বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রাজউকের পদে পদে দুর্নীতি

এমপিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলেন চেয়ারম্যান

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

একের পর এক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের ঘুষ, দুনীতি এবং অনিয়মের কারণে বার বার আলোচনায় আসছে রাজউক। এবার সরকারি দলের এমপিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য এবং অবজ্ঞা করেছেন রাজউক চেয়ারম্যান। এছাড়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে এক প্রবাসীর প্লট বরাদ্দ দেয়ার ঘটনায় ব্যাপক আলোচনায় রাজউক।
সর্বশেষ সরকারি দলের এক মহিলা এমপি এবং বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন রাজউক চেয়ারম্যান ও পরিচালক (এস্টেট)। এ ঘটনায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং সংসদীয় কমিটির সভাপতিকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মহিলা সংরক্ষিত আসন-১৬ এর এমপি হোসনে আরা ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবুল হোসেন খন্দকার।
এর আগে এক প্রবাসীর প্লট বাতিল করে সেটি আবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে বরাদ্দ দিয়ে আলোচনায় আসে রাজউক। পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পের ৩০০ ফুট প্রশস্ত সড়ক ঘেঁষেই প্লটটি। ১০ কাঠা আয়তনের ওই প্লটটির বাজারমূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। বিষয়টি নিয়ে প্রতিমন্ত্রী নিজেও বিব্রত। ভুক্তভোগী প্রবাসী এখন রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
এসব প্রসঙ্গে রাজউক চেয়ারম্যান সাঈদ নূর আলম ফোনে ইনকিলাবকে বলেন, এমপি সাহেবের সাথে কোন প্রকার অসৌজন্যমুলক আচরণ করা হয়নি। আমি একটা মিটিংযে ছিলাম। সে কারণে এমপি সাহেবকে অনেক সময় বসে থাকতে হয়েছে। আমার ভুল হয়ে থাকলে আমি মাফ চাইবো। তিনি বলেন, ঘুষ- অনিয়ম ও দুর্নীতি একদিনে বন্ধ করা যাবে না। এটা করতে হলে সময় লাগবে। সকল অনিয়ম দুর্নীতি তদন্ত করা হচ্ছে।
সরকারি দলের মহিলা এমপি হোসনে আরা লিখিত অভিযোগে বলেছেন, গত ৬ জানুয়ারী বেলা ১১টার সময় আমি রাজউকের চেয়ারম্যানের দপ্তরে তার সঙ্গে সাক্ষাত করার উদ্দেশ্য গেলে রাজউক চেয়ারম্যানের পিও এবং অন্যান্যদের অসহযোগিতার কারণে প্রায় তিন ঘন্টা বাহিরে অপেক্ষা করি। এর পরেও তার সাথে দেখা না পাওয়ায় এক পর্যায়ে নিজেই তার অফিস কক্ষে প্রবেশ করে আমার পরিচয় দিয়ে কাজের কথা বলি। কিন্তু চেয়ারম্যান নিজেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে আমাকে যান-যান বলে অবজ্ঞা করেন এবং দাঁড়ানো অবস্থাতেই আমার সাথে অভদ্র আচরণ করেন এবং চলে যাওয়ার জন্য বলতে থাকেন। যা একজন সংসদ সদস্যের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ বলে মনে করি। তার এহেন কার্যকালাপ একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে চাকরির শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং অসদাচারণের শামিল। এ অবস্থায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুদৃষ্টি কামনা করছি বলে ডিওতে উল্লেখ করেছেন তিনি।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, সরকারি প্রকল্পে বরাদ্দ পাওয়া প্ল¬টের কাগজপত্র ঠিক করে দেয়ার বিনিময়ে একজন বিচারকের কাছে দুই কোটি টাকা ঘুষ দাবি করেছেন রাজউকের পরিচালক (এস্টেট) শেখ শাহীনুল ইসলাম। দীর্ঘ সময় চেষ্টা করেও দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় ওই বিচারক রাজউক চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এতে তিনি স্পষ্টতই রাজউক পরিচালকের ঘুষ দাবির বিষয়টি উল্লেখ করেন। রাজউকের ওই পরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। স¤প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া গোল্ডেন মনিরের প্লট বাণিজ্যের সঙ্গেও নাম এসেছে ওই পরিচালকের। অবৈধভাবে অর্থ অর্জন করে তা সুদের কারবারে খাটানোরও অভিযোগ শাহিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবুল হোসেন খন্দকারের দেয়া অভিযোগ অনুযায়ী, ২০০২ সালে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের জন্য তিনি আবেদন করেন। দেড় লাখ টাকা পে-অর্ডারসহ রাজউকের শর্ত মেনে ফরম পূরণ করে জমা দেন তিনি। ২০০৫ সালের ২১ মে দশ কাঠা পরিমাণের ওই প্লটটি তার নামে বরাদ্দ করে রাজউক। এক বছর পর প্রথম কিস্তির টাকা হিসেবে সাড়ে ছয় লাখ টাকা জমা দেন বিচারক ড. আবুল হোসেন খন্দকার। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তির টাকা জমা দিতে না পারায় রাজউকের কাছে সময় বাড়ানোর আবেদন করেন তিনি। এরই মধ্যে ১৯৯৭ সালে রাজউকের তৃতীয় প্রকল্পের জন্য আবেদন করা ৫ কাঠার প্ল¬টটিও ২০০৭ সালে বরাদ্দ পান ড. আবুল হোসেন খন্দকার।
বিচারক ড. আবুল হোসেন খন্দকারের অভিযোগ, শাহীনুলের সঙ্গে দেখা করার জন্য চেষ্টা করলেও তিনি ব্যস্ততার কথা বলে ফাইলে হাত দেননি। ২০ মাস অপেক্ষা করেও ফাইলটির নিষ্পত্তি করা যায়নি। ড. আবুল হোসেন খন্দকার ২০ মাস ঘুরে রাজউক পরিচালক শাহীনুলের দপ্তরে সবশেষ গেল বছর ১১ই নভেম্বর আবার দেখা করতে যান। এদিন শাহীনুল তাকে ফাইলে কিছু ঝামেলা আছে, কাজ করতে হবে বলে জানান। ড. আবুল হোসেন গত ১০ই ডিসেম্বর আবারো যখন রাজউকের এই পরিচালকের দপ্তরে হাজির হন তখন তার কাছে ২ কোটি টাকা ঘুষ দাবি করেন শাহীনুল। শাহীনুল ড. আবুল হোসেন খন্দকারকে বলেন, আপনি যদি ২ কোটি টাকা খরচ করতে না পারেন তাহলে আমি পাঁচ কোটি টাকায় প্ল¬টটি বিক্রি করে দেবো।
অন্যদিকে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ৩০% সুদে শেখ শাহীনুল ইসলামের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা নেন এক কেমিক্যাল কোম্পানির তিন মালিক। এর চুক্তিপত্র তাদের কাছে রয়েছে। এই টাকার সুদ পরিশোধের পর আরও ৫০ লাখ টাকা তাদের ধার দেন শাহীনুল। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা তারা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু মার্চ থেকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে তাদের ব্যবসা ভালো চলছে না। টাকা ফেরত দিতে দেরি হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাজউকের প্রধান কার্যালয়ে নিজের দপ্তরে ডেকে নিয়ে তাদের পৃথকভাবে মারধর করেন শাহীনুল। এছাড়া শাহীনুল সবাইকে বলে থাকেন বঙ্গবন্ধুর সমাধি আমার জমিতে। আমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না। রাজউকের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া গোল্ডেন মনিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ইস্যুতেও তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক। এ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত ৯ই ডিসেম্বর তাকে তলব করে দুদক। এদিন হাজিরা দেয়ার কথা থাকলেও শাহীনুল সময় চেয়ে আবেদন করেন। পরবর্তীতে ২৩ ডিসেম্বর দুদকের সেগুন বাগিচার প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন তিনি। ওইদিন সকাল দশটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত দুদকের উপ-পরিচালক সামছুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল শাহীনুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
রাজউকের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আছে। জানা গেছে, রাজধানীর খ-১২/২ খিলক্ষেতের বাসিন্দা আবুল কাশেম মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ডাকোটায় প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। রাজউকে আবেদনের ভিত্তিতে ২০০২ সালে তিনি পূর্বাচল উপশহরের ৫ নম্বর সেক্টরের ১০৩ নম্বর রোডের ৩৫ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ পান। ইতোমধ্যে তিনি কিস্তির সব টাকাও পরিশোধ করেছেন। স¤প্রতি দেশে ফিরে প্লটটি রেজিস্ট্রি করে বুঝে নিতে চাইলে তাকে জানানো হয়, প্লটটির ফাইল গায়েব হয়ে গেছে। পরে পাভেল নামের এক পিয়নকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে গায়েব ফাইলটি উদ্ধার করেন তিনি। তখন রেজিস্ট্রি করে নিতে চাইলে তাকে বলা হয়, পুরো টাকা পরিশোধ করা হলেও একটা কিস্তি দিতে একটু দেরি হয়েছিল। কিস্তির অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তার বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। গত ১৫ অক্টোবর আবুল কাশেমকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mohammed Sobhan ১৩ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:১৩ এএম says : 0
I wonder if the above news will allow Rajuk to help the sufferer. Please help the citizens to get better services in future. Eng. Mohammed sobhan Former Chairman The American Society of mechanical engineers Saudi Arabia Cnd w p chapter. Uttara Dhaka
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন