থাকতে হবে তখন জীবনে সফলতা অর্জন করা সম্ভব হবে। ইরশাদ হচ্ছে- আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই কৃতকার্য। (সূরা নূর, আয়াত-৫২)। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে- ‘এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও। (সূরা বাকারাহ, আয়াত-১৮৯)। আরো ইরশাদ হচ্ছে- ‘অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শ্রবণ কর, আনুগত্য কর এবং তোমাদের নিজদের কল্যাণে ব্যয় কর, আর যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়, তারাই মূলত সফলকাম। (সূরা তাগাবুন, আয়াত-১৬)।
সর্বোপরি ভয় করার দুটি কারণ: ১.শাস্তির ভয়। কারও অনিষ্ট বা শাস্তি হতে বাঁচার জন্য ভয় সৃষ্টি হয়। তাকে যদি ভয় না করা হয় তাহলে তার ক্ষমতা আছে শাস্তি দেওয়ার, তাই তার শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য তাকে ভয় করা। ২.মহব্বতের ভয়। কারও প্রতি মহব্বত হলেও তাকে ভয় করতে হয়, যাতে এ মহব্বত সর্বদা থাকে। কোনো সময় তার মহব্বতের রশি যাতে কেটে না যায় সেজন্য ভয় করা। অর্থাৎ বিচ্ছেদের আশঙ্কায় ভয় করা।
আল্লাহকে যে ভয় করা হয় তাও এ দুই কারণে। প্রথমত- আল্লাহর ক্ষমতা আছে কাউকে জাহান্নামে দেওয়ার, তাই বান্দা সর্বদা আল্লাহকে ভয় করে জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য। দ্বিতীয়ত- বান্দা আল্লাহকে প্রথম মহব্বত করে এরপর ভয় করতে থাকে, যাতে তার মহব্বত দূর না হয়ে অব্যাহত থাকে। দুটির মাঝে আসল হলো মহব্বতের ভয় করা। জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য তাকে সবাই ভয় করে। কিন্তু মহব্বতের রশি ঠিক রাখার জন্য ভয় করে এমন লোক অতি অল্প।
রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহকে তাঁর জীবনে সর্বাস্থায় ভয় করতেন, তা ছিল মহব্বতের ভয়। কেননা দুনিয়াতেই বলা হয়েছে যে, জাহান্নাম তাঁর জন্য হারাম। আল্লাহ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে বান্দাদের মাঝে আলেমরাই আল্লাহকে ভয় করে’। এখানেও দ্বিতীয় প্রকারের ভয় তথা মহব্বতের ভয়ের কথাই বলা হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সবার অন্তরে তাঁহার প্রকৃত ভয় অনুভূত করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Abdur Rahman ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:২৬ এএম says : 0
Right
Total Reply(0)
মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:২৬ এএম says : 0
Amin
Total Reply(0)
মেহেদী ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:২৯ এএম says : 0
শতভাগ সত্য কথা।
Total Reply(0)
জাবের পিনটু ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:২৯ এএম says : 0
আল্লাহু সুবহানাহু তায়ালা আমাদের হেফাজত করুন।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:২৯ এএম says : 0
আল্লাহর ভয়ই মানুষকে যাবতীয় পাপ থেকে বিরত রাখে।
Total Reply(0)
মোঃ মাসুদ রানা ৫ জানুয়ারি, ২০২১, ১০:৪৪ এএম says : 0
হে আল্লাহ আমাদের অন্তরে তোমার ভয় ঢুকিয়ে দাও।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন