একাদশ জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশন এবং চলতি বছরের প্রথম অধিবেশন গতকাল সোমবার বিকেশে শুরু হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ-এর ভাষণ শেষে মূলতবি করা হয়েছে। এই অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের ভাষণের উপর সাধারণ আলোচনা ছাড়াও অধিবেশনে বেশ কয়েকটি বিল পাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে প্রেসিডেন্টের ভাষণ ও করোনা পরিস্থিতির কারণে সংসদ অধিবেশনে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। করোনা নেগেটিভ নিশ্চিত হয়েই সংসদ সদস্যসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংসদ ভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে সংসদ অধিবেশন পরিচালনার জন্য সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিতরা হলেন, মো. নজরুল ইসলাম, আফতাব উদ্দিন সরকার, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও বেগম মমতাজ বেগম।
প্রেসিডেন্টের ভাষণের আগে সংসদ অধিবেশনে সাবেক একজন ডেপুটি স্পিকার, সাবেক একজন মন্ত্রী, সাবেক দুইজন প্রতিমন্ত্রী, সাবেক নয়জন সংসদ-সদস্যদের নামে শোক প্রস্তাব আনা হয়। এছাড়াও দশম অধিবেশনের পর মারা যাওয়া দেশের গণ্যমান্য বিভিন্ন ব্যক্তি এবং করোনা ও দূর্ঘটনায় মৃতদের নামে শোক প্রস্তাব গ্রহণ শেষে তাদের বিদেহী আত্মার মাফফেরাত কামনা করে এক মিনিট নিরাবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়। ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন। এর আগে শোক প্রস্তাব উত্থাপনকালে স্পিকার বলেন, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক প্রকাশ, সকল বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।
শোক প্রস্তাবে যাদের নাম রয়েছে, তারা হলেন- সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন ও মো. খালেদুর রহমান টিটো এবং সাবেক সংসদ সদস্য শাহ-ই-জাহান চৌধুরী, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ আবু হেনা, এম এ হাসেম, অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, দেলোয়ার হোসেন খান, সামসুদ্দীন আহমেদ, নুরজাহান ইয়াসমিন ও অ্যাডভোকেট খালেদা পান্না।
এছাড়া সংসদ সচিবালয়ের কামরা পরিচালক মো. কোরবান আলী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ভাই শহীদ শেখ আবু নাসেরের সহধর্মিণী, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার চাচী, সংসদ-সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও সংসদ-সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের মা এবং সংসদ-সদস্য শেখ তন্ময়ের দাদী শেখ রাজিয়া নাসের, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বড় জা রওশন আরা ওয়াহেদ রানী, ঢাকা-৭ আসনের সংসদ-সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়শা খানম, স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও ভাষা সৈনিক মো. জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া, সাবেক সচিব, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক মনজুরে মওলা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান, একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি আলী যাকের, উপমহাদেশের প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ শাহাদাৎ হোসেন খান, বীর উত্তম ক্যাপ্টেন আকরাম, বিশিষ্ট অভিনেতা আব্দুল কাদের, বিশিষ্ট সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান এবং বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অন্যান্য বছর এই অধিবেশনটি দীর্ঘ হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার অধিবেশন সংক্ষিপ্ত হবে। করোনা ঝুঁকির কারণে আগের অধিবেশনের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরিচালনা হবে। এরআগে মুজিববর্ষ উপলক্ষে আহুত সংসদের বিশেষ অধিবেশনসহ গত ৪টি অধিবেশন স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনা করা হয়। প্রতি কার্যদিবসে ৭০-৮০ জন সংসদ সদস্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। করোনা ঝুঁকি এড়াতে মাঝখানে গ্যাপ দিয়ে দিয়ে আসন বিন্যাস করা হয়। এরআগে গত ১৯ নভেম্বর সংসদের ১০ অধিবেশন শেষ হয়। মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে আহুত গত ৮ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া অধিবেশন ছিলো সংসদের বিশেষ অধিবেশন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন