শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালিত হয়নি ৪৯ বছরেও

শহীদ আসাদ দিবস

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছিলেন এএম আসাদুজ্জামান আসাদ (শহীদ আসাদ)। বুকের তপ্ত তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিলেন শহীদ আসাদ। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও শহীদ আসাদ দিবসটি জাতীয় মর্যাদা পাচ্ছে না। জাতীয় বা রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে না শহীদ আসাদ দিবস।
যে আসাদ স্বাধীনতার অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সারাদেশে, যে আসাদ স্বাধীনতার ইতিহাসের সূচনা করেছিলেন, সেই আসাদকে ফেলে রাখা হয়েছে ইতিহাসের পিছনে। এই অভিমত শিবপুরের শহীদ আসাদের সমসাময়িক ও অনুসারী রাজনীতিকদের। গতকাল বুধবার শহীদ আসাদের ৫১তম শাহাদাত বার্ষিকীতে বিভিন্ন রাজনীতিগণ এসব অভিমত ব্যক্ত করেন। তারা জানান, হাজার ১৯৬৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তৎকালীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির চেয়ারম্যান মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পাকিস্তানি দমননীতির বিরুদ্ধে দেশের হাটবাজারে হরতাল আহবান করেছিলেন। সেদিন আসাদুজ্জামান আসাদ, তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, মরহুম অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন শাহজাহান, সিদ্দিক মাস্টার, হাসান আলি, মিয়া চান, চেরাগ আলী, আব্দুল হাই প্রমুখ নেতারা একত্রিত হয়ে মনোহরদীর হাতিরদিয়া বাজারে হরতাল পালন করছিলেন। বাজারে বিভিন্ন অলিগলিতে হরতালের পক্ষে পিকেটিং করার সময় পুলিশ বাধা দেয়।
শহীদ আসাদ ও তার অনুসারীরা পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে পিকেটিং চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় পুলিশ তাদেরকে লক্ষ করে গুলিবর্ষণ করলে সিদ্দিক মাস্টার, হাসান আলি, মিয়া চান, চেরাগ আলী নামে ৪ জন নিহত হয়। পুলিশের রাইফেলের আঘাতে মাথায় রক্তাক্ত জখম হয়ে আহত হন শহীদ আসাদ। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন শাহজাহান এবং আহত আসাদ। আসাদ পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে সাইকেল নিয়ে ঘোড়াশাল রেলস্টেশনে চলে যান। সেখান থেকে ট্রেনে রাতেই ঢাকায় পৌঁছেন। আসাদুজ্জামান আসাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন। এই ঘটনা তিনি রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন। পরে এই ঘটনা নিয়েই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন শহীদ আসাদুজ্জামান আসাদ। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মূল ফটকের সামনে পৌঁছার সাথে সাথেই পুলিশ আসাদের বুক লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে। পুলিশের গুলিতে আসাদের বুকের ঠিক মাঝখানে বিদ্ধ হয়। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে প্রাণ ত্যাগ করে আসাদ। এই আসাদের শহীদ হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ঢাকায় ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান ঘটে। যার ফলে তৎকালীন পাকিস্তানের শাসক আইয়ুব সরকারের পতন ঘটে।
আসাদের সেই স্বাধীনতার অগ্নিস্ফুলিঙ্গই জাতীয় মুক্তির সংগ্রামের সূচনা ঘটায়। এরপর আসাদের চেতনায় জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম প্রজাতি ও মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শহীদ আসাদ হাতিরদিয়া বাজারের হরতালে শহীদ সিদ্দিক মাস্টার, হাসান আলি, মিয়াচান ও শহীদ চেরাগ আলীরা পড়ে যায় ইতিহাসের পেছনে। দীর্ঘ ৫৯ বছরেও শহীদ আসাদসহ ৫ জন শহীদ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পায়নি।
গতকাল বুধবার ছিল শহীদ আসাদের গত ৫৯তম শাহাদাত বার্ষিকী। এবছর দিনটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবৃতি দিয়েছেন। এছাড়া ঢাকা, নরসিংদী ও শিবপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন শহীদ আসাদের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। বুধবার সকালে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে নরসিংদী জেলা বিএনপি শহীদ আসাদের মাজারে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। মহাসীন হুসাইন বিদ্যুতের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে নরসিংদী জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদল। তাছাড়া ছাত্রলীগ ঢাকা থেকে আগত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শহীদ আসাদের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন