স্টাফ রিপোর্টার : বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী আ ফ ম মোহিতুল ইসলাম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আলী আজগর মোড়ল জানিয়েছেন। ৬৩ বছর বয়সী মোহিতুল কিডনির সমস্যা নিয়ে গত মাসে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট থাকার সময় তার রিসিপশনিস্ট কাম রেসিডেন্ট পিএ ছিলেন মোহিতুল । ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সময় তিনি ধানমন্ডির ওই বাড়িতেই ছিলেন।
জানা গেছে, তার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করে প্রয়োজনীয় সব ধরনের চিকিৎসা দিয়েও চিকিৎসকরা ভরসা পাচ্ছিলেন না; সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় তাকে বিদেশেও নেয়া যায়নি। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তার কিডনি প্রায় অকেজো, ঘন ঘন ডায়ালাইসিস করা হচ্ছিল। তার ফুসফুসের সংক্রমণ বেশ মারাত্মক, মস্তিষ্কও ভালোভাবে কাজ করছিল না।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচারের বাধা কেটে যাওয়ার পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মামলা করেন মোহিতুল । ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বিচারিক আদালত ওই মামলার রায়ে ১৫ জনকে মৃত্যুদ- দেয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাইকোর্ট প্রথমে বিভক্ত রায় দিলে পরে তৃতীয় বেঞ্চে ১২ জনের মৃত্যুদ- বহাল রাখে। ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদ-প্রাপ্ত পাঁচ আসামি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করে। বিচার প্রক্রিয়া শেষে পাঁচ আসামির মৃত্যুদ- ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। তবে দ-িত বেশ কয়েকজন এখনও পলাতক রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী আ ফ ম মোহিতুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক শোক বাণীতে প্রেসিডেন্ট বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচারে মোহিতুল ইসলামের সাহসী ভূমিকা বাঙালি জাতি আজীবন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে। তার সাহসী পদক্ষেপের কারণে দীর্ঘদিন পরে হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, খুনিরা শাস্তি পাচ্ছে এবং বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। শোক বাণীতে প্রেসিডেন্ট মোহিতুল ইসলামের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারে সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী আ ফ ম মোহিতুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী তার বার্তায় মোহিতুল ইসলামের সাহসী ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন, ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকা-ের সময় তিনি ধানম-ি ৩২ নম্বরের বাড়িটিতেই ছিলেন। ঘাতকদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য শিশু শেখ রাসেলকেও তিনি লুকিয়ে রেখেছিলেন। তার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ঘাতকরা নির্মমভাবে শেখ রাসেলকে হত্যা করে। তার মৃত্যুতে আমরা আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ একজনকে হারালাম। মোহিতুল ইসলামের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনাও জানান প্রধানমন্ত্রী।
মুহিতুল ইসলামের মৃত্যুর সংবাদ শুনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক হাসপাতালে ছুটে যান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তার মৃত্যুতে ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। গতকাল বাদ আসর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল চত্বরে প্রথম এবং বাদ মাগরিব মিরপুর-১৪ নম্বরে চাচার বাড়ির কাছে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আজ শুক্রবার যশোরের ঝিকরগাছায় ১০টায় এবং জুম্মা বাদ গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানান তার ভাতিজা মাহবুবুল ইসলাম পিটুল। তিনি জানান, চাচার শেষ ইচ্ছা ছিল তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে যাতে তাকে শায়িত করা হয়। তিনি আরো বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আসা নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি।
এদিকে মুহিতুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন