শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গণতন্ত্র চর্চা-উন্নয়ন কর্মসূচিতে নিশ্চিত করতে হবে জনগণের অংশগ্রহণ

জাতীয় সংসদে প্রেসিডেন্ট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

সুশাসন, গণতন্ত্র চর্চা ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রায় সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধীদলকেও গঠনমূলক ভ‚মিকা পালন করতে হবে। সরকারিদল ও বিরোধীদল নির্বিশেষে মহান জাতীয় সংসদে যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।

গতকাল সোমবার বছরের প্রথম জাতীয় সংসদ অধিবেশনে (শীতকালীন) ভাষণে প্রেসিডেন্ট এ আহ্বান জানান। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংসদ অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের আগমনের ঘোষণা দিলে সশস্ত্রবাহিনীর একটি বাদক দল বিউগলে ‘ফ্যানফেয়ার’ বাজিয়ে প্রেসিডেন্টকে সম্ভাষণ জানান। সংসদ কক্ষে প্রেসিডেন্ট প্রবেশের পর জাতীয় সংগীত বাজানো হয়।

দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে দল-মতের পার্থক্য ভুলে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বলেন, দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সুশাসন সুসংহতকরণ, গণতন্ত্র চর্চা ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।

সংসদে প্রেসিডেন্টের জন্য স্পিকারের ডান পাশে লাল রঙের চেয়ার সংরক্ষণ করা হয়। এ সময় অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত লিখিত ভাষণের সংক্ষিপ্ত অংশ সংসদে পড়েন। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের ভাষণ দেওয়ার বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী প্রতি বছরের মতো এবারও প্রেসিডেন্ট সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম ও উন্নয়ন তুলে ধরে ভাষণ দেন। প্রেসিডেন্ট ভাষণে বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে দেশ থেকে দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের লক্ষ্যে আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আসুন, দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আমরা লাখো শহিদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি। জাতীয় সংসদ দেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। গণতন্ত্রায়ন, সুশাসন ও নিরবচ্ছিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশা-নির্বিশেষে ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আমি উদাত্ত আহ্বান জানাই।

ভাষণের প্রেসিডেন্ট অর্থনীতি, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, খাদ্য-কৃষি, পরিবেশ-জলবায়ু, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের কার্যক্রম ও সাফল্য তুলে ধরেন। এছাড়া দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন তিনি। প্রেসিডেন্ট বলেন, সরকার সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সব ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। সম্প্রতি সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো সাফল্যের সঙ্গে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে দুই হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ হাজার ৫৪ জন নার্সকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে ১০ হাজার ৫২৫টি সাধারণ বেড, ৬৬৬টি আইসিইউ এবং ৭৩টি ডায়ালাইসিস বেড, ৫৫৪টি ভেন্টিলেটর, ১৩ হাজার ৫১৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ৬৭৮ হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা এবং ৬৩৯টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। করোনা টিকা দ্রুত সরকার দিতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বলেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিকেলস লিমিটেড এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব লাইফ সাইনসেস প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরাসরি ক্রয়ের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় সিএমএসডি’র মাধ্যমে জরুরিভিত্তিতে ভ্যাকসিন ক্রয় বাবদ ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে দেওয়া হয়। আমি আশা করছি সরকার খুব শিগগিরই দেশের জনগণকে করোনা টিকা দিতে পারবে।

আবদুল হামিদ বলেন, সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দক্ষতা ও উৎকর্ষসাধন এবং প্রাজ্ঞ রাজস্বনীতি ও সহায়ক মুদ্রানীতি অনুসরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। গত এক দশকে গড়ে ছয় দশমিক ছয় শতাংশ ও পর পর তিনবছর সাত শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আট দশমিক এক-পাঁচ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির এ ধারাবাহিক অর্জন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। করোনা মহামারিতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক দুই-চার শতাংশে। তবে একইসময়ে মাথাপিছু জাতীয় আয় আট দশমিক এক-দুই শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৪ মার্কিন ডলারে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। আইএমএফ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দারপ্রান্তে। শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হাঁটছি, সে পথেই আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। এ বছর মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। তবে, আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়া। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি কল্যাণমূলক, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সক্ষম হবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
সবুজ ১৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৩৬ এএম says : 0
দেশ থেকে দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের লক্ষ্যে আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
Total Reply(0)
নাবিল আব্দুল্লাহ ১৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৫৬ এএম says : 0
কথাগুলো ভালো বলেছেন। সেগুলোর বাস্তবায়ন দেখতে চাই
Total Reply(0)
salman ১৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৬:১৪ এএম says : 0
সুশাসন, গণতন্ত্র চর্চা ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।Mr.President, ata Nishit korar Dayetto kar? Ata tu Sorkar korbay, tara ki korsay, Korte decche?? স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রায় সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধীদলকেও গঠনমূলক ভ‚মিকা পালন করতে হবে। Mr. President ai sob kora SORKAR er kaj. Ai ............... Sorkar, RASTRER MALIK, JonoGon k tu VOTE e detay decche na, Rastai PROTIBAD O korte decche na, ..................
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন