বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এমওইউ’তে বাধাগ্রস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগ

প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সোহাগ খান : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার কারণে বিনিয়োগে আসছে না ৯৫ হাজার কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এই বিপুল অর্থ আটকে আছে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে করা বাংলাদেশ ব্যাংকের সমঝোতা স্মারকের কারণে। বিনিয়োগ করতে না পারায় এই অর্থ ব্যাংকগুলোর ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে বিনিয়োগ করে আয় করতে পারছে না, অন্যদিকে সুদের বোঝা টানতে হচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলো লোকসানিতে পরিণত হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা।
জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম ইনকিলাবকে বলেন, নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করার ফলে ব্যাংকারদের বেতন দ্বিগুণ হয়েছে। উল্টো এমওইউ’র কারণে ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমেছে। এতে লোকসানি শাখা বেড়েই চলেছে। ‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বাঁচাতে এমওইউ পরিবর্তন জরুরি,’ বলেন আব্দুস সালাম।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম পরিচালিত হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে করা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুযায়ী। এমওইউ’র মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের সীমা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে করা সর্বশেষ এমওইউ অনুযায়ী, বর্তমান বছরে পূর্বের বছর পর্যন্ত মোট বিতরণকৃত ঋণের ১২ শতাংশ ঋণ দিতে পারবে জনতা ব্যাংক, অর্থাৎ ২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটি যদি ১শ কোটি টাকা মোট ঋণ বিতরণ করে, তবে ২০১৬ সালে ১২ কোটি টাকা নতুন ঋণ বিতরণ করতে পারবে। একইভাবে রূপালী ব্যাংক ১৫ শতাংশ, সোনালী ব্যাংক ৬ শতাংশ ও অগ্রণী ব্যাংক ১০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পারবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নিয়মের কারণে জুন ১৬ ভিত্তিক এই চারটি ব্যাংকে অলস অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৫ হাজার ৩শ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের ১৫ হাজার কোটি, জনতা ব্যাংকে রয়ে যাবে ২২ হাজার কোটি, অগ্রণী ব্যাংকে ২৩ হাজার কোটি, সোনালী ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, গত ২-৩ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ছিল না। বর্তমানে বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরে আসার ফলে প্রচুর পরিমাণে বৃহৎ বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকে আসছে, কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমঝোতা স্মারক চুক্তির ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর হাতে অলস অর্থ থাকলেও তা বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না।
মতিঝিলের ব্যাংকপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরে আসায় অসংখ্য বিনিয়োগকারী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ঋণ পাচ্ছেন না। প্রবাসী ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মাদ ময়নাকুঠি হিমাগার করেছেন আমেরিকা থেকে ফিরে, যাতে তিনি নিজে বিনিয়োগ করেছেন ৪৫ কোটি টাকা এবং ব্যাংক সহায়তা নিয়েছেন ২৩ কোটি টাকা। প্রতিবেদককে তিনি বলেন, গত দু’বছর হাতে অর্থ থাকলেও বিনিয়োগ করতে সাহস পাইনি। তিনি জানান, দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরে আসায় গত বছর নভেম্বরে ৭ একর সম্পত্তি কিনেছেন গাজীপুরে চামড়ার কারখানা করবেন বলে। কিন্তু সাত মাস ধরে দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ঘুরেও তিনি কোনো ব্যাংকের সহায়তার আশ্বাস পাননি। কারণ হিসেবে তাকে ব্যাংকগুলো জানিয়েছে সমঝোতা স্মারকের কথা। দুটি ব্যাংকের মাঝে এক ব্যাংকের সমস্যা, একক গ্রাহককে তারা এত বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারবে না, অন্য ব্যাংক ইতোমধ্যেই ১২ ভাগ ঋণ দিয়ে ফেলেছে। তিনি আরও বলেন, দেশে অলস অর্থের পাহাড় জমলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিনিয়োগবান্ধব নয়।
এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক খলিলুর রহমান চৌধুরী এফসিএ ইনকিলাবকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হাত-পা বেঁধে সাগরে সাঁতরাতে বলছে। কিন্তু অলস অর্থের মূল কারণ তাদের সাথে করা ‘জগদ্দল পাথরের’ চুক্তি। অন্তত বেতন বাড়ানোর দিকটা বিবেচনায় এনে এমওইউ সংশোধন করতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রত্যেকটি ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় দ্বিগুণ হয়েছে, কিন্তু মূলধন ঘাটতি সংকটের কারণে ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমে অর্ধেকে এসেছে। সেক্ষেত্রে তারা এমওইউ সংশোধন না করলে ব্যাংকগুলো চলতে পারবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন