শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দক্ষিণাঞ্চলে কিশোর গ্যাং আর মাদকের রমরমা কারবার সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা বিপন্ন

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৪:৩০ পিএম | আপডেট : ৫:৩৯ পিএম, ১৬ জানুয়ারি, ২০২১

দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে কিশোর গ্যাং-এর সাথে মাদকের রমরমা কারবার সুস্থ্য সমাজ ব্যবস্থাকে বিপন্ন করে তুলেছে। ২০১৯-এ বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাত হত্যার ঘটনার পরে দক্ষিণাঞ্চলের পুলিশ যথেষ্ঠ নড়েচড়ে বসলে কিশোর গ্যাং কিছুটা স্থবির হলেও বছর ঘোরার আগেই তারা অবস্থান আরো মজবুত করতে সক্ষম হয়েছে। আর প্রতিটি কিশোর গ্যাং-এর সাথেই রয়েছে মাদকের অবৈধ ব্যবসা। এমনকি পুরো দক্ষিণাঞ্চল যুড়েই যে মাদকের ব্যবসা চলছে তার সাথে কিশোর গ্যাং-এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগসূত্র রয়েছে। এ অঞ্চলে যুব সমাজ থেকে কিশোররাও ক্রমাগত নেশার রাজ্যে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে। বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের কিছু উপজেলা পর্যায়েও অনেক স্কুলগামী কিশোররা ধুমপান সহ ইয়াবা’র মত নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। এদের অনেকেই নিজ নিজ এলাকার নিয়ন্তা হয়ে উঠেছে। অথচ এদের অনেকরই তেমন কোন রাজনৈতিক তকমা না থাকলেও তারা নিজ এলাকার ভাগ্য নিয়ন্তা। 

তবে অনেক এলাকাতেই আবার ক্ষমতাশীন দলের একাধীক নেতা মাদকের ব্যাবসা নিয়ন্ত্রনের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর এসব মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রনের জন্যই বরগুনার ‘নয়ন বন্ড’র মত অনেক গ্যাংই প্রভাবশালীদের তত্বাবধানে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন শহরে সক্রীয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, আইনÑশৃংখলা বাহিনীকে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রনে অতিমাত্রায় ব্যস্ত থাকতে হয় বিধায় দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে কিশোর গ্যাং থেকে মাদকের কারবার ক্রমশ ডালপালা ছড়াচ্ছে। সীমান্ত থেকে সড়ক পথে বিভিন্ন যানবাহনে বরিশাল হয়েই ভারতীয় ফেনসিডিল যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়। আর টেকনাফ থেকে সাগর পথে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা ও বরগুনার পাথরঘাটা হয়ে ইয়াবার চালান যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা উপজেলা সহ সারা দেশে। এ অঞ্চলে গাঁজার প্রচলনের সাথে তার আবাদও ক্রমশ বাড়ছে। বাড়ীর ছাদে ও টবে গাছ লাগিয়ে গাঁজা বিক্রীর প্রবনতাও লক্ষ করা যাচ্ছে সম্প্রতি। র‌্যাব প্রায়সই মাদক ব্যবসায়ী ও পাচারকারীদের আটক করছে। পুলিশও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও র‌্যাবের সাফল্য এ ক্ষেত্রে কিছুটা বেশী। তবে এরপরেও মাদকের চালান ও ব্যবহার থামছে না। উপরন্তু এসব মাদকের ব্যবসার সাথে কিশোর গ্যাং-এর উথ¥ান ঘটছে।
বরিশাল মহানগরীরও প্রায় সব এলাকাই কিশোর গ্যাং-এর সাথে ইয়াবা ও গাঁজা বেচাকেনার বাজার সম্প্রসারন ঘটছে। নগরীর অনেক এলাকার সুস্থ্য সামাজিক ব্যবস্থা বিপর্যস্থ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। নগরীর ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন নদীর পাড়ে, বিআইডব্লিউটিএ’র মেরিন ওয়ার্কসপ সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, বঙ্গবন্ধু উদ্যানের হেলিপ্যাড সহ মাঠের অভ্যন্তরভাগ, আমতলা মোড়ের স্বাধিনতা পার্ক, নবগ্রাম রোডÑচৌমহনী সংলগ্ন লেকের পাড় সহ নগরীর অনেক এলাকায়ই সন্ধার পরে ইয়াবার পসরা বসে। এসব স্পটগুলোতে অনেক দুর দুরান্তের কিশোর ও যুবকরা আড্ডাবাজীর সাথে ইয়াবার নেশায় অনেক রাত অবধী হৈ-হুল্লোড় করে বেড়ায়। এদের অনেকেই স্কুল ও কলেজের ছাত্র। কিন্তু তা দেখার কেউ নেই। এসব কিশোর গ্যাং গোটা এলাকার পরিবেশ বিপন্ন করলেও তার কোন প্রতিরোধ নেই।
তবে এসব ক্ষেত্রে উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের কঠোর মানষিকতার থাকলেও মাঠ পর্যায়ে তার প্রতিফলন খুব একটা লক্ষণীয় নয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে কিশোর গ্যাং-এর আধিপত্যের সাথে বিভিন্ন ধরনের মাদকের ভাইরাসও ছড়াচ্ছে বলে উদ্বিগ্ন অভিভাবক সমাজ। এমনকি করোনা মহামারি সংকটের আগে বরিশাল নগরীতে কোচিং সেন্টারে যাতায়তের নামে বিপুল সংখ্যক ছাত্রÑছাত্রীকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আড্ডাবাজিতে বেশী সময় ব্যায় করতে দেখা গেছে। সম্প্রতিককালে কিছু কিছু কোচিং সেন্টার প্রকাশ্যে ও গোপনে চালু হওয়ায় সে পরিস্থিতি আবার দৃশ্যমান হচ্ছে।
এসব বিষয়ে বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান বিপিএম-বার’এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, মাদক সহ কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রনে আমরা বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করছি। এ বিষেয়ে বিএমপি’র জিরো টলারেন্স-এর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কোন ধরনের উদাশীনতাকে বরদাসত করা হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে সমাজের সচেতন মহলকেও সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহবান জানান তিনি। আইনÑশৃংখলার পাশাপাশি আমাদের তরুন ও যুব সমাজকে রক্ষার বিষয়টি নৈতিক ও ঈমানী দায়িত্ব মনে করেই কাজ করার কথা জানান পুলিশ কমিশনার।
বরিশাল মহানগর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট পরিদর্শন সহ মাসিক আইনÑশৃংখলা সভায় পুলিশ কমিশনার সহ উর্ধতন কর্মকর্র্তাগন মাদক ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করছেন। কিন্তু পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হচ্ছে নবওে অভিযোগ নগরবাশীর। এমনকি বিএমপি সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা পাুলিশের অনেক সাফল্য থাকলেও কিশোর গ্যাং’ও মাদক নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে তা অনেকটাই ম্লান বলেও অভিযোগ রয়েছে। নাম না করার শর্তে বিষয়টি পরক্ষোভাবে কোন কোন পুলিশ কর্মকর্তা স্বীকার করলেও এক্ষেত্রে আরো যোড়াল পদক্ষেপ গ্রহনের কথাও জানান তারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন