বছর খানেক হতে চলল মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। প্রতিদিনই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। অসংখ্য মানুষ হারিয়েছে জীবিকার উৎস। আর সব ধরণের খেলাধুলা স্বাভাবিকভাবেই লম্বা সময়ের জন্য ছিল স্থগিত। সবমিলিয়ে এ যেন সাধারণ মানুষের জন্য বড় অভিশাপ। কিন্তু ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ দলের অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ এটাকে দেখছেন ইতিবাচক দৃষ্টিতে!
মূলত সাকিব আল হাসানের ফিরে আসাকে কেন্দ্র করেই এমনটা বলেছেন মিরাজ। তিনবার জুয়াড়িদের কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেলেও আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ইউনিটকে না জানানোয় এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ ছিলেন সাকিব। এ সময় ক্রিকেট স্বাভাবিক নিয়মে চললে স্বাভাবিকভাবেই তাকে ছাড়া খেলতে হতো টাইগারদের। সাকিব না থাকলে বাংলাদেশ দলের শক্তিও খর্ব হতো। মিরাজ প্রাধান্য দিয়েছেন এ বিষয়কেই। তাই করোনাভাইরাসকে ‘প্লাস পয়েন্ট’ উল্লেখ করে মিরাজ বলেন, ‘অনেকদিন পর একত্রিত হয়েছি এবং আমাদের সবাই অনেক উৎফুল্ল খেলার জন্য। বিশেষ করে আমাদের সাকিব ভাইও দলে ফিরেছেন। এক বছর দলের বাইরে ছিলেন। কিন্তু আমাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট যে করোনার জন্য দীর্ঘদিন খেলা হয়নি। এটা আমাদের বাংলাদেশের জন্য প্লাস পয়েন্ট।’
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ফের ক্রিকেট ফেরায় দারুণ খুশি মিরাজ, ‘আমার কাছে খুব ভালো লাগছে যে অনেকদিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরছে। আর সবচেয়ে বড় কথা যে পরিস্থিতি পার করেছি শেষ এক বছর, আমরা হতাশ ছিলাম, কিভাবে কি করব না করব। অনুশীলন ওইভাবে করতে পারছিলাম না। এক বছর পর খেলা শুরু হচ্ছে, আমরা প্রত্যেকেই খুশি এবং আমিও ব্যক্তিগতভাবে খুশি।’
জাতীয় দলের হয়ে শেষ অনেকগুলো ম্যাচেই ছন্দের অভাবে ভুগেছেন মিরাজ। সবশেষ ১০ ওয়ানডেতে এই অফ স্পিনার নিতে পেরেছেন কেবল ৬ উইকেট, পাঁচটিতেই ছিলেন উইকেটশূন্য। মাঠের এই বিবর্ণ চেহারা ছাপ ফেলেছে তার মনেও, খুব একটা খুশি নন নিজের পারফরম্যান্সে। তারপরও উইন্ডিজের বিপক্ষে সুযোগ পেয়ে দারুণ খুশি এ তরুণ। কারণটাও অনুমেয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষেই তার রেকর্ড সবচেয়ে ভালো। ২২ টেস্টে ৯০ উইকেটের ক্যারিয়ারে মিরাজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪ টেস্টে ২৫ উইকেট নিয়েছেন মাত্র ১৮ গড়ে। দেশে রেকর্ড আরও ভালো, ২ টেস্টে ১৪.০৬ গড়ে ১৫ উইকেট। তার ইনিংস সেরা (৭/৫৮) ও ম্যাচ সেরা (১২/১১৭) বোলিং, দুটোই ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষেই। ৫০ ওভারের ক্রিকেটেও তার সবচেয়ে বেশি শিকার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই, ১০ ওয়ানডেতে ১২ উইকেট। এই সংস্করণেও সেরা বোলিং তাদের সঙ্গেই, ৪/২৯। দেশের মাটিতে ৩ ম্যাচে ১৬.৩৩ গড়ে উইকেট ৬ টি। তিন সংস্করণ মিলিয়ে দেশের মাটিতে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ৮ ম্যাচে ১৭.৯৫ গড়ে মিরাজের উইকেট ২২টি। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে তার চেয়ে বেশি উইকেট আছে কেবল সাকিব আল হাসানের (১৮ ম্যাচে ৪৫টি)।
অতীত আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে নিজের ছন্দ ফিরিয়ে আনার সুযোগ মনে করছেন তিনি, ‘শেষ তিন-চারটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ কিন্তু আমি অতটা ভালো করতে পারিনি দেশের মাটিতে বা দেশের বাইরে। যেহেতু ওয়েস্ট ইন্ডিজ আসছে এবং আমি তাদের সঙ্গে (আগে) ভালো করেছি। আর দেশের মাটিতে খেলা টেস্ট-ওয়ানডে দুটোই। অবশ্যই চেষ্টা থাকবে, এখানে যদি ভালো করতে পারি, তাহলে নিজেকে ফেরানোর ভালো একটা সুযোগ পাবো।’
আগামী ২০ জানুয়ারি মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। করোনা পরবর্তি ক্যারিবিয়ানদের এটি তৃতীয় সফর হলেও এই ম্যাচ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছে বাংলাদেশ। তবে একটি জায়গায় দু’দলই সমান- আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে যে এটি তাদের অভিষেক ম্যাচ!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন