শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ওয়াশিংটনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি প্রধানের পদত্যাগ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

আগামী ২০ জানুয়ারি জো বাইডেনের শপথ গ্রহণে কী হতে চলছে, এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। গত ৬ ডিসেম্বের ট্রাম্পের একদল সমর্থক ক্যাপিটল হিলে নজিরবিহীন হামলা চালানোর পর বিশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে আমেরিকা। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সশস্ত্র সমর্থকরা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, এমন আশঙ্কা জানিয়ে সতর্ক করেছে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা- এফবিআই। সেইসাথে, কোনো রকম অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য চ‚ড়ান্ত সতর্কতা জারি হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসিসহ অন্তত ১২টি রাজ্যে। কড়া নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে রাজধানী ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিলকে। ওয়াশিংটনে মোতায়েন করা হয়েছে ১৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ড। ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ওয়াশিংটন সৌধে জারি হয়েছে পর্যটন নিষেধাজ্ঞা।

এফবিআই সতর্কবার্তা অনুযায়ী, নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথকে সামনে রেখে ট্রাম্পের উগ্র সমথর্করা যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ক্যাপিটালসহ রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিলে জড়ো হওয়ার ব্যাপক পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। পাশাপাশি, ১৩ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিশংসনের ডাক দিয়ে ভোটাভুটির আয়োজন করতে যাচ্ছে ডেমোক্র্যাটরা। এফবিআই এ প্রসঙ্গে জানিয়েছে, ট্রাম্পকে অভিশংসিত করা হলে মার্কিন ফেডারেলসহ স্থানীয় আদালতে তান্ডব চালাতে পারে ট্রাম্প সমর্থকদের একাংশ। বিশেষ করে আগামী ১৬ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে ৫০টি রাজ্যে বিশৃঙ্খলা চালানোর আভাস পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্সের তথ্যমতে, আগামী ১৭ জানুয়ারিসহ বেশ কয়েকটি তারিখে ওয়াশিংটন ডিসিতে গোপনীয়ভাবে সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে। ট্রাম্পের কট্টরপন্থী সমর্থকদের ১৬টি দল, যার মধ্যে কয়েকটি সশস্ত্র, তারা ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য নিবন্ধন নিয়েছে। ট্রাম্পপন্থী ও বিভিন্ন ডানপন্থী অনলাইন গ্রুপে পোস্ট থেকে সশস্ত্র বিক্ষোভ আহ্বানের প্রমাণ পাওয়া গেছে। শপথের দিনও একই ধরনের জনসমাবেশ আয়োজনের ইঙ্গিত করা হয়েছে তাদের অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে। গ্রুপগুলো এনক্রিপ্ট করা হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যাল এবং টেলিগ্রামে ‘ক্যাপিটল হিল এবং সমস্ত রাজধানীতে সশস্ত্র মার্চ’ করার আহ্বান জানিয়েছে। ২০ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হওয়ার একটি অনুষ্ঠানের জন্য উৎসর্গীকৃত একটি গ্রুপের অনলাইনে প্রায় ৪শ’ জন যোগ দিয়েছে। শরীরের বর্ম এবং বেসবলের ব্যাট নিয়ে উপস্থিত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছে তারা।

তবে, ক্রমবর্ধমান হামলার আশঙ্কা এবং অনভিপ্রেত ঘটনাগুলো সত্তে¡ও বাইডেনের উদ্বোধনী কমিটি বলেছে যে, রাজনৈতিক ও জনস্বাস্থ্য সঙ্কটের সময়ে বিভক্ত জাতিকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানাতে বাইডেন এ অনুষ্ঠানটি খোলা জায়গায় উপস্থিত হয়ে করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি সোমবার বলেছেন, ‘বাইরে শপথ নিতে আমি ভয় পাই না।’ আমেরিকান প্রেসিডেন্টের এবারের শপথের থিমটি হ’ল আমেরিকা ইউনাইটেড। বাইডেন আমেরিকার ৩ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডবউ বুশ এবং বারাক ওবামার সাথে আর্লিংটন জাতীয় সমাধি পরিদর্শন করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এদিকে, আরেকটি মারাত্মক সহিংসতার হাত থেকে রক্ষা পেতে মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস ক্যাপিটলের বাইরের সীমানায় যানবাহন চেকপয়েন্ট, মেটাল ডিটেক্টর এবং অতিরিক্ত সুরক্ষা স্ক্রিনিংসহ একটি ‘স্বাস্থ্যকর, স্তরবিশিষ্ট বলয়’ স্থাপন করছে। প্রতিরক্ষা বিভাগের অপর এক কর্মকর্তা বলেছেন যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যে কোনো সম্ভাব্য ইভেন্টের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশিষ্টজনদের লক্ষ্য করে স্নাইপারদের গুলি, ওয়াশিংটনের আকাশসীমায় প্রবেশ করে আত্মঘাতী বিমান হামলা এবং এমনকি জনসমাগমের ওপর আক্রমণকারী রিমোট চালিত ড্রোনসমূহ। কর্মকর্তারা বলেছেন যে, তারা একইসাথে একাধিক সক্রিয় শ্যুটারদের আক্রমণের বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। পেন্টাগনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা নিরাপত্তা পরিস্থিতিটিকে ‘নজিরবিহীন’ বলে অভিহিত করেছেন।

এর মধ্যেই, ওয়াশিংটনের সুরক্ষা প্রচেষ্টা আরও জটিল করে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের প্রধান চাড এফ ওল্ফ সোমবার মধ্যরাতে ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসাবে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। বিভাগটি সিক্রেট সার্ভিসকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা শপথ অনুষ্ঠানের সুরক্ষায় নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। ওল্ফ পরবর্তীতে এ বিভাগের নীতি নির্ধারণ শাখায় আন্ডার সেক্রেটারি হিসাবে কাজ করবেন।

অন্যদিকে, ওয়াশিংটনের মেয়র মুরিয়েল বাউসার অনুষ্ঠানের সময় পার্কগুলোতে জনসমাবেশের অনুমতি প্রদান বন্ধ করতে বলে এবং দুর্যোগ পরিস্থিতি ঘোষণার অনুরোধ জানিয়ে একটি শনিবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে একটি চিঠি পাঠান। এক সংবাদ সম্মেলনে বাউসার বলেন, ‘এটি প্রয়োজনীয় কারণ শপথ অনুষ্ঠানটি আমাদের প্রচলিত পরিকল্পনা প্রক্রিয়াগুলোর পরিধি ছাড়িয়ে এমন অনেক অভ‚তপূর্ব চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে: কোভিড-১৯ মহামারি এবং অবশ্যই আমেরিকার ক্যাপিটালে ঘরোয়া সন্ত্রাসের আক্রমণ।’ তিনি বলেন, আমি যদি কিছুতে ভয় পাই, তবে তা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য কারণ আমাদের দেশে অত্যন্ত চরমপন্থী দল রয়েছে যা সশস্ত্র এবং বিপজ্জনক।’

মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস কর্মকর্তা মাইকেল প্লাটি বলেছেন, শপথ অনুষ্ঠানটিকে একটি ‘জাতীয় বিশেষ সুরক্ষা অনুষ্ঠান’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাইডেনের শপথ গ্রহণের একদিন আগে ১৯ জানুয়ারি এ উচ্চতর নিরাপত্তা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হবে। সূত্র : দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Ayse Akther ১৩ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৫০ এএম says : 0
ট্রাম্পকে আমেরিকায় সরাসরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কারাগারে প্রেরণ করা উচিত,,পাগল একটা।
Total Reply(0)
নে হা ল ১৩ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৫৬ এএম says : 0
আল্লাহ সমস্ত পৃথিবীতে শান্তি বর্ষণ করুক
Total Reply(0)
Kamruzzaman Shishir ১৩ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:০০ এএম says : 0
সকল দেশের রাজনীতির এক অবস্থা।রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় আর নিরীহ প্রজার প্রান যায়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন