শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

লবণাক্ত পতিত জমিতে ফসলের হাসি

প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রবিউল ইসলাম, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) থেকে

বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশের প্রকৃত আবহাওয়া দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে লবণাক্ত পানির আধিক্য। দেশের বাকি অংশে চমৎকার মিঠা পানি। লবণাক্ততার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জায়গায় স্বাভাবিক ফসল ফলানো দুষ্কর। তবে লবণাক্ততাকে জয় করে এবার সাতক্ষীরাঞ্চল হাসবে ফসলের গানে। উচ্চমাত্রার লবণাক্ত জমিতেও ফলবে ফসল। আর এটি সম্ভব করেছে সাতক্ষীরা শ্যামনগর বারসিক গবেষণা উন্নয়ন কেন্দ্র। তারা ইতোমধ্যে নিজস্ব পরীক্ষা মাঠে তিল, মুগ ডাল, পুঁইশাক, ঢেঁড়শ, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙ্গা ও করলাসহ আরও কয়েকটি মৌসুমি সবজির চাষ করে আশাতীত ফসল পেয়েছেন। এর মাধ্যমে দেশের ক্রমবর্ধমান বিপুল লবণাক্ত পতিত জমি চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে দাবি করেছে বিজ্ঞানীরা। খুলনা মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্রে সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশের ১৮টি জেলায় ৯৩টি উপজেলায় প্রায় ১০ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর আবাদি জমি লবণাক্তায় আক্রান্ত। আর ১৯৭৩ সালে ১৮টি জেলায় লবণাক্ত জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ৮ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর। দিনদিন এর পরিমাণ বাড়ছে। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত বিপুল এই জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকে। এর একমাত্র কারণ উচ্চমাত্রায় লবণাক্ততা। এসব জমিতে শুধু বর্ষা মৌসুমে ফসল উৎপাদন করা যায়। গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক জি এম মোস্তাফিজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, শুঙ্ক মৌসুমে উপকূলের ১৮টি জেলার মাটি আশঙ্কজনকভাবে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততায় আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের গবেষণার মূল লক্ষ্য উচ্চমাত্রার লবণাক্ত জমিকে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসল ফলানোর উপযুক্ত করা। আমরা সফল পেয়েছি। বর্তমানে গবেষণা মাঠের বাইরের জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ১৫-২০ ডি এস মিলিগ্রাম। কিন্ত গবেষণা কেন্দ্রের মাঠে মাত্র ৮-৯ ডি এস মিলিগ্রাম এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করে রাখা সম্ভব হয়েছে। যা বড় একটি অর্জন বলা যায়। শ্যামনগর চ্যানেল আইয়ের পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষি গবেষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, উপজেলার উপকূলীয় আইলা দুর্গত উচ্চমাত্রার লবণাক্ততা জমিকে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চাষ উপযোগী করে তিল, ঢেঁড়শ, পুঁইশাক, মুগ, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙ্গা ও করলা চাষ করছে। বর্তমানে এ সবজি গাছগুলো ৯ থেকে ১০ ডি এস মিলিগ্রাম লবণাক্ততা সহ্য করে আশাব্যঞ্জক ফলন দিচ্ছে। ১৪ শতাংশ জমি থেকে সপ্তহে দেড় থেকে দুই মন ঢেঁড়শ ও ৮ শতাংশ জমি থেকে এক থেকে দেড় মন পুঁইশাক পাওয়া যাচ্ছে। আরেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, শুধুমাত্রার লবণাক্ত মাটিকে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চাষ উপযুক্ত লবণাক্ততার মধ্যে কমিয়ে রাখা সম্ভব। এ জন্য ফেব্রুয়ারির শেষে ও মার্চের শুরুতে মাটিতে জো (ফসল উৎপাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি ধরে রাখা অবস্থা) আসার সঙ্গে সঙ্গে পর পর তিনবার চাষ দিয়ে মাটি ঝুর ঝুরে করে রাখতে হয়। প্রয়োজনে সামান্য সেচ দেওয়া যেতে পারে। দ্বিতীয় সবজির গাছ লাগানোর মাদার (চারা লাগানোর স্থান) ছয় ইঞ্চি নিচে খড়কুটার একটি স্তর তৈরি করা, যাতে লবণাক্ততা উপরের দিকে না উঠতে পারে। তৃতীয়ত- কলসি সেচের ব্যবস্থা করা। গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকতা বিধান চন্দ্র বলেন, শুঙ্ক মৌসুমে অতিরিক্ত লবণাক্ততায় আক্রান্ত জমিকে চাষ উপযোগী করে তোলার কৌশল আমরা পেয়ে গেছি। এখন তা সাধারণ কৃষকের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে পারলেই দেশের ১৮টি জেলার বিপুল সংখ্যক কৃষক উপকৃত হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন