বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভাঙা হচ্ছে কমলাপুর স্টেশন

মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব নির্মাণ করবে জাপানি কোম্পানি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

শেষ পর্যন্ত ভাঙতেই হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কমলাপুর রেলস্টেশন। নকশা অনুযায়ী উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ছিল ২০ কিলোমিটার। পরে এর দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটার বাড়ানো হয়। এ কারণে ভেঙে ফেলা হচ্ছে ঐহিত্যবাহী কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন ইনকিলাবকে জানান, কমলাপুর রেলস্টেশনটি ভেঙে আরও আধুনিক ও মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নকশাও চূড়ান্ত হয়েছে। অনেকের মতে, কমলাপুর স্টেশনটি ভেঙে ফেলা হলে ঐতিহ্যবাহী এ স্থাপনাটি স্মৃতি হয়ে থাকবে। এটার সাথে বহু মানুষের আবেগ জড়িত।

মেট্রোরেল সূত্র জানায়, দুই ভাগে চলছে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ। এর মধ্যে উত্তরা-আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। আর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের অগ্রগতি প্রায় ৫০ শতাংশ। সরেজমিনে দেখা গেছে, মিরপুর অংশে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে বসানো হয়েছে রেল লাইন। আগারগাঁও অংশেও কাজ এগিয়ে চলেছে। তবে মতিঝিল অংশে সেই আগের মতোই কাজ চলছে ঢিমেতালে। এদিকে জাপানে মেট্রোরেলের কোচ নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। চলতি মাসেই মেট্রোরেলের প্রথম পাঁচটি ট্রেন নির্মাণ শেষ হবে। মেট্রোরেলের কর্মকর্তারা জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি জানুয়ারিতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সামনেই জাপানে হবে নতুন ট্রেনের ট্রায়াল রান।

জানা গেছে, বর্তমান কমলাপুর রেলস্টেশন ভেঙে মেট্রোরেলের স্টেশন কিছুটা উত্তর দিকে এগিয়ে নিয়ে নতুন আইকনিক স্টেশন নির্মাণ করা হবেএর আগে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে বর্তমান স্টেশনসংলগ্ন জায়গায় মেট্রোরেল স্টেশন আর কমলাপুর স্টেশন আরেকটু উত্তর দিকে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন জানান, নতুন স্টেশনটি হবে বর্তমান স্টেশনের অবিকল রূপে। এতে অত্যাধুনিক সুবিধা যেমন যুক্ত হবে তেমনি কাঠামো রাখা হবে বর্তমান স্টেশনের মতো। প্রাথশিক নকশা চূড়ান্ত হওয়ার কথা জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, পূর্ণাঙ্গ নকশা এখনও বাকি আছে। কমলাপুর রেলস্টেশন কবে ভাঙা শুরু হবে জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী বলেন, সব কিছু ফাইনাল হওয়ার পর বলা যাবে। তিনি বলেন, নকশা চূড়ান্ত হলে এমনভাবে কাজ চলবে যাতে সবকিছু দ্রুত করা যায়। রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, জাপানি কোম্পানি একদিকে কমলাপুর রেলস্টেশন ভাঙবে, আরেকটি নতুন স্টেশন নির্মাণ করবে। তাতে ভাঙতে ভাঙতেই নতুন স্টেশন তৈরী হয়ে যাবে।

রেলওয়ের ইতিহাস থেকে জানা যায়, এক সময় ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন ছিলো তৎকালীণ পূর্ব বাংলার এবং পূর্ব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় রেলওয়ে স্টেশন। বাংলা বিভক্তীকরণের পর ঢাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ঘনবসতিপূর্ণ শহরে রূপান্তরিত হয়। তাই ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনকে প্রতিস্থাপন করে তুলনামূলক নতুন ও অধিক বড় রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় সদ্য প্রতিষ্ঠিত বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের আমেরিকান শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে কমলাপুর স্টেশন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কমলাপুর স্টেশনের নকশা করেন মার্কিন স্থপতি রবার্ট বাউগি। ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে কমলাপুর স্টেশন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৬৮ সালে শেষ হয়। ১৯৬৮ সালের ২৭ এপ্রিল স্টেশনটি উদ্বোধন করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১লা মে ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে শেষ ট্রেন ছেড়ে যায় এবং এর পরের দিন স্টেশনটিকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনকে মাল্ডিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাবে রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছে জাপানি প্রতিষ্ঠান কাজিমা করপোরেশনের নেতৃত্বে একটি সাব ওয়ার্কিং গ্রুপ। এর আগে ডিএমটিসিএলের বর্ধিত মেট্রোরেল লাইনের নকশায় আপত্তি জানিয়েছিল কাজিমা করপোরেশনও। পরে মেট্রোরেলের প্রস্তাবিত নকশা ও মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাবের প্রস্তাবিত নকশায় কিছুটা পরিবর্তন এনে নতুন একটি নকশা প্রস্তাব করেছে কাজিমা করপোরেশন। তারা প্রস্তাবে বলেছে, বিদ্যমান রেলওয়ে স্টেশন বিল্ডিংটি উত্তরপাশে সরিয়ে দিতে হবে। স্টেশন বিল্ডিং সরিয়ে দেওয়ার ফলে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হবে, মেট্রো ট্রেনের লাইন বদলের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সেখানে গড়ে তোলারও প্রস্তাব দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে কবে নাগাদ কমলাপুর স্টেশন ভাঙা হবে এবং তখন কীভাবে ট্রেন ও যাত্রী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি কোনো কর্তৃপক্ষ। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলেছে, খুব শিগগিরি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

মেট্রোরেল সূত্র জানায়, মেট্রোরেলের উত্তরা-মতিঝিল-কমলাপুর রুটে প্রতি তিন মিনিট পরপর চলবে একটি করে ট্রেন। সেই হিসেবে এই রুটে দরকার হবে ২০টি ট্রেন। তবে নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিতে তৈরি থাকবে আরো চারটি অতিরিক্ত ট্রেন। এ কারণে ২৪টি রেলের অর্ডার দিয়েছে বাংলাদেশ। বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরেই প্রস্তুত থাকার কথা রয়েছে প্রথম পাঁচটি ট্রেন। যা জানুয়ারিতে জাপানে ট্রায়াল দেয়া হবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সামনে। মেট্রোরেলের ট্রায়াল দেখার জন্য চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাপান যাবে বাংলাদেশের কারিগরি দল। সবকিছু ঠিক থাকলে জাপানের ওবে বন্দর থেকে প্রথম মেট্রোরেলটি নিয়ে আসা হবে মোংলা বন্দরে। সেখান থেকে নদীপথে আনা হবে তুরাগ নদীতে। দিয়াবাড়িতে তুরাগ নদী থেকে নিকটবর্তী মেট্রোরেল ডিপোতে নেওয়া হবে কোচগুলো। এই প্রক্রিয়ায় যদি কোনো ঝামেলা না হয় তাহলে একইভাবে পরবর্তী ট্রেনগুলো নিয়ে আসা হবে উত্তরার দিয়াবাড়িতে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (15)
নাসির ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২৪ এএম says : 0
আমাদের দেশে এই সব পরিকল্পনা কারা করে সেটাই আমার বুঝে আসে না
Total Reply(0)
Zia Uddin Chowdhury ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ২:২৭ এএম says : 1
নতুন জায়গায় তৈরী করুন মেট্রো রেলের ষ্টেশন। এটি একটি আইকনিক স্থাপত্য প্রকৌশল।এটা করলে রেল ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।ঢাকার গুলিস্থানে ফুলবাড়ীয়ায় তৈরী করা যেতে পারে।ঐ সব রেলওয়ের পুরাতন জায়গা।।কোন যুক্তি নাই ষ্টেশন ভাঙ্গার।।
Total Reply(1)
Md Habib Hasan ৭ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:৪৫ এএম says : 0
When i is needed to make advancement, it is needed to break the old one and make a new one.
Nesar Uddin Biswas ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ২:২৭ এএম says : 1
পুরাতন ঐতিহ্য রেখে নতুন কিছু ভাবা যেতে পারে।
Total Reply(0)
Saidul Islam ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ২:২৭ এএম says : 1
মেট্রোরেলকে কমলাপুর পর্যন্ত নেওয়ার কি দরকার তার আগে বা পরে মেট্রোরেল স্টেশন করা যায় না?
Total Reply(0)
আশরাফ আহমেদ মিছবাহ ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ২:২৯ এএম says : 1
ভাঙলে কি হলো > নতুন আধুনিক মানের একটা রেলস্টেশন হবে, সেখানে এক্সকাভেটর লিফট আধুনিক সবকিছু থাকবে, ভাঙতে তো হবেই, না ভাঙলে নতুন কিছু হবে কি করে?
Total Reply(1)
thik ৫ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:০৪ এএম says : 1
You are absolutely right and Japan is the right answer. The most advanced railway is in Japan and the Japanese wagon, engine, and railway wheel(need to change very often) last longer than any other country. I have been in Japan - a miracle country by all senses. Japan can raise the country at the world level, but we have to clean up the country from owaji mullahs once for all if we want a prosperous Bangladesh.
BipLob ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ২:২৯ এএম says : 1
এটা একটা পাগলামি ছাড়া কিছুই না
Total Reply(0)
নুরজাহান ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ২:২৯ এএম says : 1
মেট্রোরেলের নকশা করার আগে একটু ভাবা উচিত ছিল
Total Reply(0)
M. S. Bhuyan ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ৫:০২ এএম says : 0
সালাম জনাব, বিশেষ সংবাদদাতা (ভাঙা হচ্ছে কমলাপুর স্টেশন), ধন্যবাদ সুন্দর রিপোর্টের জন্য, আপনার তথ্য মতে "...কমলাপুর স্টেশনের নকশা করেন মার্কিন স্থপতি রবার্ট বাউগি।...", দয়া করে সময় পেলে আৰ্কিটেক ড্যানিয়েল ডানহাম'র কমলাপুর স্টেশন এর ডিজাইনে কি কি অবদান ছিল তা একটু জেনে নেবেন, তাতে কমলাপুর স্টেশন নিয়ে আপনার পরবর্তী রিপোর্ট আরো সুন্দর হবে আশা করছি, আমরা এটা বিশ্বাস করতে চাই না, যে, ইনকিলাব এর মতো একটি পত্রিকা ইচ্ছাকৃত ভাবে বাংলায় ড্যানিয়েল ডানহাম'র অবদান কে ভুলে যাবার অভিনয় করতে পারে।...ধন্যবাদ
Total Reply(0)
Shafiur Rahman ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ৯:১৩ এএম says : 0
Kajima Corporation know better how to save the old architecture and they very expert in this field.In Bangladesh we can not take much care about the old buildings.Average building code is for 35 to 40 Years but if it is well maintained then a more few years possible.Kamlapur Rail station more than 50 Years old and it must be modified.Kajima Corporation will give us a most modern Station .
Total Reply(0)
মো আলী হায়দার ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ৯:২৭ এএম says : 0
যারা নকসা করেছেন তারা কি ঘরে বসে নকসা করেছেন?!!এর আগে কাওরান বাজারে দেশের ্একমাত্র আন্ডার পাস ভাঙ্গা হয়েছে।এসব স্থাপনা রেখে কি মেট্রো রেল স্থাপন সম্ভব ছিল না??স্থানীয় পরামর্শকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।
Total Reply(0)
মো আলী হায়দার ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ৯:৩০ এএম says : 1
রেল স্টেশন না ভেঙ্গে কমলাপুর রেল স্টেশনের ছাদের উপর মেট্রোরেলের স্টেশন করা হোক।
Total Reply(0)
Mahfuz Rahman ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ৭:৪৪ পিএম says : 0
আধুনিক ও মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব নির্মাণের জন্য ঐতিহ্যবাহী কমলাপুর রেলস্টেশন না ভেঙে পাশের BRTC Motijheel বাস ডিপোর বিশাল জায়গাটি ব্যবহার করলেই তো হয়
Total Reply(0)
ওয়ারেন্ট অফিসার(অব:) শেখ মো: আব্দুল করিম ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১০:১৮ পিএম says : 0
আমি মনে করি। পাবলিকদের সকল বিকল্প চিন্তা-চেতনা গুলো মাথায় অর্থাৎ বিবেচনায় রেখে যদি কোন বিকল্প উপায় না থাকে অর্থাৎ যদি তখন ভাঙতে হয়ইতো ভাঙবে। বিতর্কের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায়।
Total Reply(0)
ahmed ali ৫ জানুয়ারি, ২০২১, ১০:৩৭ পিএম says : 0
Please, don't destroy kamalapur railway station
Total Reply(0)
মোঃ শাহজান সিরাজ ১৩ জুন, ২০২১, ১:২১ এএম says : 0
রেলস্টেশন কমলাপুর থেকে সরিয়ে নেয়া উচিত, তাতে শহরের রেলক্রসিংয় গুলোতে জ্যাম লাগবে না । রেলওয়ের জায়গায় আন্ডারগ্রাউন্ড রেল এবং উপরে চওড়া রাস্তা তৈরি করা যেতে পারে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন