শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাড়তি সুবিধায় সুদ হিসাবেই বিপুল টাকা নিচ্ছে জাপান টোব্যাকো

অস্বাভাবিক মাত্রার কারিগরি ফি সিঙ্গাপুরে পাঠানোর প্রস্তাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

সরকারের উদারনীতি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদৈশিক মুদ্রা নিয়ে যাচ্ছে জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল (জেটিআই)। এছাড়াও আইনি সীমার প্রায় ১৪ গুন বেশী অর্থ কারিগরি ফি হিসেবে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

২০১৮ সালে আকিজ টোব্যাকো অধিগ্রহণ করে বিনিয়োগ করা জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল (জেটিআই) দশ বছরে শুধুমাত্র সুদ বাবদ ৩ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা নিয়ে যাবে বাংলাদেশ থেকে। এর বাইরে মূলধন বিনিয়োগের বিপরীতে লভ্যাংশ, বিদেশি কর্মীদের বেতন ও রয়্যালিটিসহ বিভিন্ন খাতে নেবে আরও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ যেমন দরকর তেমনি তারা কি পরিমাণ টাকা নিয়ে যাবেন সেটিও দেখা উচিত। কোনো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চাইলে লভ্যাংশের টাকা পুন:বিনিয়োগ করার শর্ত দেয়া যেতে পারে। আবার সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খুলে ঋণ হিসাবে বিনিয়োগ করলে তার সুদহার যেনো কম হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ঋণ হিসাবে বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদন দিলে সাধারণত ২ থেকে ৩ শতাংশ সুদহার থাকা উচিত। সব দেশেই বিদেশি ঋণে সুদহার ৫ শতাংশের নিচে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে দেশে সর্ববৃহৎ বিদেশি বিনিয়োগ আসা জাপান টোব্যাকো তাদের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানকে ৬ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে। ঋণের এ টাকা ২০২২ সাল থেকে পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে পরিশোধের পাশাপাশি ৫ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত জেটিআই বাংলাদেশকে তাদের মাদার কোম্পানির কাছে ২০২২ সাল পরবর্তী ১০ বছরে ৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা (১১৭ কোটি মার্কিন ডলার) বিদেশে পাঠাবে। অথচ বিশ্বব্যাংকসহ বৈদেশকি ঋণদান অন্যান্য সংস্থা থেকে ঋণ নিলে সুদের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকার কম হতো। মার্কিন ডলারে সরল সুদে এর পরিমাণ হওয়ার কথা মাত্র ৩৯ দশমিক শুন্য ৬ কোটি ডলার।

সুদের বাইরেও সাবসিডিয়ারি কোম্পানিকে দেয়া আরো প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার মূলধনের লভ্যাংশ বাবদ বিপুল টাকা জাপানে পাঠাবে জেটিআই। যদিও কোম্পানির মুনাফা অর্জনের আগে এ টাকার পরিমাণ বলা সম্ভব নয়। তবে বিপুল বিনিয়োগের বিপরীতে বড় লভ্যাংশই চাইবে কোম্পানিটি। এছাড়াও আইনি সীমার প্রায় ১৪ গুন বেশী অর্থ কারিগরি ফি হিসেবে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর যে প্রস্তাব দিয়েছে তা কিভাবে তারা স্থানান্তর করবে তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিষেশজ্ঞদের মতে এক্ষেত্রে মানিলন্ডারিংয়ের সম্ভাবনাও থাকতে পারে।

জাপান টোব্যাকোর বিনিয়োগ চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৮ সালের ৬ আগস্ট জাপানি কোম্পানিটি ১৪৭ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার অর্থ্যাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকায় আকিজ টোব্যাকোর সব ব্যবসা কিনে নেয়। ব্যবসা কেনার সময় আকিজ টোব্যাকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আগের কর্মকর্তাদের ব্যবসা পরিচালনার কথা থাকলেও পরবর্তীতে অন্তত ৮০ জন বিদেশি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে তারা, যাদের মাধ্যমেও বেতন ও অন্যান্য ভাতা বাবদ বিদেশে চলে যাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ।

কোম্পানিটি বলছে, সম্প্রসারণশীল বাজারগুলোতে ব্যবসা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে এসেছে। তবে বিনিয়োগের কঠিন শর্ত ও বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে বক্তব্য পাওয়া যায়নি কোম্পানিটির কাছ থেকে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সুপারিশের প্রেক্ষিতে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদেশি বিনিয়োগ দেশের প্রত্যাশা পূরণ না হলে সাধারণত অনুমোদন দেয় না বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কঠিন শর্ত হলেও জাপান টোব্যাকোকে ছাড় দিয়েছে দেশের কেন্দ্রিয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত ক্যাপিটাল বিনিয়োগ হয়। মাদার কোম্পানি সাবসিডিয়ারিকে ঋণ হিসাবে দিয়েও বিনিয়োগ করে। তবে অধিকাংশই ক্ষেত্রেই তা সুদমুক্ত হয়। অন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণত ৩ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিয়ে থাকে। তবে ১ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে বিনিয়োগকারীদের।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবীদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ‘রেট অব রিটার্ন’ অনেক বেশি। তাই সরকারি নীতিগুলো বাস্তববাদী ও ব্যবসাবান্ধব হতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Mizan Mir ১৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৪৮ এএম says : 0
সরকারি নীতিগুলো বাস্তববাদী ও ব্যবসাবান্ধব হতে হবে
Total Reply(0)
durbasadurbar ১৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৯:২৯ পিএম says : 0
It is the policy of foreign country to invest without any interest but to gain from 1000 loophole .Its called terrorisms of capitalist's philosophy.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন