বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দ্রুত বিচার আইনে ন্যায়বিচার চান শিক্ষার্থীর মা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

রাজধানীর কলাবাগানে ও লেভেল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দ্রুত ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীর মা। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তিনি এ দাবি জানান। পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আরও কয়েকটি দাবি জানান তিনি। দাবিগুলো হচ্ছে- ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায়বিচার করা, মামলা কার্যক্রম দ্রুত বিচার আইনে করা, দিহান ও তার সঙ্গীদের বিচারের আওতায় আনা, একটি স্বচ্ছ ডিএনএ পরীক্ষা কার্যকর করা এবং শিক্ষার্থীর পরিবার যেন কোনও অযাচিত অসুবিধার শিকার না হয়, তার ব্যবস্থা করা।
সেদিনের ঘটনা উল্লেখ করে শিক্ষার্থীর মা বলেন, গত ৭ জানুয়ারি দিহান ও তার সঙ্গীরা আমার মেয়েকে অপহরণ করে তার বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে আমার মেয়েকে অমানবিক নির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যার পর আমাকে ফোন করা হয়। দিহান আমাকে ফোন করে জানায়, সে (শিক্ষার্থী) সেন্সলেস হয়ে গেছে। আমি হসপিটালে এসে দেখি, দিহানসহ তার তিন সঙ্গী বসে আছে। তারা আমার পা জড়িয়ে ধরে বলে ‘আন্টি আমাদের বাঁচান।’ যখন আমার মেয়েকে দেখতে চাই, তখন আমাকে দেখতে যেতে দেয়া হয়নি। কর্তব্যরত ডাক্তার আমাকে জানান, শিক্ষার্থী মারা গেছে। পরে দিহানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, আমার মেয়েকে তোমরা কোথায় পেলে, কেন মারা গেল? তখন সে আমাকে বলে, আমরা চারজন ওকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাই এবং সেখানে সে সেন্সলেস হয়ে যায়। তখন আবার জিজ্ঞেস করি, বাসায় আর কোনও মেয়ে ফ্রেন্ড ছিল না, বা তোমার বাবা-মা ছিল না? তখন বলে, না, আমরা চারজনই তাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। এরপর আমার বুঝতে বাকি থাকে না সেখানে কী হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যেভাবে মামলাটি করতে চেয়েছি, পুলিশ সেভাবে মামলাটি নেয়নি। একটি মহল দিহান ও তার সঙ্গীদের আড়াল করার এবং আমার মেয়ের চরিত্র হননের চেষ্টা করছে। বলা হচ্ছে, আমার মেয়ের সঙ্গে দিহানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এটি একদমই ঠিক না। কিছু কর্মকর্তা সাক্ষাৎকার বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেটি প্রচার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ওই শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, আমার মেয়েকে প্রতিটা মুহূর্তে আমি মায়ের মতো করে রেখেছি। আমার পারমিশন ছাড়া, অথবা আমার সঙ্গে কথা না বলে সে কোথাও কিছু করত না। ভবিষ্যতে প্রতিটা মুহূর্ত কী করবে- সেটা আমার সঙ্গে কথা বলেই করত। আমি আমার মেয়েকে সেভাবে গড়ে তুলেছি। এভাবে ওইদিনও যখন সে বিপদে পড়েছে, বা কোনও ডিসিশন নিতে হবে ভেবেছে, তখন আমাকে জানাতে ফোন করেছে। আমার কষ্টের বিষয় ওই মুহূর্তে আমি কলটা ধরতে পারিনি। যদি সে সময় কলটি ধরতে পারতাম, তাহলে হয়তো এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতো না। আমার একটাই চাওয়া, আমি যেটা হারিয়েছি, এটা যেন আর কোনও বাবা-মা কখনও না হারান। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, দিহানের এই পথে যাওয়ার পেছনে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের দাবি মেনে নিতে হবে। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘যৌন নিপীড়ন অভিযোগ সেল’ গঠন করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে। ময়নাতদন্তে চিকিৎসক বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি’। কিন্তু শিক্ষার্থীর মায়ের দেখানো একটি ছবিতে দেখা গেছে, পিঠে কালশিটে দাগ রয়েছে, যা ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৩ দফা দাবি উত্থাপন হয়। দাবিগুলো হচ্ছে যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে সাইবারের মাধ্যমে ব্যবহৃত ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র শিশু-কিশোর ও তরুণের মানসিক বিকাশের উপযোগী সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, খেলাধুলার সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং ধর্ষণ, যৌন অপরাধের ঘটনা প্রতিরোধে পাঠ্যসূচিতে যৌন ও প্রজনন শিক্ষার বিষয়ে অন্তর্ভুক্তকরণসহ এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিমা মুসলেম, ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মাহাতাব নেছা, ঢাকা মহানগর মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনুস প্রমুখ। এছাড়া ঘটনার শিকার ওই শিক্ষার্থীর চার সহপাঠী উপস্থিত ছিলেন।
দিহান যৌনশক্তি বর্ধক ওষুধ খেয়েছিলেন কিনা পরীক্ষার অনুমতি : ও লেভেল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলার আসামি ইফতেখার ফারদিন দিহান যৌনশক্তি বর্ধক কোনো ওষুধ ও মাদক সেবন করেছিলেন কি-না তা পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ইয়াসমিন আরা এ আদেশ দেন। এদিন আদালতে এ সংক্রান্ত পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান।
আবেদনে বলা হয়, দিহান ধর্ষণকালে কোনো যৌনশক্তি বর্ধক ওষুধ সেবন করেছিলেন কি না এবং সেবন করলে কোনো ধরনের ওষুধ সেবন করেছিলেন তা দিহানের রক্ত থেকে নমুনা সংগ্রহপূর্বক পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া প্রয়োজন। এছাড়া তিনি মাদক সেবন করেছিলেন কিনা, তার জন্য ডোপ টেস্ট প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত আবেদন দুটি মঞ্জুর করে আদেশ দেন। নারী ও শিশু আদালতে কলাবাগান থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা স্বপন কুমার এ তথ্য জানান। এর আগে গত ১০ জানুয়ারি ডিএনএ টেস্ট এবং জব্দ করা আলামত পরীক্ষার আবেদন করলে একই আদালত তা মঞ্জুর করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Ali Ranju ১৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:০৮ এএম says : 0
পর্নোগ্রাফি এখন যুবক-যুবতীদের একটি শিল্প হয়েগেছে। পতিটা ইসলামিক দেশে পর্ণোগ্রাফি সাইট বন্ধ, তবে অনেক বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখছে কিশোর কিশোরী। এগুলা দায় একমাএ প্রযুক্তি , এই প্রযুক্তি যা আমাদেরকে দিয়েছে তার চেয়ে বেশি নিয়েছে। এই থেকে বাহির হতে হলে খেলাধুলার বিকল্প কিছু নেই। ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক প্রতিটা মা-বাবাকে তাদের সন্তানকে বুঝানোর দরকার। এবং পাশাপাশি প্রতিটা সন্তানকে নূরানী শিক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সবাইকে আল্লাহ হেফাজতে রাখুক। এর থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত কিশোর-কিশোরীদের।
Total Reply(0)
AR Mithu Miah ১৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:১০ এএম says : 0
আসুন আমরা সবাই সতর্ক হই, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলি
Total Reply(0)
নিয়ামুল ১৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:১০ এএম says : 0
আমরাও চাই দ্রুত বিচার আইনে ন্যায়বিচার
Total Reply(0)
Misba Uddin ১৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:১৩ এএম says : 0
এখনই সময় প্রত্যেক বাবা মা'র সতর্কতা অবলম্বন করার
Total Reply(0)
Dilwar Husain ১৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:১৪ এএম says : 0
আগামীর ভয়াবহ এক রোগে পরিনত হতে যাচ্ছে এই পর্নগ্রাফি!
Total Reply(0)
অলিউল্লাহ ১৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১১:৩৪ এএম says : 0
সবার আগে ইসলামের পরদার বধান চালু করুন ইনশাআল্লাহ ৯৫% ধরশন বন্ধ হয়ে যাবে।বিশ্বাস না হয় করে দেখুন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন