শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অদূরদর্শিতা ও লুটপাটনীতির কারণেই ভ্যাকসিন নিয়ে অনিশ্চয়তা: বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

সরকারের অদূরদর্শিতা ও লুটপাটনীতির কারণেই ভ্যাকসিন নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, বিনা ভোটের সরকার ক্ষমতায় থাকায় জনগণের প্রতি তাদের ন্যূনতম দায়বদ্ধতা নেই। ভ্যাকসিন নিয়ে যে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে তার থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে অনতিবিলম্বে ভ্যাকসিন সংগ্রহ, মূল্য, সংরক্ষণ এবং বিতরণ ব্যবস্থা সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। সেই সাথে ভ্যাকসিন সরবারহের জন্য অতিদ্রæত বিকল্প উৎস্য খুঁজে বের করারও আহ্বান জানান তিনি। গতকাল বুধবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. মোশাররফ এসব কথা বলেন।

বিকল্প উৎস্যে ভ্যাকসিন কোন দেশ থেকে আনার কথা বলছেন প্রশ্ন করা হলে ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ফাইজার ও মর্ডানের ভ্যাকসিন সম্পর্কে সবাই ওয়াকিবহাল যে, এটা সংরক্ষণে ৭০ ডিগ্রি মাইনাস এবং আরেকটা ২০ ডিগ্রি মাইনাস তাপমাত্রা লাগে। এসব আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য না। এছাড়া অন্যান্য দেশ যেমন রাশিয়া স্পুটনিক টাস্ক, চীন সিনো ফার্মা অনুমোদন দিয়ে তারা ইতোমধ্যে টিকা দিচ্ছে। অতত্রব ৩ বা ৪টি টিকাই এভেলেবল হবে তা নয়। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কয়েকটি ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে তবে তাদের কাছে ৫০টি টিকার ব্যাপারে এ্যাপ্লাই করা আছে। তারা ওইসব বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা শেষ হলে অনুমোদন দিচ্ছে। তাই বিকল্প বলতে আমরা যেসব টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃত আমাদের দেশের তাপমাত্রায় সংরক্ষণযোগ্য পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে দেয়া হচ্ছে সেগুলোর সাথে নেগোসিয়েশন করা হলে আরো কম দামে আমাদের দেশ টিকা পেতে পারতো। এখনো সুযোগ আছে বলে আমরা সরকারকে বিকল্প উৎস্য খোঁজার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সংগ্রহ নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের ও বেক্সিমকো প্রধান নির্বাহীর বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সাথে জি টু জি চুক্তি হয়েছে বলে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রী জানিয়েছে। আবার বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সরকারের সঙ্গে নয়, চুক্তি হয়েছে বেক্সিমকোর সাথে বা বাণিজ্যেক চুক্তি। আবার মঙ্গলবার তড়িগড়ি করে করোনা ভাইরাস টিকা কেনার জন্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেখানেও রাখা হয়েছে বিশাল দুর্নীতির খাত।
সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন ক্রয় করতে গিয়ে সরাসরি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি না করে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে চুক্তি করায় আর্থিকভাবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এর মাধ্যমে ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজের দাম প্রায় দ্বিগুণ পড়বে। যদি কয়েক কোটি ভ্যাকসিন আমদানিও হয় তা সাধারণ মানুষ আদৌ সে ভ্যাকসিন পাবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ভ্যাকসিন বিতরণের জন্য সরকারের প্রস্তাবিত জেলা, উপজেলা কমিটির মাধ্যমে টিকা সরবারহ করা হলে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের কাছে এই ভ্যাকসিন যথাযথভাবে পৌঁছাবে না।
তিনি বলেন, ভ্যাকসিন বিনামূল্যে পাওয়া জনগণের অধিকার। এই অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত না হয় সেজন্য বিএনপি প্রথম থেকে এই ভ্যাকসিন বিনামূল্যে সরবারহের দাবি জানিয়ে আসছে।
ভ্যাকসিন বিতরণের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রণীত গাইড লাইনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই নেতা বলেন, ওই গাইড লাইন অনুযায়ী যাদের ভ্যাকসিন পাওয়ার অগ্রাধিকার রয়েছে তাদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। শুধুমাত্র রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার মাধ্যমে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ব্যক্তিদের পরিবর্তে অন্যদেরকে এই ভ্যাকসিন দেয়ার প্রস্তাবনা রয়েছে সরকারের প্রণীত নীতিমালায়। দেশের ৬০ বছরের অধিক বয়সী জনগোষ্ঠি, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত জনগোষ্ঠি, প্রাধিকার প্রাপ্ত জনগোষ্ঠি, সম্মুখ সারির করোনা যোদ্ধারা বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যা কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রফেসর ডা. হারুন আল রশীদ, মহাসচিব প্রফেসর ডা. আব্দুস সালাম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন