শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা

কোনো ব্যবস্থায়ই নিচ্ছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ফি’র চাপে অভিভাবকরা : পরিশোধ করতে না পারলে দেয়া হচ্ছে টিসি

করোনাকালে দীর্ঘ ১০ মাস ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে নতুন বছরে শুরু হয়েছে ভর্তি কার্যক্রম। সন্তানদের ভর্তি করাতে গিয়ে একদিকে গত বছরের মার্চ থেকে বকেয়া টিউশন ফি, অন্যদিকে নতুন শ্রেণিতে ভর্তিসহ বড় অঙ্কের আর্থিক চাপে পড়ছেন অভিভাবকরা। অন্যদিকে কারোনায় অনেক অভিভাবকের আয় কমে যাওয়া, আর্থিক ক্ষতির মধ্যে থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা। এতে টিউশন ও ভর্তি ফি পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন অভিভাবকরা, বাধ্য হয়ে কেউ কেউ নিচ্ছেন টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট), ভর্তি বাতিল করে ঝরে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থীই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে মানবিক হওয়ার আহবান জানালেও সে কথা শুনছে না কেউ। পুনঃভর্তি ফি আদায় না করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) নির্দেশনা জারি করার ফলে সেই ফি বাদ দিয়ে নানা খাত দেখিয়ে আদায় করা করছে টাকা। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, অর্থ না নিলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।

রাজধানীর বনশ্রী ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলে পুনঃভর্তিতে বার্ষিক সেশন চার্জ সাড়ে ৭ হাজার টাকা, ডিজিটাল সার্ভিস ফি ৫০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। একইভাবে টাকা নিচ্ছে বনশ্রী আদর্শ বিদ্যানিকেতন। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকরা বলছেন, করোনায় এমনিতেই আমাদের আর্থিক সঙ্কট চলছে। বেতন কমে গেছে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগের মতোই নানা খাতে অর্থ আদায় করছে। কোন কোন খাতে তা নিচ্ছে সেটিও জানাচ্ছে না। প্রতিবাদ করলে সন্তানদের টিসি দিয়ে দেয়ার হুমকী দিচ্ছে। আর টিসি নিতে গেলেও নেয়া হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। কি কি খাতে টাকা নেয়া হচ্ছে তা না জানিয়ে পুনঃভর্তিতে ৮ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে কেন জানতে বনশ্রী আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ ফরিদ আহম্মদকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
রাজধানীর বর্ণমালা স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুনঃভর্তি ফি না নিলেও টিউশন ফিসহ নানা খাতে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা আদায় করছে। এর মধ্যে ৫ম শ্রেণিতে পুরাতন শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিচ্ছে ৩ হাজার ৭৬৫ টাক, নতুনদের কাছে ৪ হাজার ৪১৫ টাকা। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পুরাতনদের কাছে ৫ হাজার ২৩৫ টাকা আর নতুনদের কাছে ৫ হাজার ৯২৫ টাকা। ৯ম শ্রেণিতে নতুনদের কাছে ৬ হাজার ৫৮০ টাকা, পুরাতনদের কাছে ৫ হাজার ৮৬০ টাকা। ১০ম শ্রেণিতে ৭ হাজার ৩৭৫ টাকা।

অভিভাবকরা বলছেন, করোনাকালে আয় কমে যাওয়ায় এই টাকা তাদের জন্য বাড়তি চাপ। প্রতিষ্ঠানটির প্রভাতী শাখার ইনচার্জ হাসনে ভানু বলেন, ১০০ জনের ওপর আমাদের নন-এমপিও শিক্ষক রয়েছে। তাদেরকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন আদায় করেই অর্থ দিতে হয়। এই অর্থ না নিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।
মনিপুর স্কুল এন্ড কলেজেও এবার পুনঃভর্তি ফি নিচ্ছে না। তবে ১ হাজার ৫০০ টাকা টিউশন ফিসহ ৫ হাজার ২০০ টাকা আদায় করছে। বাকী টাকা কেন নেয়া হচ্ছে অভিভাবকরা জানতে চাইলেও কোন সদুত্তর দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল ফলহাদ হোসেন বলেন, মাউশি যেসব খাতে অর্থ আদায় করতে নিষেধ করেছে সেসব খাতে কোন অর্থ নেয়া হচ্ছে না। মাউশির নির্দেশনা মেনে সেই খাতগুলো উল্লেখ করেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে এসব খাতে টাকা নেয়া হবে না।

এদিকে আর্থিক সঙ্কটের কারণে অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যেসব স্কুলে বছরের শুরুতে ভর্তির জন্য নানামুখী তদিবর হয়, এবার সেসব স্কুলের অবস্থাও ভালো নয়। পুরোনো শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মোবাইলে ফোন করে ভর্তির জন্য অনুরোধ জানালেও তাতে তেমন একটা সাড়া মিলছে না। এক শিক্ষক তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর এক অভিভাবককে ভর্তির বিষয় অবহিত করলে ঐ অভিভাবক শিক্ষককে জানান, সন্তানকে কীভাবে ভর্তি করাব। ওর বাবার চাকরি নেই। বকেয়া টিউশন ফি ও নতুন ভর্তি ফি দেওয়া সম্ভব নয়। এমন অসহায়ত্বের কথা অভিভাবকরা শিক্ষকদের কাছে জানচ্ছেন, বকেয়া টিউশন ফি মওকুফ চাইছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে অনেক অভিভাবক চাকরি হারিয়েছেন। পুঁজি হারিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী অভিভাবক। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি থাকলেও অনেকের বেতন কমেছে। অনেকে চাকরি হারিয়েছে গ্রামে ফিরে গেছেন। ফলে অভিভাবকরা আর্থিক কষ্টে আছেন। এ কারণে স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করাতে পারছেন না।
মনিপুর স্কুলের এক অভিভাবক বলেন, টিউশন ফি কমানোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণায়ের কাছে অভিভাবকেরা যে আবেদন করেছিলেন, তা আমলে নেওয়া হয়নি। এ কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না। করোনায় অভিভাবকদের ক্ষতি হয়, ক্ষতির ভাগ সবাইকে নিতে হবে। এমনকি শিক্ষকদের। গত বছরের ৯ মাসের টিউশন ফি মওকুফ বা অর্ধেক করে দিলেও অভিভাবকরা তার সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী হতেন। না হলে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি জানান, করোনার কারণে অভিভাবকরা ৯ মাস টিউশন ফি দিতে পারেনি। এছাড়া নতুন শ্রেণিতেও ভর্তি হতে টাকা লাগবে। এ কারণে অভিভাবকরা ভর্তি হতে আসছে না। কোনো কোনো অভিভাবক গত বছরের পুরো টিউশন ফি মওকুফের দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষকদের বেতন-ভাতার বিষয়টি বিবেচনায় এনে এটা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি জানান, হাতে গোনা কিছু নামি প্রতিষ্ঠান ছাড়া সারা দেশের চিত্র এটি। ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা করেন এই শিক্ষক নেতা।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, টিউশন ফির বাইরে অন্য কোনো ফি না নেওয়ার জন্য মাউশির পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। করোনাকালে যেনো কোন প্রতিষ্ঠানই অতিরিক্ত অর্থ আদায় না করে সে ব্যাপারে আমরা একটি সস্পষ্ট নোটিশ দিয়েছি। যদি এর কোন ব্যত্যয় হয় তাহলে আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Sourav Datta Dipu ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
ভর্তি ফি ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চালাবো কিভাবে?
Total Reply(0)
SI Nahirul ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
দেশের ইন্টেলিজেন্স এর কাজটা কি?
Total Reply(0)
Md. Esme Azom ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১১ এএম says : 0
আমাদের গ্রামের এক স্কুলে মোবাইল ফোনে ভর্তির তাগিদ করে এস এম এস দিয়ে এক প্রকার জোড় করেই অন লাইনের মাধ্যমে ভর্তি ফি আদায় করে নিচ্ছে এক্ষেত্রে আমার করনীয় কী?
Total Reply(0)
Shamsun Nahar ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১১ এএম says : 0
আমাদের কাছ থেকে তো পুনঃ ভর্তি ফি নিয়ে গেছে
Total Reply(0)
Lota Nimra ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১২ এএম says : 0
কোন নিয়ম কোন বেসরকারি স্কুলে মানা হচ্ছেনা, বিশেস করে ঢাকা শহরে, ভর্তি করতে যেয়ে হিমশিম খাচ্ছে জিম্মি থাকা বাচ্চাদের বাবা মা, সরকারের কঠিন পদক্ষেপ কাম্য, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল, বনফুল আদিবাসি গ্রীন হার্ট স্কুল এন্ড কলেজ এরা বলছে বেসরকারি স্কুলের জন্য এ নিয়ম নয় শুধু এ নিয়ম সরকারি স্কুলের জন্য
Total Reply(0)
Rony Parvez ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১৩ এএম says : 0
আমার ছেলে ক্লাস দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে তৃতীয় শ্রেণীতে উঠেছে এখন একই তৃতীয় শ্রেণীর ভর্তির জন্য ভর্তি ফ্রি অনেক টাক চাচ্ছে।এখন আমি কি করতে পারি।
Total Reply(0)
Md Salahuddin ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১৩ এএম says : 0
পাবনায় ঈমাম গাজ্জালী স্কুল এ্যান্ড কলেজে কোন ছাড় না দিয়ে অষ্টম শ্রেনীতে সেশন ফি ২৫০০ টাকা নিয়েছে। অন্যন্য ক্লাসের কথা বলতে পারছি না। গত বছর করোনায় সারা বছর স্কুল বন্ধ থাকলে ও সারা বছরের বেতন ক্ষমা করেনি।
Total Reply(0)
Din Mohammad ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১:১৪ এএম says : 0
student দের থেকে বেতন ভর্তি ফি ঠিকিই নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলি কিন্তু Teacher দের বেতন খরচ কিছুই দিচ্ছে না এ ব্যাপারে কি করা যায় কর্তৃপক্ষের দৃস্টি আকর্ষণ করছি
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন