শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঢাকার বাতাস দুর্যোগপূর্ণ

দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রাজধানীবাসী, বাড়ছে সর্দি-কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ অনিয়ম আর উদাসীনতার কারণে বায়ুদূষণ বাড়ছে : বাপা

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ কিছুতেই কমছে না। প্রতিদিনই দূষণ বেড়ে ঢাকার বাতাস এখন চরম অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় পৌঁছেছে। বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরের মধ্যে ঢাকা প্রায় প্রতিদিনই শীর্ষ অবস্থানে থাকছে। গতকালও ঢাকার অবস্থান ছিল শীর্ষে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ঢাকার বায়ুদূষণ গতকাল নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। গতকাল ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল ৫০২ পিএম। যা চলতি বছর তো বটেই, গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল ৪৩০ পিএম। এমন দূষণের বাতাসকে দুর্যোগপূর্ণ বলে লোকজনকে ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

দূষিত বায়ুর কারণে রাজধানীতে বাড়ছে সর্দি-কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ। নগরবাসী এ সব রোগে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের আক্রান্তের হার বেশি। চিকিৎসকেরা বলছেন, বাতাসে ভারী ধাতু ও সূ²বস্তুকণা বেড়ে গেলে ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুজনিত সমস্যা বেড়ে যায়, এতে শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বুদ্ধিমত্তাও কমে যায়।

শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমা ইয়াসমীন বলেন, বায়ুদূষণের ফলে শিশুরা সবচেয়ে বেশি সর্দি-কাশিসহ শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এটা দীর্ঘদিন থাকলে ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। শিশুদের পাশাপাশি বৃদ্ধরাও এখন শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাইবিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’-এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী গতকাল গড়ে ঢাকায় দ‚ষণের মাত্রা গড়ে ছিল ৫০২ পিএম যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বায়ু বিশেষজ্ঞরা এ আবহাওয়াকে দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন। এখনই বায়ুদূষণ কমাতে পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহরূপ নিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছয় ধরনের পদার্থ এবং গ্যাসের কারণে ঢাকায় দূষণের মাত্রা স¤প্রতি অনেক বেড়ে গেছে। এরমধ্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা অর্থাৎ পিএম ২.৫-এর কারণেই ঢাকায় দূষণ অতিমাত্রায় বেড়ে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠছে।

কেন দূষণের মাত্রা এত বেশি জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল ইনকিলাবকে বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন খোঁড়াখুঁড়ি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ঢাকার বায়ুদূষণ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও তা যথাযথভাবে মানা হচ্ছে না। যে সব স্থানে উন্নয়ন কাজ হচ্ছে সব সব স্থানে সকাল বিকাল পানি ছিঁটানোর নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। অথচ তা সঠিকভাবে করা হচ্ছে না। নির্মাণ কাজে যে বালু ব্যবহার করা হচ্ছে তা ঢেকে রাখতে বলেছে আদালত। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। রাস্তার উপর নির্মাণ সামগ্রী ও বালু ফেলে রাখা হয়েছে। এ সব দেখার কেউ নেই। রাস্তায় মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়ি অবাধে চলাচল করছে। এগুলোকে বন্ধ করা যাচ্ছে না। সবাই শুধু মুখে বলছে অনেক কিছু করছি, কিন্তু বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অনিয়ম আর উদাসীনতার কারণে ঢাকার বাতাস এখন দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে। এ অবস্থায় বায়ুদূষণ কমাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। এতে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত হবে।

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামান বলেন, দূষণ রোধে শুধু পরিবেশ মন্ত্রণালয় কাজ করলে হবে না। আমরা দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গেও কয়েক দফা সভা করেছি। দূষণ রোধে প্রায় প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। রাস্তায় পানি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়েও কাজ চলছে। সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন স্থানে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া দূষণ শুধু আমাদের জন্যই হয় তা নয়, বাইরে থেকেও বাতাসের সঙ্গে ধূলিকণা আসে। এতেও আমাদের দূষণ বেড়ে যায়। আমরা দূষণ কমিয়ে আনতে যা যা করার দরকার তা করছি।
কিছুদিন আগেও বায়ুদূষণের প্রধান কারণ ছিল রাজধানীর আশপাশে গড়ে উঠা অবৈধ ইটভাটার কালো ধোঁয়া। উচ্চ আদালতের নির্দেশে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছে। তার পরও বায়ুদূষণের শহর হিসেবে ঢাকা ঘুরে ফিরে প্রথম স্থানে থাকছে কেন। মূলত চার কারণে রাজধানীবাসী বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছে। এর মধ্যে ধুলাদূষণ হলো অন্যতম প্রধান কারণ। দ্বিতীয়ত, পুরনো যানবাহনের আধিক্য ও এসবের কালো ধোঁয়া। তৃতীয়ত, শহরের আশপাশের শিল্প-কলকারখানার দূষণ। চতুর্থত, শহরের ভেতরে যে ময়লা-আবর্জনা জমে সেগুলো পোড়ানোর ধোঁয়া।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন