শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ইসরাইলের পারমাণবিক সমরাস্ত্র নিয়ে মার্কিনিদের ভণ্ডামি অবসানে জো বাইডেনের প্রতি তাগিদ ডেসমন্ড টুটুর

জামালউদ্দিন বারী | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

দেশে দেশে রাজনৈতিক-অর্থৗনৈতিক বিভাজন, বৈষম্য ও বর্ণবাদী দ্বন্দ্বসংঘাত বেড়ে চলেছে। বৈষম্য ঘুঁচিয়ে মানবিক মর্যাদা পুন:প্রতিষ্ঠা এবং নিরাপদ বিশ্ব গড়ে তোলার পক্ষের কণ্ঠস্বরগুলো যেন ক্রমে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে উঠেছে। স্নায়ুযুদ্ধকালে সোভিয়েত সমাজান্ত্রিক বলয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এমন কিছু কণ্ঠের প্রতিধ্বনি সারাবিশ্বেই শোনা যেত। বৃটিশ ঔপনিবেশিক বর্ণবাদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন মেন্ডেলার মরণপণ সাহসী প্রতিবাদের একটি হিরোইক আবহ সৃষ্টি হওয়ার পেছনে ছিল সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের গণমাধ্যমগুলো তার প্রতিবাদী ভূমিকাকে রাজনৈতিক আন্দোলনের মোড়কে হাইলাইটেড করতে সক্ষম হয়েছিল। একইভাবে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে অংস সান সুচির গণতান্ত্রিক আন্দোলনও পূর্ব-পশ্চিম ও তৃতীয় বিশ্বের মানুষের ব্যাপক সমর্থন লাভ করেছিল। কিন্তু মিয়ানমারে সুষ্ঠু নির্বাচনী ধারার গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন ঘটলেও সেখানে বৈষম্য, মানবিক মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক সামাজিক শৃঙ্খলা পুন:প্রতিষ্ঠা হয়নি। সুচির ডি-ফ্যাক্টো লিডারশিপ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর পরিকল্পিত নির্যাতন ও এথনিক ক্লিনজিংয়ের বর্বর তৎপরতা বহুগুণ বেড়ে যায়। গত ৭০ বছর ধরেই ও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের সঙ্কট ঝুলিয়ে রেখে ঘনীভ‚ত করে তোলা হলেও বিশ্বের মানুষ বিশ্বাস করেছিল যে, অংসান সুচির নেতৃত্বে মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে শত শত বছর ধরে বসবাসরত সেখানকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্বের প্রশ্নটির একটি রাজনৈতিক ও আইনগত সুরাহা হবে। বাস্তবে দেখা গেল, নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত অং সান সুচির দল ক্ষমতায় আসার পর রোহিঙ্গা নির্যাতন ও গণহত্যা অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। রোহিঙ্গা জনপদে প্রকাশ্য অগ্নিসংযোগ, সামরিক বাহিনীর দ্বারা নারীদের গণধর্ষণ, শিশুহত্যার মত বর্বরতা থেকে মুক্তি পেতে প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা নাগরিক সীমান্তনদী পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। জাতিসংঘের বিবৃতিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচে নিপীড়িত জনগোষ্ঠি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলমানরা ফিলিস্তিনের উদ্বাস্তুদের মতই নিরাপত্তাহীন ও মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।

নিপীড়িত জনপদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের পক্ষের কণ্ঠস্বরগুলো ক্রমে ক্ষীণ ও স্তিমিত হয়ে পড়ছে। সে সময়ের ঔপনিবেশ বর্ণবাদ বিরোধী কণ্ঠস্বরের এখন আর কোনো উত্তরসুরী খুঁজে পাওয়া যায়না। তিন বছর লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করে চব্বিশ বছরের যুবক মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকায় আইন পেশা শুরু করতে গিয়ে প্রবল সামাজিক-বর্ণবাদী প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন। তার আগেও চমৎকার কাহিনী আছে। লন্ডন থেকে বোম্বে ফেরার পর বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন যখন ভেস্তে যেতে বসেছিল ঠিক তখন ক্যাথিওয়ারের মুসলমান ব্যবসায়ী দাদা আব্দুল্লাহ মোহনদাসকে ডেকে নিয়ে আফ্রিকার জোহানেস বার্গে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেন। প্রায় ২ দশক ধরে বৃটিশ উপনিবেশ এবং সাদা-কালোর দ্ব›দ্ব-সংঘাতে জর্জরিত দক্ষিণ আফ্রিকায় মহাত্মা গান্ধীর গড়ে ওঠা এবং অহিংস-অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি গড়ে ওঠে। সেই মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী প্রথম মহাযুদ্ধের সময় দেশে ফিরে ভারতের স্বাধীনতার রাজনৈতিক সংগ্রামে যোগ দিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেন। গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকা ত্যাগ করার চার বছর পর নেলসন মেন্ডেলা জন্মগ্রহণ করেন। তবে মেন্ডেলা গান্ধীর চেয়েও অনেক দৃঢ় আপসহীন নেতা ছিলেন। তবে তিনিও গান্ধীর অহিংস নীতিকে তার রাজনৈতিক দর্শন হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে নোবেল পুরষ্কার গ্রহণকালে তাঁর এই পুরস্কারের সম্মানকে মহাত্মা গান্ধীকে উৎসর্গ করেছিলেন ম্যান্ডেলা। তিনি বলেছিলেন ইন্ডিয়া হচ্ছে গান্ধীর জন্মভ‚মি আর দক্ষিণ আফ্রিকা হচ্ছে তার আশ্রয়। স্বাধীন ভারতে হিন্দুত্ববাদী দুর্বৃত্তের হাতে ১৯৪৮ সালে মহাত্মা গান্ধীর মত্যুর পর ভারতে গান্ধীর মত আর কোনো নেতার জন্ম না হলেও গান্ধীবাদী ম্যান্ডেলা ২০১৩ সালে ৯৫ বছর বয়েসে মৃত্যুবরণ করার পর ডেসমন্ড টুটুর মত মানবতাবাদী খৃষ্টান ধর্মগুরু দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী ও মানবতাবাদী নেতৃত্বের ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখেছেন। অন্যদিকে যোগ্য নেতৃত্বের শূন্যতা ভারতকে একটি জাতিবিদ্বেষী বর্ণবাদী রাষ্ট্রে পরিনত করেছে। ভারতের ক্ষমতাসীনরা মহাত্মা গান্ধীকে এখনো জাতির পিতা মানলেও তার আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে মুসলিম বিদ্বেষী রাজনীতিকে ক্ষমতার মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে। মুসলমান ব্যবসায়ী দাদা আব্দুল্লাহ যদি ধর্মান্ধ হতেন, তবে মোহনদাস করম চাঁদা গান্ধী কখনো মহাত্মা গান্ধী হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটাতে সক্ষম হতেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে।

নেলসন ম্যান্ডেলার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় এঞ্জেলিকান চার্চের বিশপ ডেসমন্ড টুটু জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন। নব্বই দশকের শুরুতে ম্যান্ডেলার কারামুক্তির পর দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় নির্বাচনে সাদা-কালো নেতৃত্বের সমন্বয়ে ঐক্যমতের জাতীয় সরকার গঠিত হয়েছিল। প্রায় ২৭ বছর অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ ম্যান্ডেলা অতীতের সব ভুলে গিয়ে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। বর্ণবাদী প্রতিহিংসা ও রাজনৈতিক বিভেদ দূর করে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনে ডেসমন্ড টুটুর নেতৃত্বে গঠিত ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন শান্তি ও সহাবস্থানের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অনেক বড় অবদান রেখেছিল। সেই আশির দশক থেকেই ডেসমন্ড টুটু ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের সাথে নিজের একাত্মতা প্রকাশ করে আসছেন। সেই সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকানদের বর্ণবাদী চরিত্রের অন্যতম সাহসী সমালোচকও তিনি। টুটুর বর্তমান বয়েস প্রায় ৯০ বছর। এখনো এই নোবেল বিজয়ী নেতা ফিলিস্তিন সংকট, রোহিঙ্গা সংকটের মত বিশ্বের সবচেয়ে জটিল রাজনৈতিক সংঘাত ও সংকটগুে লা নিয়ে ন্যায়ের পক্ষে নিজের সাহসী ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তিনি এক সময় ইসরাইলের অস্তিত্ব ও নিরাপত্তার প্রশ্নে কথা বলার পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে তার সমর্থন সব সময়ই জোরালো ছিল। আফ্রিকান রি-কনসিলিয়েশনের মত আরব-ইসরাইল রিকনসিলিয়েশনের মত ধারণাও ডেসমন্ড টুটুর মধ্যে হয়তো কাজ করে। তবে এ সপ্তাহে আইসিএইচ অনলাইনে প্রকাশিত টুটু নিবন্ধে ইসরাইলের পারমানবিক মারণাস্ত্র নিয়ে অনেক স্পষ্ট অভিযোগ ও উদ্বেগের কথা বলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন চলমান বিশ্বব্যবস্থার সবচে বড় সংকট হচ্ছে অমিমাংসিত আরব-ইসরাইল ভূমি বিরোধ, জেরুজালেমসহ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং ইসরাইলের পারমানবিক মারণাস্ত্রের সংকট। এই বিষয়টি বিশ্বশান্তির জন্য অনেক বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবেচিত হলেও মার্কিনী ও জায়নবাদীদের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে অনেকেই এ নিয়ে কথা বলতে চাননা। তিনি এবার খুব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতি নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের করণীয় সম্পর্কে নিজের দিক নির্দেশনা ব্যক্ত করেছেন। গত রবিবার প্রকাশিত নিবন্ধে ডেসমন্ড টুটু ইসরাইলের সিক্রেট পারমানবিক সমরাস্ত্র সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরবতার ভনিতা ভেঙ্গে জো বাইডেনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন।

ইসরাইলের পারমানবিক প্রকল্প ও শত শত পারমানবিক ওয়ারহেড সম্পর্কে বিশ্ব সম্প্রদায় কার্যত নিরব থাকলেও এটি এখন আর গোপণ বিষয় নয়। ইসরাইলের পারমাণবিক প্রকল্প সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের নিরবতার মানে হচ্ছে, তারা গোপনে এই প্রকল্পে সব ধরণের সহায়তা দিয়েছে এবং ইসরাইলকে মেনে নিতে অস্বীকারকারী আরবদের জন্য শক্তিশালী একটি প্রচ্ছন্ন হুমকি হিসেবে ইসরাইলের সামর্থ্য সম্পর্কে প্রতিবেশি আরবদের ভয়ের মধ্যে রাখা। সত্তুরের দশকে আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকারের সাথে ইসরাইল যৌথভাবে পারমাণবিক বোমার যৌথ পরীক্ষার প্রস্তাব করেছিল বলে টুটু তার নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন। সাবেক ইসরাইলী সেনা কর্মকর্তা ভানুনু মরদেচাই মরুভূমির অভ্যন্তরে ইসরাইলের গোপন পারমাণবিক প্রকল্পের তথ্য ফাঁস করে দেয়ার পর এ নিয়ে পশ্চিমারা কোনো প্রশ্ন তোলেনি। ইরান-ইরাকের মত দেশগুলো আন্তর্জাতিক নন-প্রলিফারেশন চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও ইসরাইল তা করেনি। ইরাকের পারমানবিক প্রকল্পের সাথে অস্ত্র প্রকল্পের কোনো তথ্য প্রমান ছাড়াই সেখানে বিমান হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করে দেয় ইসরাইল। এরপরও যখন ইরাকের অগ্রযাত্রা ঠেকানো যাচ্ছিল না তখন ওয়েপনস অব মাস ডেস্ট্রাকশনের মিথ্যা অভিযোগ তুলে ইরাকে ন্যাটো জোটের সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে দেশটিকে দখল করে নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের নিয়মিত পরিদর্শন ও তদারকি রিপোর্টকে অগ্রাহ্য করেই ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ের মনগড়া সব অভিযোগ তুলে ইরানের বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি অনবরত সামরিক হামলার হুমকি দেয়া হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল থেকে। মার্কিন শাসকদের গোপন এজেন্ডায় মার্কিন সংবিধানের নির্দেশনা লঙ্খন করে এবং পারমানবিক বিস্তার রোধ চুক্তির প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিটমেন্ট লঙ্ঘন করে নাগরিকদের রাজস্ব থেকে শত শত কোটি ডলার জায়নবাদী ইসরাইলকে সহায়তা দিয়ে আসছে। সাবেক মার্কিন সিনেটর স্টুয়ার্ড সিমিংটন এবং জন গেøন সত্তরের দশকে মার্কিন সংবিধানে পারমাণবিক অস্ত্রবিস্তার রোধে যে সংশোধনী এনেছিলেন জিমি কার্টার প্রশাসন ভারত এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যথার্থভাবেই তা প্রয়োগ করেছিলেন। তবে আমেরিকার কোনো প্রেসিডেন্টই ইসরাইলের উপর এই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা প্রয়োগ করেনি। উপরন্তু রিচার্ড নিক্সন এবং বিল ক্লিন্টনের মত প্রেসিডেন্টরা ইসরাইলের পারমানবিক সমরাস্ত্র সর্ম্পকীত অস্বচ্ছতা মেনে নেয়ার পক্ষে মার্কিন প্রশাসনিক অবস্থান নিশ্চিত করেছিলেন। এভাবেই অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র বেহিসাবি পারমাণবিক শক্তি হিসেবে তার দানবীয় হাত বিস্তার করে চলেছে।

বিশ্বশান্তি, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, অস্ত্রবিস্তার রোধ সম্পর্কিত কমিটমেন্ট ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নিয়ে মার্কিনীদের দ্বিচারিতা ও প্রতারনামূলক অবস্থানের অবসান ঘটানোর কথা বলেছেন ডেসমন্ড টুটু। জো বাইডেনের কাছে বিশ্বসম্প্রদায়ের তেমন কোনো অর্থনৈতিক প্রত্যাশা নেই। তবে মধ্যপ্রাচ্য ও আরব-ইসরাইল দ্ব›েদ্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান বিরোধী আত্মঘাতী ভূমিকার অবসান ঘটাতে জো বাইডেনকে জন কেনেডির মত সাহসী স্টেটসম্যানের ভূমিকা নিতে হবে। প্রায় ৫০ বছরের রাজনৈতিক টানপোড়েন ও উত্থান পতনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এবার ট্রাম্পের মত চরমপন্থী বর্ণবাদী প্রেসিডেন্টকে দ্বিতীয় মেয়াদে পর্দাপণের সুযোগ রোধ করে সবচেয়ে বেশি বয়েসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন বাইডেন। মাকিন ট্যাক্সপেয়ার ভোটাররা ট্রাম্পকে ফেলে দিয়ের তাঁকে নির্বাচিত করার অর্থ হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যনীতিসহ ট্রাম্পের বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলো মার্কিনীরা সমর্থন করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্ব এখন একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। জোবাইডেনের সঠিক নেতৃত্বে মার্কিন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সাংবিধানিক নির্দেশনা বাস্তবায়নে জো বাইডেনকে অবশ্যই স্বচ্ছ, শক্ত ও সাহসী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। মার্কিন অস্ত্রে এবং মার্সেনারি বাহিনীর আগ্রাসনে ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন, লেবানন, ফিলিস্তিনের কোটি কোটি শিশু উদ্বাস্তু হয়ে চরম দারিদ্রের কবলে পড়ে অপুষ্টি, ক্ষুধা, নিরাপত্তাহীনতাসহ চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে সেখানে, বৃটেনের জিডিপির সমান উন্নত মাথাপিছু আয়ের ইসরাইলকে প্রতি বছর শত শত কোটি ডলার সহায়তা দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অথচ এর অর্ধেক সহায়তা দিয়ে যুদ্ধবিদ্ধস্ত ও তৃতীয় বিশ্বের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের জন্য বাসস্থান, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল ও কৃষি খামার গড়ে তোলা সম্ভব। মধ্যপ্রাচ্যের কোটি কোটি মানুষের দুর্দশাকে অগ্রাহ্য করে মাত্র অর্ধকোটি ইহুদির জন্য বছরে শত শত কোটি ডলার বরাদ্দ দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলকে একটা পারমানবিক ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে পরিনত করেছে। এই ফ্রাঙ্কেনস্টাইনকে জবাবদিহিতার আওতায় এনে শেকল বন্দী করার দায়িত্ব মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। ইসরাইলের পারমাণবিক প্রকল্প সম্পর্কে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক নন-প্রলিফারেশন চুক্তিগুলো ব্যর্থ ও অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন যদি ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়, এ ব্যাপারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আর নিরব থাকার সুযোগ নেই। জায়নবাদী ইসরাইলের প্রতি আমেরিকার শর্তহীন বন্ধুত্ব, গোপন পারমানবিক প্রকল্প ও ধ্বংসাত্মক সমরাস্ত্র নিয়ে মার্কিনীদের নিরবতা, আস্কারা ও সমর্থন নেতানিয়াহুর মত ইসরাইলী নেতাকে মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরতান্ত্রিক একনায়কে পরিনত করেছে। শুধু মধ্যপ্রাচ্যের জন্যই নয়, বিশ্বশান্তির জন্যই ইসরাইলের অঘোষিত ও অনিয়ন্ত্রিত পারমানবিক প্রকল্প অনেক বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মোঃ আশরাফুল হক ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ২:০৩ এএম says : 0
ইসরাইল টার্গেট আরব রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাম উঠে পড়ে লেগেছে বেশি দিন বাকি নাই রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের মতো হয়ে যাবে মধ্যপ্রাচ্য শাসন করবেইরান একটু মাথাচাড়া দিচ্ছে যার জন্য ইরানের বড় বড় বিজ্ঞানী আর্মি অফিসারদের মেরে ফেলতাছে গোপনে গোপনে যাতে ভবিষ্যতে তারা মাথাচাড়া দিতে না পারে
Total Reply(0)
নুরজাহান ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৫:০৮ এএম says : 0
এখন মুসলীম বিশ্বের উচিত ঐক্যবদ্ধ হওয়া
Total Reply(0)
আবদুর রহমান ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৫:০৮ এএম says : 0
লেখাটি খুব ভালো লেগেছে। লেখককে ধন্যবাদ
Total Reply(0)
নাসিম ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:০৭ এএম says : 0
দক্ষিণ আফ্রিকার নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু যথাযথ আহ্বান জানিয়েছেন।
Total Reply(0)
হৃদয়ের ভালোবাসা ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:০৭ এএম says : 0
বাইডেনকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
Total Reply(0)
হিমেল ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:০৮ এএম says : 0
কিন্তু ইহুদির বিপক্ষে যাওয়া কি বাইডেনের পক্ষে স্মভব হবে?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন