বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

’২০ জুড়েই বিএনপির ব্যর্থতা

আন্দোলনে নয়, সরকারের নির্দেশে খালেদা জিয়ার মুক্তি : রাজপথ থেকে ভার্চুয়ালে সক্রিয় : হতাশ আন্দোলনমুখী নেতারা

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৯ এএম

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করা, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার ঘোষণা ছিল বিএনপি। রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে এসব দাবির পাশাপাশি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন আদায়ের কথা বলেছিল দলটির নেতারা। তবে বিগত কয়েক বছরের মতো বিদায়ী ২০২০ সালটিও ব্যর্থায় কেটেছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দলের। আইনি লড়াই কিংবা আন্দোলনে কোনটিতেই দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারেনি দলটি। পরিবারের তৎপরতায় সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি পেয়েছেন তিনি। তার মুক্তি কিংবা নির্বাচনে কারচুপি, দ্রব্যমূল্যে উর্ধ্বোগতি, দেশব্যাপী ধর্ষণের উৎসব, করোনায় চিকিৎসা সেবা, স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি অথবা জনস্বার্থের কোন ইস্যু নিয়েই রাজপথে সোচ্চার হতে দেখা যায়নি বিএনপিকে। বরং মহামারী করোনার অজুহাতে সেই মার্চ থেকে দলটি ‘কোয়ারেন্টাইনে’ ঢুকে পড়েছে। রাজপথের পরিবর্তে এখন ঘরে বসেই ভার্চুয়াল আলোচনা সারছেন নেতাকর্মীরা।


অন্যদিকে ২০১৯ সাল থেকে শুরু হওয়া দলপুনর্গঠনের কাজ বিগত বছরেও অব্যাহত রাখে বিএনপি। কিন্তু বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে কমিটি বাণিজ্য, ত্যাগীদের বাদ দিয়ে নেতাদের নিজের লোক দিয়ে কমিটি গঠনের কারণে সফলতা পাচ্ছে না পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। এছাড়া সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদের বিভিন্ন উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ সবগুলো নির্বাচনেই ভরাডুবি ঘটেছে একাধিকবার রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিচালনাকারী দলটির। প্রতিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের কাছে পরাজয়, রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণে ব্যর্থ হলেও মনোনয়ন ইস্যুতে চাঙ্গা ছিল বিএনপির নেতাকর্মীরা। ঢাকার দুটি আসনের উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে গুলশানে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষেও লিপ্ত হয় তারা। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিএনপি মহাসচিবের বাড়িতে ডিম নিক্ষেপ ও হামলার ঘটনাও ঘটেছে। আর বছরের শেষ ভাগে ছাত্রদলের কমিটি বাণিজ্য ও বিএনপির সিনিয়র দুই নেতার শোকজ ছিল আলোড়নকারী ঘটনা।

 

তবে বন্যা ও করোনার মধ্যে সঙ্কটে পড়া মানুষের সহায়তায় দলটির তৎপরতা ছিল প্রশংসনীয়। সারাদেশের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে খাদ্য, সুরক্ষা সামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী পৌঁছে দেন।

এ বছরেও কাউন্সিল করতে পারেনি বিএনপি। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলটি। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে সংগঠন পুনর্গঠন শেষে কাউন্সিল করার কথা বলা হলেও করোনা মহামারিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি। এই কার্যক্রম কবে সম্পন্ন হবে দায়িত্বশীল কোনো নেতাই তা বলতে পারছেন না। ফলে কাউন্সিল কবে হবে তা অনিশ্চিত। তবে দলের স্থায়ী কমিটিসহ কয়েকটি শূন্যপদে নতুন করে কয়েকজনকে পদায়ন করা হয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিকভাবে নিষ্ক্রিয় কয়েকজনকে বাদ দিয়ে সেখানেও পদায়ন করা হয়েছে অন্যদের।
সকল নির্বাচনে ভরাডুবি: বছরের শুরুতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয় দলটির তরুণ দুই নেতা তাবিথ আউয়াল ও ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। এই নির্বাচনকে নির্বাচন কমিশনের জন্য এসিড টেস্ট হিসেবে উল্লেখ করেছিলন বিএনপি নেতারা। তবে নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটে বিএনপি প্রার্থীদের। নির্বাচনে কারচুপি, ভোট ডাকাতিসহ প্রচলিত অভিযোগগুলো তুলে ধরে দলটি। পরবর্তীতে জাতীয় সংসদের যত উপ-নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলটি অংশ নিয়েছে সবক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছে বিএনপি প্রার্থীরা। তবে প্রতিটি নির্বাচনের পর একই অভিযোগ এনে নির্বাচনের ফলাফল বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। পরবর্তী নির্বাচনে আবারও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দোহায় দিয়ে অংশ নেয় দলটির প্রার্থীরা।

খালেদা জিয়ার মুক্তি: বিদায়ী বছরে বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য সবচেয়ে সুখকর সংবাদটি ছিল দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। তবে দলটির নেতাকর্মীদের আন্দোলনে কিংবা সরকারকে বাধ্য করে বেগম জিয়ার মুক্তি হয়নি। পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে এবং সরকারের নির্বাহী আদেশে তিনি কারামুক্ত হন। এখন তিনি মুক্ত অবস্থায় গুলশানে নিজের বাসায় অবস্থান করলেও শর্ত থাকায় রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না। যদিও নেতাকর্মীরা এটিকে কারাবন্দির পরিবর্তে গৃহবন্দী হিসেবেই মনে করছে। কিন্তু এই বন্দীত্ব থেকে বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে তাদের কোন কর্মসূচি নেই। ধমকে গেছে তাঁর মুক্তি আন্দোলনও।

মনোনয়ন নিয়ে সংঘর্ষ: সেপ্টেম্বরে ঢাকার দুটি উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে গুলশানে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হন মনোনয়ন প্রাত্যাশীরা। দলের সিনিয়র নেতাদের সামনেই এই সংঘর্ষে দলটির বেশ কয়েকজন নেতা আহত হন। এতে দলের হাইকমান্ড অসন্তুষ্ট হয়ে দোষীদের শোকজও করে। পরবর্তীতে মনোনয়ন ঘোষণা করার পর বিএনপি মহাসচিবের বাসায় ডিম নিক্ষেপ ও হামলার ঘটনা ঘটে।

রাজপথ থেকে ভার্চুয়ালে: বছরের শুরুতে রাজপথে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা, সভা-সমাবেশ করলেও মার্চে করোনার প্রভাব শুরু হলে রাজনৈতিক সকল কর্মসূচি স্থগিত করে দেয় বিএনপি। উন্মুক্ত কর্মসূচির পরিবর্তে ঘরে ভার্চুয়াল সভা-আলোচনা চালু রাকে। তবে বছরের শেষ পর্যন্ত এই ভাইরাসের অজুহাতে আর ঘর থেকে আর বের হয়নি দলটি।

কমিটি নিয়ে অসন্তোষ: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপিসহ সকল অঙ্গসংগঠনের কমিটি পুনর্গঠনের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করার ঘোষণা দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু কমিটি গঠনে নিজস্ব লোককে পদে বসানো, টাকার বিনিময়ে পদ বিক্রি, বছরের পর বছর কমিটি গঠন না করে পদ আকড়ে ধরে থাকায় সফল হয়নি এই উদ্যোগ। কমিটি ঘোষণার পরপরই বিভিন্ন এলাকায় প্রতিক্রিয়া দেখায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা। যুবদল কমিটি ঘোষণার পর স্থগিত করতে বাধ্য হয়। আর ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে অনিয়ম ছিল আলোচিত ইস্যু।

পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে বিদায়ী বছরে কৃষক দল-মৎস্যজীবী দল-তাঁতী দল-ওলামা দলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দিয়ে আহŸায়ক কমিটি গঠন করে বিএনপি। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি। ১১টি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের মধ্যে ছাত্রদল ছাড়া বাকি সংগঠনগুলোর কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। মেয়াদ শেষে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল দলীয় ফোরামে পূর্ণাঙ্গ খসড়া কমিটি জমা দিলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি সংগঠন দুটি। মূল দলের তৃণমূল পুনর্গঠন প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়নি। সারাদেশে বিএনপির ৮১টি সাংগঠনিক ইউনিটের মধ্যে ৫২টির কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ।

হাফিজ-শওকত শোকজে উত্তাপ : দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাÐের অভিযোগ এনে ১৪ ডিসেম্বর দলের দুই ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদকে শোকজ করার ঘটনায় বিএনপির ভেতর বড় আকারে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ছড়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের একদিকে ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে, অন্যদিকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। এসব নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা সংগঠনকে শক্তিশালী করতে তৃণমূলসহ সব পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজ করেছি। এখনও সেই প্রক্রিয়া চলমান। আমরা মনে করি, বিএনপি অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সাংগঠনিকভাবে বেশি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ।

তবে বিদায়ী বছরে বিএনপির কোনো সফলতা দেখছেন না দলটির রাজনীতির পরামর্শক ও সমালোচক গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি দৈনিক করতোয়াকে বলেন, একজন নাগরিক হিসেবে আমি দেশে গণতন্ত্র চাই, রাজনীতি দেখতে চাই। কিন্তু জনগণের দল হিসেবে বিএনপি দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছে। বিদায়ী বছরে তাদের কোনো সফলতা নেই। ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে নতুন বছরে তাদেরকে কাউন্সিল করতে হবে। তরুণদের নেতৃত্বে আনতে হবে। এছাড়া অঙ্গসংগঠনের সকল কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠন করতে হবে। এতে যোগ্য, ত্যাগী নেতারা সংগঠনে আসবে। এর ফলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন বেগবান হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Mohsin Gazi ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪০ এএম says : 0
Right
Total Reply(0)
Ahmed Faysal ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪০ এএম says : 0
ঈদের পর উত্তাল আন্দোলনে রাজপথ কাঁপানোর জোর দাবি জানাচ্ছি।
Total Reply(0)
Mahbub Alam Kazal ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪০ এএম says : 0
এত ভদ্র মহাসচিব দিয়ে বিএনপির মত দল চলতে পারে না।
Total Reply(0)
Muhammad Noor Ahmed Sujon ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪০ এএম says : 0
2050 সালের ঈদের পর আন্দোলন হবে,?
Total Reply(0)
Moniruzzaman Sadhan ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪০ এএম says : 0
বুঝলাম আবার রাস্তায় নামলেই দোষ
Total Reply(0)
Ahmed Musa ১ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪১ এএম says : 0
আচ্ছা এই দলের নাম শুধু পত্রিকা আর সংবাদ সম্মেলনে দেখি আসলেই আছে নাকি এ নামে কোন দল??
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন