বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পদ্মায় পানি বাড়ছেই

নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষ পানি বন্দী

প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রেজাউল করিম রাজু : পদ্মায় পানি বাড়ছেই। ক্রমশ ছুঁতে যাচ্ছে বিপদ সীমার মাত্রা। গতকাল দশ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ২০ সে মি। এ পরিমাপ দুপুর তিনটা পর্যন্ত। রাজশাহীর কাছে পদ্মার বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ সে মি। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে পানি বৃদ্ধি আরো দু’তিনদিন চলতে পারে। তবে আতংকের কিছু নেই। এদিকে পদ্মায় পানি বাড়ার সাথে সাথে বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। নগরীর শহররক্ষা বাধের নীচে বসবাসকারীদের বাড়ি-ঘরে পানি উঠছে। তীর থেকে এখন বাঁধের দিকে আসছে।
জিয়ানগর নবগঙ্গাসহ বেশকটি এলাকায় ইতোমধ্যে কয়েকশ ঘরবাড়িতে নদীর পানি প্রবেশ করেছে। গতকাল বিকেলে নগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার থেকে পশ্চিমে লালনশাহ পার্ক পর্যন্ত নদীর তীর দিয়ে হেঁটে দেখা যায় তীরবর্তী মানুষ আতংকের মধ্যে রয়েছে। নদীর তীরে হাটার জন্য সিটি কর্পোরেশনের তৈরী রাস্তায় পানি উঠছে। তালাইমারী শহীদ মিনারের পশ্চিম দিকে বাজে কাজলা হতে পঞ্চবটি আইবাঁধ পর্যন্ত নদী তীরের বাড়ি ঘরে পানি থই থই করছে। পঞ্চবটি আইবাঁধের মাথায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় নদী তীরের ঘরবাড়িগুলোয় পানি বন্দী দৃশ্য। সেখানে নদীর প্রচ- গর্জন ও ঘুর্নী স্রোত। পাচানী মাঠের ডা. খোকন বলেন নদীর ভাবগতি ভাল না। কখন কি হয় বলা মুস্কিল। যে প্রচ- স্রোত বইছে তাতে অনেক কিছুই ঘটতে পারে।
নগরীর বিনোদন স্পট বড়কুঠি ও লালনশাহ পার্ক এলাকায় দেখা যায় নানা বয়েসী মানুষের প্রচ- ভীড়। দূর দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছে নদীর প্রমত্ত রুপ দেখতে। প্রবীনরা বলছেন এইতো সেই পদ্মা। ফারাক্কা চালুর আগে এমনি ছিল পদ্মার রুপ। শুকনো মওসুমে পানি নাদিয়ে শুকিয়ে মারা আর ওপারের বন্যার চাপ সামলাতে ফারাক্কার সব গেট এক সাথে খুলে দিয়ে ডুবে মারার খেলায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পদ্মার তীরে বিপুল সংখ্যক মানুষ ভিড় করলেও ইঞ্জিন চালিত নৌকায় চেপে নদীতে ঘুরে বেড়ানো যাত্রী অন্যান্য দিনের চেয়ে কম ছিল। নদীর ভয়ঙ্কর রুপ দেখে নৌকায় চড়তে সাহসে কুলায়নি অনেকের। তবে সাহস করে কিছু কিছু মানুষ ঘুরেছে। সেলফি তুলেছে। এসব স্থানের ফুচকা চটপটি নুডলসের দোকান গুলোয় পানি ওঠায় বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব দোকানের কর্মীরা বলেন গত পাঁচ সাত বছরে এমন পানি উঠেনি। বড়কুঠি ঘাটে নৌকায় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে দক্ষিনের চরে যাবার জন্য অপেক্ষমান যাত্রীদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন আমরা বাবা চরের বাসিন্দা। ক’বছর ধরে নদীর ভাঙনে আমাদের চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ ভিটে ছাড়া। ভাঙনে জমি জিরাত সাজানো সংসার ফসলের ক্ষেত সবি গেছে। এমনকি আমাদের সীমান্ত ফাঁড়ি সীমানা পিলার ভেঙে সব একাকার হয়ে গেছে। চর বিদিরপুরের অস্তিত্ব আর নেই। ওরা মধ্যচরে আশ্রয় নিলেও এবার সেখানে বানের পানি হানা দিয়ে তাদের ঘরছাড়া করেছে। চরখানপুরের বাবু জানালেন তাদের চরের অবস্থা খুব খারাপ কয়েক হাজার মানুষ পানি বন্দী। খাদ্যদ্রব্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বড্ড সংকট। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এপারে এসেছেন কিছু মালামাল কিনতে। এমন ভরা নদী পাড়ি দিতে ভয় করে না এমন কথার উত্তরে বলেন এটাতো আমাদের সঙ্গী। নদী আমাদের জীবন নদী মরণ। এই নদীকে ফারাক্কা দিয়ে মেরে ফেলার পর থেকে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বর্ষার মাস দুয়েক নদী ভরা থাকে তখন নৌকায় করে একটু আরামে এপারে শহরে আসা যায়। বাকী সময়তো শুধু বালিচর। মাথার উপর গনগনে সূর্য আর গরম বালি মাড়িয়ে হেটে আসতে হয়। মুসা নামে আরেকজন চরবাসী ক্ষোভের সাথে বলেন বানের পানিতে আমরা কিভাবে আছি। কেউ আমাদের খবরটুকু নিল না। তিনি জানান চরখিদিরপুরের মানুষ আশ্রয় নিয়েছে এপারের শ্যামপুর সাহাপুরে আর খানপুরের বেশ কিছু মানুষ আত্মীয় স্বজনের বাড়ি নিমতলা বাইপাশ নওদাপাড়া এলাকায় ঠাই নিয়েছে। শ্যামপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় নৌকায় করে চর থেকে প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে বানভাসী মানুষ আসছে। প্রচন্ড ভ্যাপসা গরমের পর দুপুরে উপরের বর্ষণ বানভাসী আশ্রয় নেয়া মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়েছে।
এদিকে নগরীর পানি নিস্কাসনের সবকটি গেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসব ড্রেন দিয়ে নগরীর পয়নিস্কাশনের পানি নদীতে গিয়ে পড়তো। এখন ড্রেনের নদীর অংশে কপাটের পানির উচ্চতা বেড়েছে। সেখানে প্রচ- চাপ দেখা যায়। কপাট বন্ধ থাকায় পানি বের হতে না পেরে ড্রেনের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। উত্তরে নওহাটার বারনই নদীতে পানি থাকায় দ্রুত পানি সেদিকে নামছে না। এদিকে পানি বিপদসীমার কাছাকাছি এসে যাওয়ায় শহররক্ষা গ্রোয়েন টি বাধের কাছে পানি উন্নয়ন বোর্ড সতর্কতা মুলক লাল পতাকা উড়িয়েছে। তবে তারা বলছে ভয়ের কিছু নেই। নদী ভাঙনের বিষয়টা নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছ্ েজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তাদের প্রস্তুতি রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে মনিটরিং করা হচ্ছে। গোদাগাড়ী, পবা, চারঘাট, বাঘা লালপুর ঈশ্বরদির নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে।




 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন