বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবে বাড়ছে জিনা-ব্যভিচার : জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

ধর্মীয় মূল্যবোধকে পাশ কাটিয়ে কোনো মুসলিম জনগোষ্ঠীর সফলতা প্রাপ্তির নজির ইতিহাসে বিরল। ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণেই সমাজে যিনা-ব্যভিচার দিন দিন বাড়ছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের সার্বিক কল্যাণ ও সফলতার একমাত্র পথ সর্ব অবস্থায় আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করা। এটাই ইসলামের নির্দেশনা এবং আখিরাতে সফলতার মাধ্যম। আজ রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম ও খতিবরা এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নগরীর মসজিদগুলোতে উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়। মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি এহসানুল হক জিলানী আজ জুমার খুৎবার বয়ানে বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীবাসীকে বিপর্যয়, অশান্তি, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও খুন ইত্যাদি অন্যায় অপরাধ থেকে মুক্ত করে একটা শান্ত নিরাপদ বিশ্ব বানানোর জন্য তাশরীফ এনেছেন। যেমন আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন ‘নবিজী আমি আপনাকে সমস্ত জাহানের রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি’। আর আল্লাহ তায়ালা কারো ওপর জুলুম করেন না এবং তার বান্দাদের মধ্যে কেউ কারো ওপর জুলুম করাও তিনি অপছন্দ করেন। এজন্যেই তিনি যারা জমিনে ফেতনা-ফাসাদ জুলুম করে তাদের দুনিয়ায় লাঞ্ছনা আখেরাতে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন।

পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং জমিনের মধ্যে ধ্বংসাত্মক কার্যকরে বেড়ায় তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কৃত করা হবে। এটা হলো তাদের দুনিয়ায় লাঞ্ছনা আর আখিরাতে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি’। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ‘যে ব্যক্তি সন্ত্রাস বা লুটতরাজ ও ডাকাতি করবে সে আমার দলভুক্ত নয়’। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই ধরনের অন্যায়মূলক কার্যকলাপ থেকে হেফাযত করুন। আমীন!

চকবাজার শাহী মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি মিনহাজ উদ্দিন জুমা পূর্ব বয়ানে বলেন, পবিত্র কালামে পাকে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, হে মুমিনগণ! তোমাদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি স্বীয় ধর্ম হতে বিচ্যুত হবে, (এতে ইসলামের কোনো ক্ষতি নেই, কেননা) আল্লাহ সত্তবরই (তাদের স্থলে) এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন যাদেরকে আল্লাহ ভালোবাসবেন এবং তারাও আল্লাহকে ভালোবাসবে। সূরা মায়েদা ৫৪।
পেশ ইমাম বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। মিশকাত হাদিস নং ৪৩৭৪। ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণেই সমাজে যিনা-ব্যভিচার দিন দিন বাড়ছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ পাশ কাটিয়ে কোনো মুসলিম জনগোষ্ঠীর সফলতা প্রাপ্তির নজির ইতিহাসে বিরল। মুসলিম সম্প্রদায়ের সার্বিক কল্যাণ ও সফলতার একমাত্র পথ সর্ব অবস্থায় আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করা। এটাই ইসলামের নির্দেশনা এবং আখিরাতে সফলতার মাধ্যম। পেশ ইমাম বলেন, সম্প্রতিকালে ভিন্ন ধর্মের ভিন্ন আদর্শের কিছু ধর্মীয় রীতিনীতিকে মুসলিম সমাজে চালিয়ে দেয়ার প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যাতে করে মুসলিম প্রজন্মের ভবিষ্যৎ মারাত্মক হুমকির মুখে পতিত। অসন্তুষ্টি পথ পরিত্যাগে আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন!

ঢাকার চকবাজার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বক্তব্যে বলেছেন, মুসলিম নর-নারী, যুবক-যুবতী প্রত্যেকই যখন নিজেকে ঈমানী রঙ্গে রঙিন করতে সক্ষম হবে তখনই অনাচার ও অপরাধ প্রবণতার রাহুগ্রাস থেকে সমাজ মুক্ত হবে। শুধু আইন করে কিংবা থানা-পুলিশের ভয় দেখিয়ে এটা সম্ভব নয়। কেবলমাত্র গন্তব্যস্থান ঠিক করাই যথেষ্ট নয়, গন্তব্যে পৌঁছার নিশ্চিত ও নিরাপদ পথ আবিষ্কার করাও জরুরি। সর্বক্ষেত্রে পশ্চিমাদের অনুসরণ এবং শিক্ষার্থী সন্তানদেরকে ইসলাম ধর্মীয় মৌলিক শিক্ষা দানে সীমাহীন শৈথিল্য প্রদর্শন আমাদেরকে যে আজ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমরা যদি তা বুঝেও না বুঝার অভিনয় করি তাহলে পরিণতি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। হাদীস শরীফে যেখানে সাত বছর বয়সেই সন্তানদেরকে নামাজের আদেশ দিতে বলা হয়েছে, সেখানে আমরা প্রাপ্ত বয়স্কদেরকেও নামাজ ও মসজিদমুখী করার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছি না। অথচ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা দিয়েছেন ‘নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে’ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বাধ্যতামূলক এই ইসলামী বিধান মূলতঃ মানবচরিত্র সংশোধনের একটি কার্যকর ব্যবস্থাপত্র। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যে নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে নামাজ আদায় করতে আদেশ দিয়েছেন সে আলোকে নামাজ আদায় করতে হবে। শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন!

মিরপুর বাউনিয়াবাদ ই-বøক বাইতুল মা’মুর জামে মসজিদ-এর খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী জুমার খুৎবা পূর্ব আলোচনায় বলেন, মানুষের জীবনে যৌবনকাল একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই অধ্যায়ের সঠিক নিয়ন্ত্রণে একজন মানুষ দুনিয়াতে প্রকৃত মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করত: পরিবারিক ও সামাজিক জীবনে সফলতা বয়ে আনতে পারে। অন্যথায় নিয়ন্ত্রণহীন একজন যুবকের কারণে নেমে আসতে পারে গোটা সমাজে অশান্তি, অরাজকতা ও অন্ধকারের ঘনঘটা। এ জন্যেই যুব সমাজের অধপতনের কারণ অশিক্ষা, কুশিক্ষা, মাদক, অসৎ সঙ্গ, লিভ টুগেদার, বেপর্দা, বিদেশি গান-বাজনা, নৃত্যানুষ্ঠান, নগ্ন-অর্ধনগ্ন নারীর চোখ ধাঁধাঁনো বাহারী ছবি, চিত্তবিনোদনের নামে বানানো সিনেমায় মারামারি ও আজগুবি কাহিনী প্রচার, লজ্জা-শরম ও ধর্মীয় আকিদা বিশ্বাস বিনষ্টকরী ধংসাত্মক কার্যক্রমসমূহ প্রশাসনিক ও সামাজিকভাবে বয়কট করা। এ লক্ষ্যে যুব সমাজের মধ্যে খোদাভীতি, ধর্মীয় অনুভূতি, ধর্মীয় অনুপ্রেরণা ও সুশিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণে দায়িত্বশীলদের প্রত্যেকেরই অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করা।

খতিব আরও বলেন, প্রত্যেকেরই স্মরণ রাখা উচিত ‘কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কোনো আদম সন্তান এক কদমও সামনে অগ্রসর হতে পারবে না। সে তার জীবনকাল কিভাবে অতিবাহিত করেছে, তার যৌবনকাল কোথায় ব্যয় করেছে, ধন-সম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছে, কোন পথে তা ব্যয় করেছে, সে দ্বীনের কতটুকু জ্ঞানার্জন করেছে এবং অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী সে আমল করেছে কি-না’ (তিরমিযী হা/২৪১৭)। আসুন, যুবসমাজকে নৈতিক অধঃপতনের কবল থেকে রক্ষা করে তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা করি। আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমীন!

রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানবজাতির জন্য যিনা ও ব্যভিচারকে অবৈধ ও হারাম করে দিয়েছেন। তাই লজ্জাস্থানকে অবৈধ ও হারাম স্থান থেকে পরিপূর্ণ হেফাজত করতে হবে। পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই তা অশ্লীলতা ও বিপথগামিতা। (আল কোরআন, সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত নং-৩২) তিনি আরো বলেন, এ ছাড়াও একাধিক স্থানে মুমিনের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, ব্যভিচার করে না, বৈধ স্থানে যৌনতা পূরণ করে।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে আরব্য ব্যভিচারীরা! আমি তোমাদের ব্যাপারে সর্বাধিক যে বস্তু দুটির ভয় পাই। তা হলো, ব্যভিচার ও গোপনে প্রবৃত্তি চরিতার্থকরণ। (তিবরানী শরীফ)। পেশ ইমাম বলেন, আজ অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, আমাদের সমাজে যিনা-ব্যভিচার বেড়েই চলছে। অভিভাবকরাও যে দায়িত্ব পালন করার প্রয়োজন সে ভাবে পালন করছেন না। বিধায় আমাদের সন্তানেরা অবৈধ মেলামেশায় লিপ্ত হচ্ছে এবং দুর্ঘটনাও ঘটছে, যা পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে। এর দ্বারা আপনজনসহ প্রত্যেক বিবেকবান মানুষ লজ্জা বোধ করছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Jack+Ali ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৫:২৫ পিএম says : 0
No matter what you say in your Khutbah, only solution is to rule by the Law of Allah then all the Rape/Zina/looting our hard earned tax payers money/ false case, bribery/torture by the security force and they die and also they become disable, enforce disappearing..
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন