সউদী আরব যখন গত আগস্টে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ পরিশোধ করার জন্য পাকিস্তানকে চাপ দেয়, তখন রিয়াদের দাবি ইসলামাবাদকে অবাক করে দেয়। উত্তেজনা নিরসনে ইসলামাবাদ দ্রুত তার বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে রিয়াদে প্রেরণ করেছিল, তবে সউদী কর্মকর্তারা ঋণ পরিশোধের বিষয়ে দৃঢ় থাকায় তার মিশন ব্যর্থ হয়েছিল। রিয়াদ ইসলামাবাদকে বাকিতে ৩২০ কোটি ডলারের তেল দেয়ার পরিকল্পনাও স্থগিত করে দেয়।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অধিৃকত কাশ্মিরের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ইসলামিক কনফারেন্সের (ওআইসির) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন সউদী আরবের কঠোর সমালোচনা করার পর রিয়াদ এই চাপ প্রয়োগ করে। ঘটনাটি বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে দ্রুত পরিবর্তনশীল দক্ষিণ এশিয়া-মধ্য প্রাচ্যের সম্পর্কের উপর আলোকপাত করেছিল যে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তানের পক্ষে সমর্থন দেয়ার পরিবর্তে তারা ভারতের সাথে বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোতেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বিষয়টি পাকিস্তানকে চীনের সাথে সম্পর্ক আরও গভীর করার দিকে ঠেলে দেয়, যারা সউদ্ ীঋণের কিছু অংশ পরিশোধের জন্য তহবিল সরবরাহ করেছিল। গত ১ ডিসেম্বর, পাকিস্তান তার ত্বরান্বিত ঋণ পরিশোধের তফসিলের দ্বিতীয় কিস্তি হিসাবে ১০০ কোটি ডলার শোধ করেছিল।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, সউদীর এই চাপ পাকিস্তানের চরম অর্থনৈতিক ও আর্থিক চাপের সময়ে আসে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, যা পাকিস্তানের বিদেশী রেমিটেন্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস, সম্প্রতি পাকিস্তানি শ্রমিকদের কাজের ভিসা প্রদান নিষিদ্ধ করেছে। এর জন্য কারণ হিসাবে কোভিড-১৯ মহামারির কথা বলা হয়েছিল। অথচ, করোনা সংক্রমণ বেশি হওয়া সত্তে¡ও উল্লেখযোগ্যভাবে ভারতের প্রতি এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশির সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাম্প্রতিক সফরও এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করাতে ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তানের স্টেট ব্যাঙ্কের দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালের নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পাকিস্তানিরা ৫১ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের রেমিটেন্স প্রেরণ করেছিল। পাকিস্তানীরা একই মাসে সউদী আরব থেকে প্রায় ৬১ কোটি ৫১ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিল। বৈদেশিক রেমিটেন্স এবং বৈদেশিক মুদ্রার দুটি বৃহত্তম উৎসের সাথে সম্পর্কের অবনতি হওয়া পাকিস্তানের দূর্বল অর্থনীতির জন্য খারাপ সংবাদ।
পাকিস্তান সউদী ঋণ যথাযথভাবে শোধ করার সময়, চীনের উপর তার ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা দেখিয়েছিল যে আর্থিক প্রয়োজনের সময়ে বেইজিং কেবল একটি গুরুত্বপূর্ণ নয়, ইসলামাবাদের একমাত্র উপলভ্য বিকল্প। তবে কাশ্মীরই একমাত্র কারণ নয় যে উপসাগরে তার ঐতিহ্যবাহী মিত্রদের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক হ্রাস পাচ্ছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তিনি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ দেশসমূহ’ এর চাপে ছিলেন। পর্যবেক্ষকরা লক্ষ করেছেন যে, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সউদী আরব ব্যতীত অন্য কোনও ‘বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ’ নেই যারা পাকিস্তানের উপর এ জাতীয় চাপ প্রয়োগ করতে পারে। ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃত্ব অনুসরণ করতে ইসলামাবাদের প্রাথমিক অস্বীকৃতি পাকিস্তানের ওয়ার্ক ভিসায় নিষেধাজ্ঞা জারি করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে উদ্বুদ্ধ করেছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে পাকিস্তানের উদ্বেগজনক উত্তেজনাও তার নিজস্ব পরিবর্তিত বৈদেশিক নীতির প্রতিচ্ছবি, এটি ধীরে ধীরে তবে অবশ্যই উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রতিদ্ব›দ্বী তুরস্ক এবং ইরানের সাথে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের মধ্যে দেখা গেছে। (আগামী পর্বে সমাপ্য) সূত্র : এশিয়া টাইমস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন