শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

একযুগের স্মৃতি তাড়িত রোচ

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৬ এএম

টেস্ট অভিষেকের মুহূর্তটি প্রায় প্রত্যেক ক্রিকেটারের কাছে অবিস্মরণীয় স্মৃতি হয়ে থাকে। সময়ে সময়ে তাতে ডুব দিয়ে অন্য কোনো সুখের ভুবনে যেন হারিয়ে যাওয়া যায়! কেমার রোচের ক্ষেত্রেও অভিজ্ঞতাটা ব্যতিক্রম নয়। এক যুগ আগের ঘটনাটা মনে করিয়ে দিতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই পেসারের মুখে ফুটল হাসি। জানালেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে ‘স্পেশাল’ অনুভ‚তি হয় তার। কেন? ২০০৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ডানহাতি রোচের। কিংসটাউনে ওই ম্যাচে ৬ উইকেট শিকার করেন তিনি। তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে সাদা পোশাকে খেলতে নামলে, এখনও অন্তরে বাড়তি উন্মাদনা-উত্তেজনা কাজ করে তার। কাকতালীয়ভাবে তার পরের ঘটনা মনে করে মিল পেলেও কিছুটা অস্বস্তিতে ভোগেন এই পেস তারকা।

প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও মূল ঘটনা কিন্তু একই। বেতন নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে দেশের মাটিতে খেলেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের মূল দলের ক্রিকেটাররা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এবার বাংলাদেশ সফরে আসেননি গুরুত্বপূর্ণ অনেক খেলোয়াড়ই। এক যুগের ব্যবধানে আবার বাংলাদেশের মুখোমুখি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেবার কেমার রোচ ছিলেন তরুণ গতিময় এক পেসার, এখন তিনি টেস্টে ক্যারিবিয়ানদের বড় এক অস্ত্র। ২০০৯ সালের সেই সিরিজের সঙ্গে এবারের সিরিজের বেশ মিল দেখছেন রোচ।

২০০৯ সালে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশে পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে এসে ২০১৮ সালে হেরেছে ওয়ানডে সিরিজ, টেস্টে হয়েছে হোয়াইটওয়াশ। এবারও যে কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে বেশ ভালোভাবেই অনুভব করতে পারছেন রোচ। বাংরাদেশ দলের বিরতি থাকায় গতকাল মিরপুরে জাতীয় ক্রিকেটে একাডেমি মাঠে পুরো সময়জুড়েই অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছে উইন্ডিজ। তারই ফাঁকে ৩২ বছর বয়সী পেসার জানান, এবার বাংলাদেশে এসে এক যুগের আগের সেই সিরিজের কথাই মনে পড়ছে তার, ‘তখন আমিও বেশ অনভিজ্ঞ ছিলাম। ছেলেরা তখন বেশ চাপে ছিল ভালো করার জন্য কিন্তু তারা পারেনি। আমাদের বেশিরভাগের জন্যই সেই সিরিজ বড় একটা শিক্ষা ছিল। আর এবার এটা আমাদের জন্য দ্বিতীয়বার একই পরিস্থিতি হয়েছে। গ্রুপ হিসেবে, দল হিসেবে আমাদের কি করতে হবে এর ভালো পারিকল্পনা করেছি আমরা। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ভালো আলাপ হচ্ছে, আজকে এবং গতকালকে তাদের দেখে ভালোই মনে হচ্ছে। আশা করছি ভালো প্রস্তুতি নিয়েই আমরা টেস্ট সিরিজ শুরু করব।’

টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষেই রেকর্ড সবচেয়ে ভালো রোচের। ৮ টেস্টে ১৯.৭৮ গড়ে নিয়েছেন ৩৩ উইকেট। স্ট্রাইক রেট ৪১.৩। তবে বাংলাদেশের মাটিতে রেকর্ড অতটা উজ্জ্বল নয়। ৩ টেস্টে পেয়েছেন কেবল ৪ উইকেট। গড় ৫৯, স্ট্রাইক রেট ৯৮। ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে কতটা সংগ্রাম করতে হবে ভালো করেই জানেন রোচ। তবে একই সঙ্গে বিশ্বাস করেন, ভালো একটি পরিকল্পনা এবং এর যথাযথ বাস্তবায়নে পাল্টাতে পারে পরিস্থিতি, ‘সবাই জানি বাংলাদেশ সবসময় পেসারদের জন্য কঠিন। যদি ভালো পরিকল্পনা করতে পারি, ভালো জায়গায় বল করতে পারি তা আমাদের জন্য সহায়ক হবে। এসব ঠিকমতো করতে পারলে আমি মনে করি, আমরা সিরিজে ভালো করতে পারব। বাংলাদেশের বিপক্ষেই টেস্টে আমার শুরু হয়েছিল, অবশ্য সেটা ঘরের মাঠে ছিল। কিন্তু বেশ কয়েকবারই বাংলাদেশে আসা হয়েছে। ওয়ানডে ও টেস্ট খেলেছি এখানে। এটা সবসময় আমাকে বিশ্বাস জোগায় মানসিকভাবে। তারা খুব কঠিন প্রতিপক্ষ। দল হিসেবে তারা গড়ে উঠেছে।’

টেস্টে পেস বোলিং আক্রমণে রোচের সঙ্গে আছেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও আলজারি জোসেফ। মরা উইকেটেও ব্যাটসম্যানদের ভোগানোর সামর্থ্য তাদের আছে। রোচ মনে করছেন, মূল কাজটা করতে হবে স্পিনারদেরই। তারা যতটা সম্ভব সহায়তা দিয়ে যাবেন, ‘বোলিং ইউনিটের সাফল্যের জন্য দলীয় প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে। আর সেরকমটা হলে আমাদের বোলিং ইউনিট ভালোভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবে। আমরা ভালো পরিকল্পনা করছি, বোলিং কোচের সাথে কথা হচ্ছে, নিজেদের মধ্যেও আলাপ আলোচনা করছি। আমরা জানি, আমাদের কি করতে হবে।’
শুধু নিজেদের নিয়েই নয়, তার ভাবনাজুড়ে আছে প্রতিপক্ষের শক্তি-সামর্থ্যও। বাংলাদেশ স্কোয়াডের দিকে তাকিয়ে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ দেখছেন রোচ। বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে বিপদের কারণ মনে করছেন ৩২ বছর বয়সী রোচ। তবে প্রতিপক্ষকে নিয়ে মাথা ঘামিয়ে বাড়তি চাপে না পড়ে অনভিজ্ঞ দল নিয়েই সেরাটা নিংড়ে দেওয়ার চাওয়া তার, ‘আমার মতে, তারা বেশ ভালো দল। তামিম রয়েছে। সে খুবই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। সাকিব ফিরে এসেছে। মুশফিকুর বরাবরই একজন ভালো ব্যাটসম্যান। মাহমুদউল্লাহও। তাদের দলে বড় বড় কিছু নাম রয়েছে। কিন্তু আমি যা বলতে চাই তা হলো, আমরা কেবল নিজেদের দিকে ফোকাস রাখছি। আর মাঠে যা করার, সেটাই করব।’
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে দুদলের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২০ ও ২২ জানুয়ারি। সিরিজের শেষ ওয়ানডে মাঠে গড়াবে ২৫ জানুয়ারি। ওই ম্যাচের ভেন্যু চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। একই ভেন্যুতে সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু হবে ৩ ফেব্রুয়ারি। আর ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় টেস্ট মাঠে গড়াবে মিরপুরে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন