শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভারত সফরেও আলোচনায় থাকছে বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : ওবামা প্রশাসনের শেষ সময়ে কেরির সফরে তেমন কোনো চমক থাকার সম্ভাবনা কম। এ কারণে জন কেরির আসন্ন সফরে বাংলাদেশের অর্জনের পাল্লাটা যে খুব ভারী হবে এমনটা মনে করেন না কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তবে মার্কিন-চীন সম্পর্কের বর্তমান টানাপড়েনের কারণে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আর কেরির সফরের সম্পৃক্ততা থাকা অস্বাভাবিক নয় বলে মনে করছেন তারা। অন্যদিকে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, কেরির ভারত সফরেও সেদেশের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনার অন্যতম বিষয় থাকছে বাংলাদেশ।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দায়িত্ব পাবার পর, ভারত-মিয়ানমার সফর করলেও; বাংলাদেশে আসেননি জন কেরি। তবে, আগামী সোমবার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে আসছেন তিনি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও সাবেক কূটনীতিকরা মনে করছেন, এই সফরে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় মার্কিন সহযোগিতা আলোচনার একটি বড় অংশ জুড়ে থাকবে। পাশাপাশি গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন নিয়ে দুই দেশ নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করবে। তবে, ওবামা প্রশাসনের এই শেষ সময়ে কেরির সফরে তেমন কোনো চমক থাকার সম্ভাবনা কম।
২০১২ সালে ৪৮ ঘন্টার জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন হিলারি ক্লিনটন। তারই উত্তরসূরী জন কেরির এই সফর হবে ১২ ঘন্টারও কম সময়ের। এমন একটা সময়ে তিনি বাংলাদেশে আসছেন, যখন দরজায় কড়া নাড়ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। একইসাথে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী চোখ রাঙাচ্ছে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ । আর এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় মার্কিন সহায়তা প্রস্তাব নিয়েও এখনও দু দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো সমঝোতা হয়নি। সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, খুব স্বাভাবিকভাবেই এই সহায়তা প্যাকেজের পাশাপাশি গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার ও বাণিজ্য বিষয়ক আলোচনা বিশেষ গুরুত্ব পাবে জন কেরির সফরে। তবে ওবামা প্রশাসনের শেষ সময়ে এই সফরে বাংলাদেশের অর্জনের পাল্লাটা যে খুব ভারী হবে এমনটা মনে করেন না তারা।
বিশ্লেষকদের কাছে প্রশ্ন ছিলো, আগামী অক্টোবরের চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের সাথে জন কেরির এই আচমকা বাংলাদেশ সফরের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না? তারা বললেন, মার্কিন-চীন সম্পর্কের বর্তমান টানাপড়েনের কারণে শি জিনপিং আর কেরির সফরের সম্পৃক্ততা থাকা অস্বাভাবিক নয়। জন কেরির সফর সংক্ষিপ্ত হলেও নিরাপত্তা, বাণিজ্যসহ নানা বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত যেসব আলোচনা হয়, এই সফরের মধ্য দিয়ে তাতে গতি পাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, কেরির ভারত সফরেও সেদেশের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনার অন্যতম বিষয় থাকছে বাংলাদেশ। প্রসঙ্গত, ভারত মহাসাগর কেন্দ্রিক বিশ্ব রাজনীতিতে ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে দিন-দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। আর এ অঞ্চলের নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারত। ফলে ভারতের মতামত যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহযোগিতা ও সুশাসনসহ নানা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম অংশীদার। তাই মার্কিন সন্ত্রাস দমনসহ নানা ইস্যুতে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এর অংশ হিসেবে জন কেরির আসন্ন ভারত সফরে দেশটির সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠবে বাংলাদেশ।
এদিকে, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব প্রশ্নে মতবিরোধ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে। তবে দু’দেশই চায় বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যে কোনো কারণেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে না পড়ুক। গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্যএশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের ঢাকা সফরে বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে আরও বড় পরিসরে ভারতের সঙ্গে সেসব আলোচনা হবে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরাও।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের মতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার সময় জন কেরির বাংলাদেশ সফরটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সমসাময়িক প্রসঙ্গ হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই গুলশানে জঙ্গি হামলাসহ নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলবেন। এ ছাড়া নির্বাচন, গণতন্ত্র ও সুশাসনের অন্য বিষয়গুলো তিনি জানতে ও বুঝতে চাইবেন। আর ঢাকা থেকে দিল্লি গিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের মূল্যায়ন বোঝার চেষ্টা করবেন।
এছাড়া সাবেক রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন আহমেদও সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন যে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির বাংলাদেশে আসা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এখান থেকে গিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ নিয়ে পরিস্থিতি বুঝতে চেষ্টা করবেন তিনি।
উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে ২৯ আগস্ট ভারতের নয়াদিল্লী যাবেন জন কেরি। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সেখানে অবস্থানকালে দেশটির ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি ৩০ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে দ্বিতীয় কৌশলগত ও বাণিজ্যিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন