শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

মানবীয় মূল্যবোধ ও টেকসই উন্নয়নের প্রধান উদ্দেশ্য

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৭ এএম | আপডেট : ১২:২৯ এএম, ৮ জানুয়ারি, ২০২১

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ: ইসলাম অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার জন্য প্রথমত সম্পদের আবর্তনের উপর গুরুত্বরোপ করে। দ্বিতীয়ত অর্থনৈতিক ভাবে দূর্বল মানব গোষ্ঠীকে আর্থিক স্বাবলম্বী তেরির বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করে। যাকাত, সাদকাহ এর অন্যতম দৃষ্টান্ত। ধনীর সম্পদে গরীবের অধিকার সাব্যস্ত করেই ইসলাম ক্ষান্ত হয়নি, বরং উক্ত অধিকার আদায় বাধ্যতামূলক করেছে। এমনকি অভাবগ্রস্থদের সাথে সদাচরণ করার ও নির্দেশ দিয়েছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঃ জীবনের সাথে সম্পদের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং নিবিড়। সম্পদ ছাড়া জীবনে সুখ ও নিরাপত্তা কল্পনা করা যায় না। ইসলামে বরং সম্পদ হলো আল্লাহ তায়ারার বিশেষ নিয়ামত। ইসলামী সমাজে অর্থনৈতিক তৎপরতায় মানবীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের বেশ ভূমিকা রয়েছে। ইসলাম মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক চাহিদাগুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে তাদের উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথ খোলা রেখেছে কিন্তু ইসলামের কাঙ্কিত উন্নয়ন মানবজীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতোই নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে সীমিত। মানুষ যাতে বস্তুগত উন্নয়নের পেছনে ছুটতে গিয়ে লোভ লালসা, অপচয় জুলাম ও অত্যাচারে জড়িয়ে না পড়ে সে জন্যেই এই সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে। একজন মানুষের জন্য দুনিয়া ও এর সম্পগুলো তখনই অপছন্দনীয় যখন তা তাকে খোদাদ্রোহিতার দিকে নিয়ে যায় এবং এর ফলে সে অজ্ঞতা, বিভ্রান্তি ও জুলুমের অতল গহক্ষরে নিক্ষিপ্ত হয়। ইসলাম মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন ও বৈষয়িক সমৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে কাজে লাগানোর বিরোধী নয়। টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্রের আওতায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কৌশলের লক্ষ্য হলো সামাজিক সমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দরিদ্র নিরসনকে সহজতর করা এবং পরিবেশগত টেকসহিত্বের প্রশ্নে কোন প্রকার আপস না করে অব্যাহত ত্বরান্বিত প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। নিম্নে ইসলামের আলোকে বিষয়টি আলোকপাত করা হলো:
যাকাত আদায় করা: ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ইসলাম যাকাত ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। যাকাত সমাজের গরীব দু:খী মানুষের হক। তা আদায় না করলে ব্যক্তির নিজস্ব উপার্জিত সম্পদ ভোগ ও হালাল হবে না। এ সমাজ ব্যবস্থার প্রত্যেকে বিত্তশালীর সম্পদে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে আল্লাহ তাআলা যাকাত দান ফরয করেছেন। তিনি বলেন: তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও এবং যারা রুকু করে তাদের সাথে সাথে রুকু কর। একইভাবে ইসলাম বিশেষ দান তথা সাদকাহকে কখনো ওয়াজিব এবং কখনো ঐচ্ছিক গণ্য করেছে। এ দু ধরনের দানই ইসলামী সমাজের অভাব দূর করার ক্ষেত্রে বাস্তব ভূমিকা পালন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আর আল্লাহর ভালবাসায় নিকটাত্মীয়, এতীম মিসকিন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদেরকে সম্পদ দান করে।
অপচয়-অপবায় নিষিদ্ধ: মানুষ তাঁর প্রয়োজনে অর্থ উপার্জন করবে, ব্যয় ও করবে। তবে কোন ক্রমেই অপচয় করতে পারবে না। মানুষের অর্থনৈতিক দায়িত্ব হলো সে অর্থের অপচয় রোধ করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে বনী আদম! প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা সুন্দর পরিষ্কার পোষাক পরিধান করবে, আহার করবে, পান করবে কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।
অভাবী ও দরিদ্রদের দান করা: সমাজের বিত্তশালী মানুষের প্রধান দায়িত্ব হলো তারা তাদের সম্পদের উদ্ধৃত্ব অভাবী ও দরিদ্রদের মাঝে বন্টন করবে। এটা গরীবদের প্রতি তাদের অনুগ্রহ নয় বরং অবশ্য পালনীয় দায়িত্বমাত্রা। ধনীদের সম্পদ গরীবদের অধিকার ঘোষণা করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: এবং তাদের ধন সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্থ ও বঞ্চিদের হক।
সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করা: মানুষ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অসহনীয় বৈষম্য দূর করার জন্য সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করবে। সুষম বন্টনের জন্যে আল কুরআনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এভাবে: আল্লাহ জনপদের অধিবাসীদের নিকট হতে তার রাসূলকে যা কিছু দিয়েছেন তা আল্লাহর, তার রাসূরের স্বজনগণের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্থ ও পথচারীদের, যাতে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান কেবল তাদের মধ্যেই ঐশ্বর্য আবর্তন না করে। রাসূলূল্লাহ স. তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর; আল্লাহ তো শাস্তি দেওয়ায় কঠোর।
সুদ বর্জন করা: সমাজ ব্যবস্থায় সুদ একটি অভিশপ্ত পদ্ধতি। এটি শোষণের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এতে করে সামগ্রিাক স্বার্থ নিদারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়। ফলে ইসলাম সুদকে সম্পূর্ণ হারাম ঘোষনা করে। এ ব্যবস্থায় কেউ সুদ দিতেও পারবে না এবং নিতে পারবে না, এতে মানুষের সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন