শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উপকারভোগীরা ভাতার টাকা সরাসরি পাবে : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৭ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার মধ্যস্বত্তভোগীদের দৌরাত্ম হ্রাসকল্পে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বিভিন্ন ভাতার টাকা সরাসরি উপকারভোগীর মোবাইলে প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে ভাতাটা যাকে দিচ্ছি, সেটা যেন সরাসরি সেই মানুষটার হাতে পৌঁছায়। মাঝে যেন আর কেউ না থাকে। অর্থাৎ অর্থটা যাদের প্রয়োজন তারাই পাচ্ছেন এবং তাদের যেভাবে খুশী তারা ব্যবহার করতে পারবেন। এটা করার জন্য সরকার দীর্ঘদিন থেকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, উল্লেখ করে তিনি এ ব্যবস্থা চালুর জন্য সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়, অর্থমন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামাজিক নিরাপত্তাবলয় (এসএসএন)-এর বিভিন্ন ভাতা সরাসরি উপকারভোগীদের মোবাইল ফোনে প্রেরণের উদ্যোগের উদ্বোধনকালে একথা বলেন। এখন থেকে দু’টি শীর্ষ মোবাইল ফাইনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ ও ‘বিকাশ’ এর মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বয়স্ক ভাতা, বিধাবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা সরাসরি উপকাভোগীদের মোবাইল ফোনে প্রেরণ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। এ সময় সমাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সব থেকে বেশি উপকারভোগী জেলাসমূহের মধ্যে চাঁদপুর, পিরোজপুর, লালমনিরহাট ও নেত্রকোণা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল।

পল্লী অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে জাতির পিতাই প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, তিনি পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম, প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত হাসপাতাল করা থেকে শুরু করে সমবায় ভিত্তিক চাষবাষ চালু এবং উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, আমরা যখন বয়স্ক ভাতা চালু করেছিলাম তখন এভাবে চিন্তা করেছিলাম- কেউ কেবল ভাতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়–ক সেটা আমরা চাইনি। ভাতা পাবে কিন্তু যাদের কর্মক্ষমতা রয়েছে তারা কিছু কাজও করবেন। একেবারে ঘরে বসে থাকবেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে সে সময়ে অন্তত ১০ কেজি চাল ক্রয়ের সামর্থ অর্জনে ১শ’ টাকা করে ভাতার প্রচলন করা হয়। যা বর্তমানে ৫শ’ টাকা হয়েছে এবং ভাতাপ্রাপ্ত জনগণের সংখ্যাও অনেক বৃদ্ধি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্যটা হচ্ছে দেশের কোন মানুষ যেন নিজেকে অপাংক্তেয় মনে না করে এবং এর মাধ্যমে প্রত্যেকের প্রতি রাষ্ট্রের যে কর্তব্য রয়েছে সেটাই আমরা করতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি যেদিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম শপথ নিয়েছিলাম সেদিনই বলেছিলাম দেশের সেবক হিসেবে কাজ করবো। প্রধানমন্ত্রীত্ব আমার কাছে আর কিছু না কেবল কাজের সুযোগ কাজের ক্ষমতাটার প্রাপ্তি। তাকে বার বার ভোটে নির্বাচিত করায় দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা পুণর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের জন্য কাজ করবো, মানুষের সেবা করবো। আমার সরকার মানে মানুষের সেবক। সেই সেবক হিসেবেই কাজ করতে চাই।

অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমদ বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.জয়নুল বারী স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। ইতোমধ্যে ভাতাভোগীদের ডাটাবেইজ তৈরি করা হয়েছে। কর্মসূচির আওতায় মোট ৮৮ লাখ ৫০ হাজার বিভিন্ন ভাতাভোগী-শিক্ষা উপবৃত্তি ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৬৯ লাখ জনের তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যেই সকল ভাতাভোগীকে ইলেক্ট্রোনিক পদ্ধতিতে ভাতা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার ক্লান্ত হওয়া চলবে না, ঘুমালে চলবে না, মাইলের পর মাইল পারি দিয়ে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতেই হবে- আর সেই লক্ষ্যটা হচ্ছে এ দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। যে স্বপ্ন দেখেছিলেন আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নিজের জীবনটাকে যিনি উৎসর্গ করেছিলেন এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য, বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে এভাবে ভালবাসার শিক্ষাটা তিনি পিতার কাছ থেকেই পেয়েছিলেন। কারণ, তাঁদের পরিবার নয়, দেশের মানুষই জাতির পিতার কাছে সব থেকে বড় ছিল। যেজন্য মাত্র ৫৪ বছর বয়েসেই তিনি একবার করলেন পাকিস্তান সৃষ্টির আন্দোলন এবং এরপর লড়লেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য।
’৮১ সালে দেশে ফেরার পর মানুষের দুর্দশার যে চিত্র তিনি দেখেছিলেন তা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, মানুষের পেটে খাবার ছিল না, বিদেশ থেকে পুরনো কাপড় এনে মানুষকে পড়তে দেয়া হোত, তাও অনেকে পেতনা। দিনের পর দিন দুর্ভিক্ষ চলেছে, মানুষের সারি দেখে মনে হোত যেন জীবন্ত কঙ্কাল- এই ধরনের একটা পরিবেশ আমার নিজের চোখেই দেখা।
প্রধানমন্ত্রী সে সময় মাইলের পর মাইল হেঁটে বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর স্মৃতিচারণ করে বলেন, তখন থেকেই এই চিন্তাটা ছিল, কি করবো- ক্ষমতায় গেলে?

কাজেই ’৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় গিয়েই দেশের বয়োবৃদ্ধ, স্বামী পরিত্যক্তা এবং পরবর্তিতে প্রতিবন্ধী এবং সে সময়ে সব থেকে অবহেলায় থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করি, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের জায়গা বাপের বাড়ি বা স্বামীর বাড়িতে না হওয়ায় ভাগ্য অন্বেষণে এসে অনেকেরই পতিতালয়ে ঠিকানা হয়। আর ছেলে-মেয়েগুলো ভবঘুরে বা পথশিশু হয়ে যায়। কাজেই হাতে কিছু টাকা রেখে পরিবার ও সমাজে যেন তারা বেঁচে থাকতে পারেন এবং নানা সামাজিক অবিচার থেকে অসহায় দরিদ্রদের রক্ষার জন্যই তাঁর সরকার নানারকম ভাতার প্রচলন করেছে।

লালমনিরহাটে বিমান তৈরি করা হবে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, লালমনিরহাটে প্লেন তৈরি করবো, কোনো চিন্তা নেই। এভিয়েশন ও এরোস্পেস ইউনিভার্সিটি হলে পুরো এলাকার চিত্র পাল্টে যাবে। লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম এসব এলাকা এক সময় খুবই অবহেলিত ছিল। এ কারণে লালমনিরহাটে এভিয়েশন ও এরোস্পেস ইউনিভার্সিটি তৈরি হচ্ছে। এই একটি প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে আরও ভালো ভালো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। এছাড়া কুড়িগ্রামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
অমিত ১৫ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:১৯ এএম says : 0
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই
Total Reply(0)
সবুজ ১৫ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৫৩ এএম says : 0
শেখ হাসিনার মত যদি অন্যরাও মানুষ ও দেশের কথা ভাবতে তাহলে দেশ অনেক আগেই সোনার বাংলা হয়ে যেতো।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন