করোনার দ্বিতীয় প্রবাহ মোকাবেলায় এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানোর কথা ভাবছে জার্মানি। বিষয়টিতে শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে দেশটিতে পোশাক পণ্য সরবরাহকারী বাংলাদেশী পোশাক রফতানিকারকদের। বর্তমানে পণ্যের মজুদ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে ক্রয়াদেশ প্রাপ্তি ও কারখানা সচল রাখা নিয়ে নতুন করে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন তারা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গতকাল জার্মানির চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মেরকেলের বরাত দিয়ে জানানো হয়, আগামী এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে নভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় প্রবাহের সংক্রমণ অব্যাহত থাকতে পারে। এ অবস্থায় দেশটিতে চলমান লকডাউন আগামী এপ্রিল পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। -ডয়েচে ভেলে
খবরটি মারাত্মকভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে বাংলাদেশের পোশাক রফতানিকারকদের। তাদের মতে, একক দেশ হিসেবে জার্মানি বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য। এরই মধ্যে করোনার প্রভাবে দেশটিতে জার্মানিতে রফতানি ব্যাহত হয়েছে। এখন দ্বিতীয় প্রবাহের অবরুদ্ধ পরিস্থিতির মেয়াদ বাড়লে বর্তমানে চলমান ক্রয়াদেশগুলোর পণ্য মজুদ বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে ভবিষ্যৎ ক্রয়াদেশের অনিশ্চয়তাও। বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে বড় পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান রবিনটেক্স গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ-জার্মান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিজিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবু খায়ের মোহাম্মদ শাখাওয়াত বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা জার্মানির যে ক্রেতাদের সঙ্গে কাজ করছি, তারা প্রথম ঢেউয়ের সময় উল্লেখযোগ্য কোনো ক্রয়াদেশ বাতিল করেনি। এখন দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে তারা ক্রয়াদেশ জাহাজীকরণের বিষয়ে তেমন তাড়া দেখাচ্ছেন না। কভিডের দ্বিতীয় প্রবাহের প্রভাব পড়ার লক্ষণ বলতে এখন পর্যন্ত এতটুকুই। আমাদের শঙ্কার প্রধান জায়গাটি মূলত ভবিষ্যৎ ক্রয়াদেশ নিয়ে।
বাংলাদেশ থেকে বহির্বিশ্বে রফতানীকৃত পণ্যের ৮৫ শতাংশই পোশাক। প্রতি বছর রফতানীকৃত মোট পোশাকের সাড়ে ১৫ শতাংশ যায় জার্মানিতে। কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের আগেও দেশটি ছিল রফতানির অন্যতম প্রধান গন্তব্যস্থল। মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে রফতানির গতি ফিরিয়ে আনতে মূলত জার্মানিসহ বড় বাজারগুলোর ওপরেই ভরসা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। সরকারের হালনাগাদকৃত পরিসংখ্যানেও দেখা যাচ্ছে, দেশের রফতানি প্রবৃদ্ধি অর্জনে মূল ভূমিকা রাখছে প্রচলিত প্রধান বাজারগুলোই। দেশের রফতানীকৃত পণ্যের ৮৯ শতাংশই যাচ্ছে শীর্ষ ২০ গন্তব্যে। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশই যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে। সামগ্রিকভাবে কভিড-১৯ পরবর্তী মন্দা কাটাতে এ দুই বাজারের ওপরেই নির্ভর করতে হবে বাংলাদেশকে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বণিক বার্তাকে বলেন, একক দেশ হিসেবে জার্মানি বাংলাদেশের পোশাকের বৃহত্তম ক্রেতা। দেশটির ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে ক্রয়াদেশগুলোর রফতানির পূর্বনির্ধারিত সময় পিছিয়েছে। এখন মজুদ হতে থাকবে। আর বিনিয়োগ নিয়েও শঙ্কা বাড়ছে, কারণ প্রথম প্রবাহের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হলে পণ্য তৈরি করতাম না আমরা। এখন কাঁচামাল ব্যবহার করে পণ্য তৈরি হয়ে জমে যাচ্ছে। ফলে ক্ষতির আশঙ্কাও বেশি। ভবিষ্যতের ক্রয়াদেশ আরো অনিশ্চিত।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের রফতানি খাতের প্রধান পণ্য পোশাক। এ পণ্যটিই দেশের রফতানি খাতের গতিপ্রকৃতির মূল চালক। রফতানিতে মন্দা কাটিয়ে ওঠাও নির্ভর করছে পোশাক পণ্যের ওপর। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির বাজারের ওপরেই। এ দুটি বাজারে যদি ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলেই রফতানির পুনরুদ্ধার হবে, অন্যথায় হবে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও এ দুই বাজারেই রফতানির আকার ছিল অন্যগুলোর তুলনায় ভালো। দেশের শিল্প খাতের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের (বিসিআই) সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বণিক বার্তাকে বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর অন্যতম বড় রফতানি গন্তব্য জার্মানি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন