রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নিশ্চিত ও গণহত্যা অপরাধে দেশটিকে বিচারের আওতায় আনতে জো বাইডেন প্রশাসনকে সক্রিয় হতে হবে বলে মার্কিন ম্যাগাজিন টাইমে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। দশকব্যাপী মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সম্প্রদায় নির্যাতন, মারধর, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়ে আসছে। তারা ধর্মচর্চা, সন্তান জন্ম, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়াও তাদের রোহিঙ্গা পরিচয় দিতেও বাধা দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের দেশটির সেনাবাহিনীর নিধনযজ্ঞের শিকার হয়ে প্রথম ধাপে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক।
প্রভাবশালী মার্কিন ম্যাগাজিন টাইমের এ প্রতিবেদনে বলা হয়, আশার কথা হলো, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিশ্চুপ থাকে নি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসন ও পম্পেও রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে সবসময়ই কথা বলেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরে এক আঞ্চলিক সম্মেলনে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চীকে বলেছেন, ‘২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরদ্ধে যে সেনা নৃশংসতা ও অত্যাচার চালানো হয়েছে তার কোনো অজুহাত হতে পারে না।’ যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭ সালের পর রোহিঙ্গাদের জন্য ১.২ বিলিয়ন ডলারের মানবিক সহায়তা দিয়েছে। ২০২০ সালেই ২০০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মার্কিন সরকার মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লিয়াংসহ রোহিঙ্গ নিধনে জড়িত অন্যান্য জেনারেলদের ওপর নিষেধাজ্ঞারোপ করেছে। মিয়ানমারে রাখাইনে তদন্ত করতে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের উত্থাপিত রেজ্যুলেশনে সমর্থন দিয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসন। জাতিসংঘের সত্যতা অনুসন্ধান কমিটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, মিয়ানমারে গণহত্যা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজি) তে ২০১৯ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক গণহত্যা মামলা দায়ের করেছে। যার বিচার এখন চলমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ইস্যুতে আরো অনেক কিছুই করার রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভাইস- প্রেসিডেন্ট পম্পেও অনেক কিছুই করতে পারেন নি। ওভাল অফিসে বলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই ইস্যুতে অনেক কিছু করতে পারেন। মিয়ানমারকে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করতে হোয়াইট হাউস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু করা হয় নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কাছে এর সব প্রমাণ রয়েছে। এই বিষয়ে মার্কিন অবস্থান আইজিসিতে চলমান মামলায় মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতায় আনতে আরো এগিয়ে নেবে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন সেপ্টেম্বরের আইজিসির দুই বিচারকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ক্ষমতায় আসার পর বাইডেনের উচিত হবে অতি সত্বর এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া। আন্তর্জাতিক আদালতের সঙ্গে মার্কিন সম্পৃক্ততা মিয়ানমারের আরাকান, কাচিন, শান ও অন্যান্য প্রদেশে নির্যাতনের শিকার হওয়া গোষ্ঠির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক তদন্তের বিচার নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে চীনের ভেটো দেয়া ঠেকাতে বাইডেন প্রশাসনকে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। টাইমের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, রোহিঙ্গা গণহত্যা চলতে থাকলে এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যই হুমকিতে পরিণত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন