শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অপরাধী হলে শাস্তিতে আপত্তি নেই

দিহানের মায়ের খোলা চিঠি পুলিশ হেফাজতে বাসার নিরাপত্তারক্ষী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

রাজধানীর কলাবাগানে স্কুলশিক্ষার্থী ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি ফারদিন ইফতেখার ওরফে দিহানের বাসার নিরাপত্তারক্ষীকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। অন্যদিকে মামলায় দিহানের তিন বন্ধুকে প্রয়োজনে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে গতকাল জানায় পুলিশ। ওই স্কুলছাত্রীর মায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ কথা বলেছেন।

পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, গতকাল বেলা একটার দিকে নিরাপত্তারক্ষী দুলালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ধর্ষণের পর ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে দুলাল পলাতক ছিলেন। নিরাপত্তারক্ষী আসামি নন। তদন্তের প্রয়োজনে তার সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। সে কারণেই তাকে ডেকে আনা হয়েছে। কোথা থেকে কীভাবে দুলালকে পাওয়া গেল, সে ব্যাপারে এখনই বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি তিনি।
স্কুলছাত্রীর মা গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে ফারদিন ও তার বন্ধু তাকে জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তারা সেখানে (ফারদিনের বাসা) ছিলেন। ওই তথ্যের ভিত্তিতে তিনি ফারদিন ও তার তিন বন্ধুকে মামলায় আসামি করতে চান। মেয়ের মৃত্যুতে তার স্বামী একাধিকবার মূর্ছা যান। এই সুযোগে পুলিশ শুধু ফারদিনকে আসামি করে নিজেদের মনমতো বক্তব্য টাইপ করে ফারদিনের তিন বন্ধুর নাম বাদ দেয় এবং মামলায় বাদী হিসেবে তার স্বামীর সই নেয়। ফারদিনের তিন বন্ধুর অভিভাবকদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে কলাবাগান থানার পুলিশ এই কাজ করেছে।
স্কুলছাত্রীর মা ও বাবা জানান, তারা ফারদিনের তিন বন্ধুকে আসামি করতে কলাবাগান থানায় সম্পূরক আবেদন করবেন। এ ছাড়া আদালতে পৃথক মামলা করারও পরিকল্পনাও আছে তাদের। আসামি ফারদিন গত শুক্রবার ঢাকার সিএমএম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি এখন কারাগারে।
ঘটনা সম্পর্কে যা বলেছেন দিহানের মা
গত ৭ জানুয়ারি আমার বাসায় আমার ছেলে দিহান ও ওর বান্ধবীর ঘটনায় আমি হতবাক। একজন মা ও নারী হিসেবে এ ধরনের ঘটনা মেনে নেয়া খুবই কষ্টকর। গত দুদিন আমি কোনো সংবাদমাধ্যমে কথা বলিনি। কারণ, আমি পুরো ঘটনা বোঝার চেষ্টা করেছি। দিহানের বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আমার ছেলের ধর্ষণ এবং হত্যার উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা মা হিসেবে জানার চেষ্টা করেছি। একজন নারী হিসেবে কোনো কিশোরীর অসম্মান হোক বা ধর্ষিত হোক- কখনো চাই না। গত ৭ জানুয়ারি সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে আমি আমার অসুস্থ পিতাকে দেখতে যাওয়ার জন্য দিহানকে বাসায় একা রেখে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা হই। আমার অন্য ছেলে নিজের কর্মস্থলে ছিল। যমুনা সেতু পার হওয়ার পর দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে প্রাথমিকভাবে জানতে পারি মডার্ন হাসপাতালে দিহানের বান্ধবী মারা গেছে। দিহানকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। দ্রুত ঢাকায় এসে দেখি পুলিশ আমার বাসায়। জানলাম মেয়েটি আমার বাসায় দিহানের সঙ্গে দেখা করতে এসে ধর্ষিত হয়েছে এবং মারা গেছে।
তিনি আরো বলেন, মা হিসেবে আরও আগে থেকেই একটু আন্দাজ করতে পেরেছি, আমার ছেলে কোনো একটি সম্পর্কে জড়িয়েছে। কিন্তু কোন মেয়ের সঙ্গে, তা জানা ছিল না। তবে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে মেয়েটির অঁৎহধ অসরহনামের ফেসবুক আইডিতে দিহানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছবি, দিহানকে নিয়ে কবিতা লিখা ইত্যাদি দেখে মনে হলো এই মেয়েটির সঙ্গেই দিহান সম্পর্কে জড়িয়েছে। আমি ধারণা করছি, আমি বাসা থেকে বের হওয়ার পর দিহান মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করলে মেয়েটি আমার বাসায় আসে। দিহানের সঙ্গে বিশ্বস্ততার সম্পর্ক ছিল বিধায় মেয়েটি আমার বাসায় এসেছিল।
দিহানের মা আরো বলেন, আমি মনে করি, ধর্ষণ বা হত্যার উদ্দেশ্যে দিহান মেয়েটিকে বাসায় ডাকেনি। একজন আরেকজনকে ভালোবাসে। সেই হিসেবে একান্তভাবে সময় কাটানোর জন্যই হয়তো ডেকেছিল। উভয়ের বয়স কম। একজন নাবালিকা এবং আমার ছেলেরও বয়স ১৮ বছর ৭ মাস অর্থাৎ কিশোর। আবেগের বশে উভয়েই শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছিল এবং অপরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছে। পরবর্তীতে যা হয়েছে তা নিতান্তই দুর্ঘটনা মনে হচ্ছে। আমার ছেলে ধর্ষক বা হত্যাকারী হলে সে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করত কিন্তু সে তা করেনি। সে নিজে গাড়ি করে মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। মেয়েটির মাকে ফোন করেছে, পুলিশের কাছে ঘটনা স্বীকার করেছে। আমার ছেলে যদি মেয়েটির সঙ্গে অন্যায় করে তাহলে একজন নারী হিসেবে আমিও আমার ছেলের যথাযথ বিচার হোক সেটা চাই।
কিন্তু মেয়েটির ইচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল কিনা এবং একমাত্র শারীরিক সম্পর্কের কারণেই রক্তক্ষরণ ও মৃত্যু হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ প্রশাসনের ওপর আমি বিশ্বাস রাখতে চাই এবং বিচার বিভাগের ওপর আস্থা রাখতে চাই। বিচারের আগে আমার ছেলেকে ধর্ষক বা হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত না করার জন্য সমাজের সবার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আসামিকে দোররা মেরে মৃত্যু দন্ড দেওয়া হউক। ১২ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:১০ পিএম says : 0
কেননা যেনাকারি কে একমাএ দোররা মারা।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন