মালেক মল্লিক : সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগে মামলা নিষ্পত্তি হার বাড়লেও হাইকোর্ট বিভাগের ডেথ রেফারেন্স শাখায় মামলার নিষ্পত্তির হার কমছে। ফলে মামলার জট বাড়ছে ডেথ রেফারেন্স শাখায়। এতে করে মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে বছরের পর বছর অপেক্ষার প্রহর গুণছে ৪৮৮ ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামি। এদের মধ্যে অনেকেই ১১ থেকে ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে কনডেম সেলে আটক রয়েছেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছর ৩১ মে পর্যন্ত ডেথ রেফারেন্স শাখায় ৪৮৮টি মামলা বিচারাধীন। দায়ের হয়েছে ৬৬টি। নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২৯টি মামলা। অথচ ২০১৫ সালে নিষ্পত্তি হয় ৫৮টি। ২০১৪ সালে ১৩৫টি নিষ্পত্তি হয়। মামলার পেপার বুক তৈরিতে দীর্ঘসূত্রতা, পর্যাপ্ত সংখ্যক বেঞ্চের অভাবে বিলম্বে শুনানি হওয়া, সরকার ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের উদাসীনতাই এর প্রধান অন্তরায় বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) সাব্বির ফয়েজ ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে ১৭টি। এছাড়া শুনানি চলছে ১০টি মামলার। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি করে মামলা নিষ্পত্তি করতে। আর আমাদের বিচারক এবং জনবলের সংখ্যাও কম। আশা করছি অবকাশের পর বেঞ্চ বাড়বে। যাতে করে নিষ্পত্তিও বাড়তে পারে।
হাইকোর্ট বিভাগের ডেথ রেফারেন্স শাখার সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০’র উপরে বিচার প্রক্রিয়া শেষে মৃত্যুদ-প্রাাপ্ত আসামির দ- কার্যকর করা হয়েছে। তবে এখনও অনেক বিচার প্রার্থীরা বিচারের অপেক্ষায় কারাগারের কনডেম সেলে দুঃসহ দিন যাপন করছে। ২০০৪ সাল থেকে চলতি বছর ৩১ মে পর্যন্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৪ সালে দায়ের হয় ১৭৪টি আর নিষ্পত্তি হয় ১০১টি মামলা। ২০১২ সালে নিষ্পত্তি হয় ১৪৫টি এবং বিচারাধীন ছিল ৪৫০টি মামলা। ২০১৩ সালে নিষ্পত্তি হয় ১১১টি আর বিচারাধীন ছিল ৪০৬টি মামলা। ১৪ সালে নিষ্পত্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৫। বিচারাধীন ছিল ৩৬৩টি মামলা। ২০১৫ সালে নিষ্পত্তির ৫৮টি। আর একই সময়ে বিচারাধীন থাকে ৪১৯টি মামলা। চলতি বছর মে পর্যন্ত নিষ্পত্তি ২৯টি। দায়ের ৬৬টি। বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিবছর মামলা দায়েরের সংখ্যা বাড়ছে, কমছে নিম্পত্তির হার। বর্তমানে হাইকোর্টে ৪৮৮টি ডেথ রেফারেন্স মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
অথচ গত দুই বছরে সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪ সালের শুরুতে মামলা ছিল ১৪ হাজার ৩৩৮টি। দায়ের হয় ৬ হাজার ৯১৯টি। নিষ্পত্তি হয় ৫ হাজার ৯১১টি মামলা। বছর শেষে বিচারাধীন ছিল ১৫ হাজার ৩৪৬টি মামলা। বছরটিতে দায়ের হয় আরো ৮ হাজার ৭টি মামলা, এ হিসাবে মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৩৫৩টি। আর ওই বছরই ৯ হাজার ৯৯২টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। এরপর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৮৪৪টিতে, তিন মাসে নিষ্পত্তি হয় ৩ হাজার ৫২টি। জুনের শেষে ১৩ হাজার ৮১টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অপরদিকে, হাইকোর্ট বিভাগেও চলতি বছর ৩০ জুন পর্যন্ত নিষ্পত্তি হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিবছর উচ্চ আদালতে যে হারে ডেথ রেফারেন্স মামলা আসে, সে তুলনায় নিষ্পত্তি হয় অনেক কম। ডেথ রেফারেন্স শাখায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা মাত্র ফাইলগুলো সংরক্ষণ করি। নিয়ম অনুযারী নি¤œ আদালতের ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামির রায়ের যাবতীয় নথিপত্র আসে। চলতি বছর বিট্রিশ হাইকমিশনার, আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলারসহ কয়েকটি আলোচিত মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা নিয়মিত শুনানিতে অংশ না নেওয়া ডেথ রেফারেন্স মামলাগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া অন্যতম একটি অন্তরায়। ফলে বিচারপ্রার্থীদের বাড়ছে ভোগান্তি। প্রতি বৃহস্পতিবার মাত্র দুইটি বেঞ্চে শুনানি হওয়ায় এ জট কমানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
প্রথা অনুযারী বিচারিক আদালতে রায় দেওয়ার সাত দিনের মধ্যে হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় চলে আসে। পরবর্তীতে সাক্ষীদের জবাববন্দী, জাজমেন্ট প্রস্তুত, বই আকারে প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে ডেথ রেফারেন্স শাখা থেকে শুনানি জন্য পাঠানো হয়। হাইকোর্টে শুনানির পর রায় হলে সংক্ষুব্ধরা আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারেন। এর পর রিভিউ পর্যন্ত সুযোগ থাকে। আর রিভিউ খারিজ হলে এবং প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণ ভিক্ষা না চাইলে বা তিনি ক্ষমা না করলে কার্যকর করা হয় মৃত্যুদ-।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন