শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সউদীর নানা শর্তে বিপাকে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো

কফিলরা ফিরিয়ে নিচ্ছে মুখ : টিকিট কিনতে কর্মীরা গলদঘর্ম

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

বৈশ্বিক করোনা মহামারির মাঝে ঢাকাস্থ রাজকীয় সউদী দূতাবাসের কতিপয় শর্তে বিপাকে পড়েছে অধিকাংশ রিক্রুটিং এজেন্সি। কর্মী প্রেরণ প্রক্রিয়া মাসের পর মাস বিলম্বিত হওয়ায় সউদী কফিলরা বাংলাদেশের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এদিকে, বিমানের ওয়ানওয়ে টিকিটের দাম আট থেকে দশ গুণ বেড়ে যাওয়ায় সউদী গমনেচ্ছু কর্মীদের নাভিশ্বাস উঠছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০ জানুয়ারি ঢাকা-রিয়াদ রুটের ওয়ান ওয়ে টিকিট বিক্রি করছে ২ লাখ ৩২ হাজার ৪১০ টাকায়। সাউদিয়া এয়ারলাইন্স একই দিনের ঢাকা-রিয়াদ রুটের ওয়ান ওয়ে টিকিট বিক্রি করছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৯৩ টাকায়। কাতার এয়ারওয়েজ ঢাকা-রিয়াদ রুটের ওয়ান ওয়ে টিকিট বিক্রি করছে ১ লাখ ২৯ হাজার ১৮৭ টাকা। ভিটে-মাটি বিক্রি এবং চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সউদীর রিয়াদ, দাম্মাম ও জেদ্দার ওয়ান ওয়ে টিকিট কিনতে প্রবাসী কর্মীরা গলদঘর্ম।
ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস গত ১৭ জানুয়ারি এক নোটিশে অনুমোদিত সকল রিক্রুটিং এজেন্সিকে তাদের তথ্য হালনাগাদ পূর্বক সাত দিনের মধ্যে দূতাবাসে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তথ্যাদির মধ্যে এজেন্সির মালিক ও ম্যানেজারের অনার্স ডিগ্রীর সার্টিফিকেটের ফটোকপি জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
সউদী-বাংলাদেশ এর মাঝে সম্পর্কিত নয় এমন কিছু শর্তাবলী সউদী দূতাবাস জুড়ে দেয়ায় জনশক্তি রফতানিকারক ও প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। এসব শর্ত বাস্তবায়িত হলে দূতাবাসের তালিকাভুক্ত অধিকাংশ রিক্রুটিং এজেন্সির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। এজেন্সির হাতে প্রক্রিয়াধীন হাজার হাজার ভিসার কর্মীদের বিদেশে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান গতকাল সোমবার এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ভ্রাতৃ-প্রতীম সউদীর সাথে বাংলাদেশের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক বিদ্যমান। চাপিয়ে দেয়া এ সার্কুলারে অনেক শর্তাবলীই অনেক বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। বায়রার সাবেক নেতা বলেন, তিন চার বছর আগেও এ ধরনের সার্কুলার জারি করা হয়েছিল। পরে আলোচনার মাধ্যমে তা রহিত করা হয়। বর্তমানে কোনো সিন্ডিকেট চক্র সউদীর ভিসা সার্ভিস সেন্টারের নামে ড্রপবক্স চালুর জন্য এসব ষড়যন্ত্র করছে কী না তা খতিয়ে দেখতে হবে। নোমান বলেন, বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স প্রদানের সময়ে সরকার কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট চায়নি। সেক্ষেত্রে সউদী দূতাবাস এজেন্সির মালিক ও ম্যানেজারের অনার্স ডিগ্রীর সার্টিফিকেট, অফিসের মালিক ও সকল কর্মচারীর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এবং অফিসের কর্মচারীদের অভিন্ন ইউনিফর্ম থাকার সার্কুলার জারি করেছে তা বোধগম্য নয়। এসব অযৌক্তিক সার্কুলার কার্যকর করা হলে জনশক্তি রফতানির খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে। দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কাছে প্রক্রিয়াধীন হাজার হাজার সউদীর ভিসার কর্মীদের বিদেশযাত্রা অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। এক প্রশ্নের জবাবে বায়রার সাবেক নেতা বলেন, কোনো দেশের জন্যই সউদী সরকার এ ধরনের অযৌক্তিক শর্তারোপ করেনি। তিনি অনতিবিলম্বে রাজকীয় সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের জারিকৃত সার্কুলার প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান। তিনি সৃষ্ট সঙ্কট দ্রুত নিরসনের লক্ষ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর যৌথ উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানান।
বর্তমানে দেশটিতে প্রায় বিশ লাখ পুরুষ-মহিলা গৃহকর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স খাতে এখনও তেজিভাব দেখা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, করোনাকালে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। শুধু আর্থিকভাবেই নয়, করোনাকাল মোকাবিলায় সরকারের মনোবল বৃদ্ধিতেও বড় ভূমিকা রেখেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স।
রেমিট্যান্সের কারণে ব্যাংকে তারল্যের সঙ্কট দূর হয়েছে। এই রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার ফলে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা সহজ হয়েছে। রেমিট্যান্সের টাকায় ছোট ছোট হাজার হাজার উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে। এ রেমিট্যান্সে ভর করে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর এ ছয় মাসে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসেবে, ডিসেম্বর মাসে ২০৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১৫৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার। মহামারির মধ্যেই চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দুই দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল দেশে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
সউদীর শ্রমবাজার নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগে নেয়া না হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই অলিখিতভাবে দেশটি শ্রমবাজার বন্ধ হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে রেমিট্যান্স খাতের ওপর বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক এসব অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
সউদীতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কর্মী প্রেরণে ধ্রুমজাল সৃষ্টি করে একটি সিন্ডিকেট চক্র নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ভিসা সার্ভিস সেন্টারের নামে ড্রপবক্স চালু করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির সত্বাধিকারী এ তথ্য জানিয়েছেন।
রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের মহাসচিবক আরিফুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশস্থ সউদী দূতাবাসে প্রতিটি রিক্রুটিং এজেন্সি সপ্তাহে মাত্র একদিন ২৫টির বেশি পাসপোর্ট জমা দিতে পারে না। পঁচিশটি করে বই জমা দেয়ার পরেও সবকিছু ঠিক থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৭/৮টি পাসপোর্টে ভিসা ইস্যু হচ্ছে মাত্র। তিনি বলেন, বিএমইটি থেকে সউদীগামী কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র পেতেও দু’সপ্তাহ লাগছে। যার ফলে এমন ধীরগতির প্রসেসিংয়ের কারণে সউদী আরব কোম্পানি ও কফিলরা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এবং কর্মীরাও হতাশ হয়ে পড়ছে। তিনি দূতাবাসের জারিকৃত শর্তাবলী শিথিল করার দাবি জানান। তিনি বলেন, যেসব রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ত্রিশ চল্লিশ বছর আগ থেকে দূতাবাসের তালিকাভুক্ত হয়ে সউদীতে কর্মী পাঠাচ্ছেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি রহিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Engineer Ashik ১৯ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:৪৬ এএম says : 2
‌শিক্ষাগতো যোগ‌্যতা থাকা এখন সম‌য়ের দাবী। সরকা‌রের ও উচিত, মূর্খ মানুষ‌দের লাই‌সেন্স বা‌তিল ক‌রে শি‌ক্ষিত‌দের হা‌তে দেয়া। মূর্খরা দেশ জা‌তি, মা মা‌টির শত্রু। সুধু মাত্র ম্যাথ‌রের কাজ ও মা‌টি কাটায় ব‌াধ‌্য করা হোক মূর্খ‌্যদের‌কে।
Total Reply(0)
Md Salim ১৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:১৬ এএম says : 0
আমরা প্রবাসীরা অদক্ষ না অদক্ষ বাংলাদেশ এম্বাসি তে যারা চাকরি করে তারা অদক্ষ যারা শ্রম বাজার পরিচালনা করে তারাই অদক্ষ
Total Reply(0)
আবদুল মান্নান ১৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:১৭ এএম says : 0
সৃষ্ট সঙ্কট দ্রুত নিরসনের লক্ষ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর যৌথ উদ্যোগ নেয়া দরকার
Total Reply(0)
কামাল ১৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:১৭ এএম says : 0
সউদীর শ্রমবাজার নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগে নেয়া দরকার
Total Reply(0)
রায়হান ইসলাম ১৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:১৮ এএম says : 0
এতে রেমিট্যান্স খাতের ওপর বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
Total Reply(0)
Sayed Ahmed ১৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৭:২৯ এএম says : 0
শিক্ষিতদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
Total Reply(0)
MOHAMMED ১৯ মার্চ, ২০২১, ৩:০৮ পিএম says : 0
শিক্ষিতদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।জা করার তারাতাড়ি করা উচিত
Total Reply(0)
MOHAMMED ১৯ মার্চ, ২০২১, ৩:০৯ পিএম says : 0
শিক্ষিতদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।জা করার তারাতাড়ি করা উচিত
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন