শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

মতলব আইসিডিডিআরবিতে ১৭দিনে দেড় সহস্রাধিক ডায়রিয়া রোগী

চাঁদপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২১, ৫:৫০ পিএম

ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ থেকে ১২০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চাঁদপুরের মতলব আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। তবে চিকিৎসা-সেবা নিতে এসে কোনো রোগী মারা যায়নি। এমনই তথ্য জানান, মতলব আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল।
মতলব আইসিডিডিআরবির তথ্যানুযায়ী, গত ১ নভেম্বর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১৬দিনে মতলব আইসিডিডিআরবিতে ১ হাজার ৭শ’ ৮৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৩০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে শূন্য থেকে ২ বছর বয়সী ১ হাজার ২শ’ ১৮ জন (৭২%)। ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু ১শ’ ২২ জন (৭.২%), ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে বিভিন্ন বয়সী ৩০৬ জন (১৮%)। গত ১৫ দিনের মধ্যে ৭ নভেম্বর সর্বোচ্চ ১শ’ ৩১ জন রোগী ভর্তি হয়। গত বছরের তুলনায় এ বছর রোগী ভর্তি হয়েছে বেশি। গত ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১৭ দিনে ডায়রিয়া আক্তান্ত রোগী ভর্তি হয়েছিল ১ হাজার ২শ’ ১৯ জন। গড়ে প্রতিদিন ভর্তি হওয়া ৮১ জন। বছরের নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসেই আবহাওয়াজনিত কারণে অর্থাৎ শীতের তাপমাত্রার সাথে সাথে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর পাদুর্ভাব দেখা যায়। হাসপাতাল সূত্র জানায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্য আরো বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হাসপাতালের ৩ টি কক্ষে ধারণ ক্ষমতা ৭০ জন রোগীর। বারান্দাসহ ১৫০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের ৩টি কক্ষই ডায়রিয়া রোগীতে ঠাসা। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বারান্দায় বেড বিছিয়ে রোগীদের চিকিৎসা-সেবা দেওয়া হচ্ছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে চাঁদপুর জেলা সদর, ফরিদগঞ্জ, হাইমচর, হাজীগঞ্জ, কচুয়া, শাহরাস্তি, মতলব উত্তর ও দক্ষিণ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর, কুমিল্লা জেলার বরুড়া, ব্রাহ্মবাড়িয়া, বুড়িচং, চান্দিনা, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা সদর, কুমিল্লা সদর উত্তর, দাউদকান্দি, দেবিদ্বার, হোমনা, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, মুরাদনগর, নাঙ্গলকোট, তিতাশ উপজেলা, কক্স বাজার সদর, ফেনী, কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্ডিয়া, লক্ষীপুর জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি উপজেলা, মুন্সীগঞ্জ জেলা সদর, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ, চাটখিল, সোনাইমুরি, শরীয়তপুর জেলার বেদেরগঞ্জ, নারিয়া ও সখিপুর উপজেলা থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা-সেবা নিচ্ছে। তবে মতলবের ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা খুবই কম। গত ১৫ দিনে চাঁদপুর সদর, হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, কুমিল্লার বরুড়া, লক্ষীপুর সদর উপজেলার রোগী বেশি ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা-সেবা নিতে আসা মুদাফ্ফ গঞ্জ উপজেলার শিশু মারিয়া আক্তারের (৫) মা, চান্দিনা উপজেলার পর্শি করের (১) মা পপি কর ও রায়পুর উপজেলার রাবেয়া আক্তার (১) এর মা রেহানা আক্তার জানান এ হাসপাতালের চিকিৎসা- সেবার মান খুবই ভাল। ডাক্তাররা রোগীদের অতি যত্ন সহকারে সেবা দিচ্ছে। হাসপাতাল থেকে রোগীদের জন্য ওরস্যালাইন, সুজি ও বেবিজিংক ট্যাবলেট সরবরাহ করছে।
আইসিডিডিআরবির সিনিয়র মেডিসিন অফিসার ডা. চন্দ্র শেখর দাস জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি শীতকালীন ডায়রিয়া। ভাইরাসজনিত কারণে, দুষিত খাবার ও দুষিত পানিপান করা, ময়লা মুখে দেওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় শিশুরা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এসব রোগীদের নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে সুস্থ্য করে তুলতে চিকিৎসকরা তাঁদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকেন। প্রতিদিন ৫ জন ডাক্তার, ৬ জন সিনিয়র নার্স, ২০ জন স্বাস্থ্য সহকারী ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা-সেবায় নিয়োজিত থাকেন। ভর্তি হওয়া রোগীদের সুস্থ্য হয়ে ওঠতে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭ দিন সময় লাগে।
শুন্য থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুদের পরিমানমতো খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো, ৭ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের পরিমানমতো খাবার স্যালাইন, একটি করে বেবিজিংক ট্যাবলেট এবং বাড়তি খাবারের মধ্যে সুজি, খিচুরি, ডাবের পানি, চিড়াসহ তরল খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু যদি পানির মতো পাতলা পায়খানা করে, বুকের দুধ টেনে খেতে না পারে এবং অতি মাত্রায় পিপাসা ও জ্বর, ঘনঘন বমি, পায়খানার সাথে রক্ত দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিয়ে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন