বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আ.লীগ-বিএনপির তৃণমূল চাঙ্গা

রেজাউল-শাহাদাতের প্রতিশ্রুতির বহর

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে জমে উঠেছে ভোটের প্রচার। পথসভা, সমাবেশ, মিছিল, স্লোগানে মুখরিত বন্দরনগরী। সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাথে পাল্লা দিয়ে মাঠের বিরোধী দল বিএনপিও ব্যস্ত ভোটের প্রচারে। প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার আর হরেক ফেস্টুনে ভিন্ন রকম চিত্র সর্বত্র। চট্টগ্রামসহ সারা দেশের রাজনীতি দীর্ঘদিন স্থবির। সিটি নির্বাচনকে ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে চাটগাঁর আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনীতি। নগরজুড়ে ভোটের প্রচারে চাঙ্গা দুই দলের তৃণমূলের রাজনীতি। ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক কমিটিতে সক্রিয় নেতাকর্মীরা। নেতাদের কাছে তাদের কদরও বেড়েছে।

মেয়র এবং ৪১টি সাধারণ এবং ১৪টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরসহ ৫৫টি কাউন্সিলর পদে প্রার্থী পৌনে তিন শতাধিক। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ মহানগরীর প্রায় ৭০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ভোটার ১৯ লাখ ৫১ হাজার। ভোটের আর মাত্র ১৬ দিন বাকি। এ সময়ে ভোটারের মন জয়ে নানান কৌশলে চলছে প্রচার। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষাসহ নানান ভাষায় চলছে স্লোগান। যদিও নির্বাচনের ব্যাপারে ভোটারদের আগ্রহ এখনো ফিকে। নিজদলের মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থনে মাঠে নামছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয় নেতারা। কেন্দ্রীয় নেতারাও খুব শিগগির প্রচারে শামিল হবেন। সরকারি দলের মন্ত্রী, এমপিরাও তাদের প্রার্থীদের পক্ষে আছেন।

গতকাল রোববার তৃতীয় দিনের মতো ব্যাপক গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। তারা দুজনেই নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অঙ্গীকার করছেন বিশ্বমানের নগরী গড়ার। অন্যান্য দলের মেয়র প্রার্থীরাও বসে নেই। তারাও ব্যস্ত নির্বাচনী প্রচারে। কাউন্সিলর পদে ২৭৩ জন প্রার্থীও ভোটারের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।

নৌকা প্রতিকের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী গতকাল নগরীর পাহাড়তলী, কাট্টলী এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেন। এসময় তিনি উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট চান। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নে মেগা প্রকল্পসহ অসংখ্য প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। চট্টগ্রামকে বিশ্বমানের স্মার্ট সিটি হিসাবে গড়ার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, বন্দরনগরী হবে পানিবদ্ধতা, মাদকমুক্ত, পরিবেশ ও ব্যবসাবান্ধব নগরী। নির্বাচিত হলে সবার পরামর্শে উন্নয়ন ও সেবা সংস্থার সাথে সমম্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার কথাও জানান তিনি। নগরবাসীর হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে রাখার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা এ সময় তার সাথে ছিলেন।

এদিকে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রামকে বিশ্বমানের পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কারণে এই নগরীর পরিচিতি বিশ্বব্যাপী। আন্তর্জাতিকমানের মহানগরী হিসাবে এই নগরীকে গড়ে তালা হবে। তিনি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে তার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ৪১ ওয়ার্ডে আরবান হেলথ সেন্টারগুলো চালু করতে পারলে চমেক হাসপাতালের উপর কিছুটা হলেও চাপ কমতো। তাই আরবান হেলথ সেন্টার, চাইল্ড কেয়ার বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হবে। করোনা মহামারীর মধ্যে একটি হেলদি স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার জন্য কাজ করার কথা জানান তিনি। ডা. শাহাদাত হোসেন নগরীর হালিশহর, হামজার বাগ, পাঁচলাইশ ও চান্দগাঁও এলাকায় ধানের শীষের সমর্থনে ব্যাপক গণসংযোগ করেন। এসময় তিনি বেশ কয়েকটি পথসভায়ও বক্তব্য রাখেন।

নির্বাচনী প্রচারে আচরণবিধি লঙ্গনের কোন ঘটনা ঘটছে কি না তা দেখতে মাঠে আছেন ১৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১৪টি টিম। আছে একটি ভিজিল্যান্স ও একটি মনিটরিং টিম। বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন নগরীর বাকলিয়াসহ কয়েকটি এলাকায় তার পোস্টার ছেঁড়া ও প্রচারে হামলার অভিযোগ করেছেন। গতকাল রিটার্নিং কর্মকর্তার সাথে দেখা করে তিনি তার এসব অভিযোগের কথা জানান। এ জন্য তিনি নৌকার সমর্থকদের দায়ী করেন। কোন কোন এলাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর ও বিদ্রোহী প্রাথীদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে। নির্বাচন নিয়ে দলের কলহ-বিরোধও কোথাও কোথাও বেড়ে গেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, প্রতিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।
তিনি জানান, আগামী ২৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণে যাবতীয় প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। নগরীতে ভোটারদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে। আগামী ১৮ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৬ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ভোট হবে ইবিএমএ। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে মোট ভোটকেন্দ্র ৭৩৫টি। বুথ সংখ্যা চার হাজার ৮৮৬টি। নির্বাচনে ৭৩৫ জন প্রিসাইডিং এবং চার হাজার ৮৮৬ জন সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। পোলিং অফিসার থাকবেন নয় হাজার ৭৭২ জন। ভোটগ্রহণের জন্য সাড়ে ১১ হাজার ইভিএম প্রস্তুত করা হচ্ছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীসহ মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার, গণসংযোগে ব্যাপক লোক সমাগম হলেও উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। অনেকের মুখে মাস্কও দেখা যাচ্ছে না।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন