পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের দামে ধস নেমেছে। একদিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম কমেছে ৩ থেকে ৪ টাকা। কয়েকদিন আগে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় এখন সে পেঁয়াজের দাম ২৮ থেকে ৩০ টাকা। পেঁয়াজের হঠাৎ দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষদের মধ্যে শুরু হয়েছে হাহাকার। চাষীরা উৎপাদিত পণ্যের মূল্য না পাওয়ায় মৌসুমে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিকে দায়ী করছেন। গতকাল সচিবালয়ে এক বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ভারত নিজেদের স্বার্থে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ও চালু করে থাকে। সে কারণে পেঁয়াজ রফতানির ক্ষেত্রে যে শুল্ক কমানো হয়েছিল তা পুনরায় বৃদ্ধি করা হতে পারে।
গত শনিবার ভারত থেকে ১৯ টন পেঁয়াজ বোঝাই একটি ট্রাক দেশে প্রবেশের মধ্যদিয়ে স্থলবন্দর দিয়ে দীর্ঘ সাড়ে ৩ মাস পর পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স বাবু এন্টারপ্রাইজ এই পেঁয়াজ আমদানি করে। ৩ জানুয়ারি বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আর কোনও পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেনি। তবে এরপর দুই ট্রাকে ৫৪ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়, হিলি স্থলবন্দরের রাইয়ান ট্রেডার্স এসব পেঁয়াজ আমদানি করে। সোমবারও বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হতে পারে বলে আমদানিকারকরা জানিয়েছেন। অন্যদিকে সাতক্ষিতার সোনা মসজিদ বন্দর দিয়েও পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
হিলি বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন আগে পেঁয়াজ কিনেছি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এখন পেঁয়াজ কিনছি ২৮ থেকে ৩০ টাকা। পেঁয়াজের এমন দাম কমায় আমাদের মতো সাধারণ মানুষের বেশ সুবিধা হলেও কৃষকদের সর্বনাশ হচ্ছে।
পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুদিন আগে পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি করা হতো। ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি করবে এমন খবরে দেশি পেঁয়াজের দাম কমে যায়। একদিন পরেই সেই পেঁয়াজ দাম কমে ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজ বাজারে আসায় দাম আরো কমেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ প্রকারভেদে ২৭ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফরিদপুর, যশোর, রংপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, পাবনার মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা স্বপ্ন নিয়ে পেঁয়াজ উৎপাদন করেছেন। এখন চলছে পেঁয়াজের মৌসুম। হঠাৎ করে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। পচনশীল পণ্য পেঁয়াজ বিক্রি করতে না পারলে পচে যাবে। সে আশঙ্কায় কৃষকরা কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে কৃষকদের মধ্যে হতাশা শুরু হয়ে গেছে। দামের কারণে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা ন্যায্য মূল্য না পেলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। পরবর্তী মৌসুমে পেঁয়াজের আবাদ করা থেকে বিরত থাকবেন। রংপুরের এক ব্যবসায়ী বললেন, ভরা মৌসুমে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমাদানির সিদ্ধান্ত আত্মঘাতির নামান্তর। বিজেপি সরকার ভারতের কৃষকদের স্বার্থে পেঁয়াজ রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।তাদের সিদ্ধান্ত আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে কেন?
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মাহফুজার রহমান বাবু জানান, ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় বন্দরের আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপি করেন। এছাড়াও প্রতি টন পেঁয়াজ ২৫০ মার্কিন ডলার মূল্যে এলসি খোলা হয়। কেউ কেউ ২৭৫ মার্কিন ডলার মূল্যেও এলসি খোলেন। দীর্ঘদিন পরে দেশে ভারত থেকে পেঁয়াজ ঢুকলেও পেঁয়াজের দাম সে তুলনায় নেই, অনেকে পেঁয়াজ দেখলেও তেমন ক্রেতা নেই। ১৯টনের মধ্যে ভালো ভালো কিছু পেঁয়াজ ৩০ টাকা বিক্রি হয়েছে। আর বাঁকিগুলো ২৫ থেকে ২৭টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের কৃষকদের স্বার্থে পেঁয়াজ আমদানির ওপর অধিক করারোপ করা উচিত। কৃষকরা এবার পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য না পেলে পণ্যটি উৎপাদনে নিরুস্বাহিত হবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন