শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইংরেজি নববর্ষ সংখ্যা

নতুন বছরে একান্ত প্রত্যাশা

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:১০ এএম

নতুন সূর্য উদিত হলো সোনালি প্রত্যাশা নিয়ে। বিশ্ব কাঁপানো ভয়ংকর মহামারি করোনার বিষময় ২০২০ বিদায় নিলো। রেখে গেল বড়ই বেদনা-দুঃখগাঁথা। শুরো হলো নতুন বছর ২০২১। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই সাড়ম্বরে খ্রিস্টীয় নববর্ষ উৎসব হয়। অফিস-আদালতের কাজকর্ম, হিসাব-নিকাশ, যাবতীয় কর্মকান্ডের সুবিধায় বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদেরও খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডারের হিসাবেই চলতে হয়। যদিও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভ‚মি বাংলাদেশে নববর্ষ আসে পহেলা বৈশাখ। পহলা বৈশাখে গ্রামে গ্রামে বৈশাখী মেলা, পালাগান, পুঁথিপাঠ এখনো কম হয় না। তাছাড়া গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত অনাড়ম্বরে হলেও উদযাপিত হয়। বাংলা নববর্ষের গুরুত্ব সম্পূর্ণই আলাদা, ব্যতিক্রম। ইংরেজি নববর্ষ উৎসব হয় পহেলা জানুয়ারিতে। বাংলা নববর্ষ হোক আর ইংরেজি নববর্ষ হোক মানুষ আপনমনে ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় অতীত স্মৃতি ও আগামীদিনের সুন্দর পরিকল্পনা হাতড়ায়।
বলতে দ্বিধা নেই, ২০২০ বহুদিন মানুষ স্মরণ রাখবে করোনার কারণে। করোনা এত বড় একটা ধাক্কা দিয়ে গেল বাংলাদেশসহ বিশ্বকে, যা ঘুরে ফিরেই আলোচনায় উঠে আসবে বহুদিন, বহুকাল। যাহোক বেদনার সাথে আনন্দের মিশ্রণও থাকে। ভালো-মন্দ নিয়েই আমাদের পথচলা। হতাশ হলে চলবে না। পুরাতনকে পেছনে ফেলে ঝেড়ে-মুছে নতুন ভোর, নতুন সূর্য ও নতুন আলোর প্রত্যাশা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। নতুন বছরের ভোর আলোয় উজ্জ্বল হবে, সকলক্ষেত্রে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, সামাজিক বন্ধন হবে অটুট, এসবই একান্ত প্রত্যাশা। আমজনতার প্রত্যাশা পূরণের স্বার্থে দেশ ও জাতির উন্নয়ন হোক, কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যন্ত রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের মধ্যে সহনশীলতা, সহমর্মিতা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, শিষ্টাচার ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের অনুপস্থিতি যেন না থাকে, এটাই কাম্য। সবক্ষেত্রেই সহনশীলতার বড় অভাববোধ হচ্ছে। এটি মোটেও ভালো লক্ষণ নয়।
দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বলতে হয়, পদ্মাসেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ক্ষেত্র তৈরি করেছে। বিভিন্ন উন্নয়নের ক্ষেত্রেও দেশ অনেকদূর এগিয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়ছে সামাজিক ক্ষেত্রে, এখানে অবক্ষয় বিপর্যয়কর। খুন, ধর্ষণ, হানাহানি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও মাদকের ব্যবহার কোনভাবেই শূন্যের কোঠায় আনা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ ঝামেলামুক্ত জীবন চায়, চায় স্বস্তি ও শান্তিতে বসবাস করতে। মাদক আজকে যুব সমাজকে গ্রাস করছে। মাদকের জন্য লোমহর্ষক ঘটনা অতীতে ঘটেছে, এখনো ঘটছেই একের পর এক।
প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্যের ভয়াল থাবা আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংস করছে। এটি নীরব মারণাস্ত্র হিসেবে চিহ্নিত। অপরাধ কর্মকান্ড বৃদ্ধির অন্যতম কারণ এসব মাদকদ্রব্য। এসব বিষয় খুবই উদ্বেগের। আগামীতে মাদক, অপরাধ ও সন্ত্রাস শূন্যের কোঠায় নামবে, সব সম্ভাবনা কাজে লাগানো হবে, এই প্রত্যাশাও সবার।
কৃষির ক্ষেত্রে বিরাট উন্নয়ন হয়েছে, এটি ধরে রাখার জন্য কৃষকদের সমস্যার সমাধান বিশেষ করে কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা দরকার সর্বাগ্রে। কর্মবীর কৃষকরা আমাদের ১৭ কোটি মানুষের আহার যোগান দিচ্ছেন। অথচ তারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মানসিক কষ্ট তাদের অনেক। কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তবুও প্রত্যাশা, কৃষকদের সমস্যার সমাধান হবে, রোদ-বৃষ্টির মাঝে দিনরাত পরিশ্রম করে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য পাবেন কৃষকরা, সেই ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠুক। আর একটি বিষয়, বহুদিন থেকেই গ্রামাঞ্চলের পীড়াদায়ক বিষয়, এনজিওদের ঋণের জালে আটকেপড়া কৃষকদের বের করে আনা দরকার। তাছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীদের লাগাম টেনে ধরার জোরদার কোনো ব্যবস্থাপনা দেখা যাচ্ছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধের ব্যবস্থাও একেবারেই ঢিলেঢালা।
প্রত্যাশা করলেই যে নতুন বছরে সব সমস্যার সমাধান হবে, তা নয়। তবুও স্মরণ করিয়ে দেওয়া। আজকে দেশের সার্বিক জলবায়ুর অবস্থার কথা ভাবলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে অশনি সংকেত। নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদী ও জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। মাটিরতলার পানি সম্পদ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। বৃহত্তম সেচ প্রকল্প বরেন্দ্র, তিস্তা ও জিকে মারাত্মক হুমকির মুখে। ভূপৃষ্ঠের পানি সংকটে ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ পড়ছে। ভারত গঙ্গা, তিস্তা, গোমতি, ধলেশ্বর, ইছামতি, কোদলা ও বেতাইসহ প্রায় সব ক’টি অভিন্ন নদ-নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে বহুদিন ধরে। নদ-নদীর অসংখ্য শাখা-প্রশাখার উৎস অভিন্ন নদ-নদী। এতে ভাটি অঞ্চলের দেশ বাংলাদেশের জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। নদ-নদীতে মাইলের পর মাইল চর জেগেছে। পদ্মার শাখা নদ-নদীর অবস্থা খুবই করুণ। উর্বর জনপদ হুমকির মুখোমুখি। সবুজ ঘেরা প্রান্তর হচ্ছে বিবর্ণ।
পানি বিশেষজ্ঞগণের বক্তব্য, ভারতের অভিন্ন নদ-নদীর পানি প্রতিবন্ধকতায় গড় উঞ্চতা উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পেয়ে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর ও পূর্বাঞ্চল এবং মধ্যভাগসহ গোটা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যে নেমে আসছে জলবায়ু ও ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তনের ভয়াবহ বিপদ। পানি প্রতিবন্ধকতার সাথে কার্বন নিঃসরণে দ্রুত বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া। ঘটছে ঋতুর পরিবর্তন। গড়পড়তা তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণে পরিবেশবিদগণ উদ্বিগ্ন। তাদের কথা, মারমুখী ও বিপজ্জনক হচ্ছে পরিবেশ। এতে, কৃষি, মৎস্যসম্পদ, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে।
দেশ ও জাতি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও আমজনতার প্রত্যাশা পূরণের স্বার্থে রাজনৈতিক সহমর্মিতা ও স্থিতিশীলতার বিকল্প নেই। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রে বিরাট সম্ভাবনার দেশটিকে আরো কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সরকারের নীতিনির্ধারকগণ বিশেষ দৃষ্টি দেবেন এই প্রত্যাশাও সব মানুষের। প্রত্যাশার তো শেষ নেই। নতুন বছরে আরো একটি প্রত্যাশা, এবার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মাসেতু নির্মাণের পরিকল্পনা যেন হয়। সারাদেশের সম্ভাবনাময় দিকগুলো চিহ্নিত করে বাস্তবভিত্তিক আরো উদ্যোগ নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন