বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

বিদেশে জমি কিনে ‘কন্ট্র্যাক্ট ফার্মিং’ করতে চায় বাংলাদেশ, কতটা সম্ভব?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৫ এএম

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন বিদেশে কৃষি জমি নেয়া এবং দেশ থেকে সেখানে শ্রমিক নিয়ে চাষাবাদের সুযোগ তৈরির জন্য সরকার চেষ্টা শুরু করেছে। ঢাকায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং অ্যান্ড জব অপরচুনিটি ফর বাংলাদেশ অ্যাব্রোড’ বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে বিদেশে জমি কিনে চাষাবাদ বা কন্ট্রাক্ট ফার্মিং-এর ওপর ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ। জনাব মসিহ সউদী আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন এবং ওআইসিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে আফ্রিকার সুদানেরও দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, বিদেশে বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোতে জমি কিনে চাষাবাদ করতে পারলে এটি খাদ্য নিরাপত্তায় যেমন ভ‚মিকা রাখবে তেমনি বাংলাদেশিদের জন্য কর্মসংস্থানও তৈরি করবে।

কিন্তু কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বলতে কী বোঝানো হচ্ছে? : রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বিবিসিকে বলেন সরকার উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন দেশে কৃষি জমি কিনবে এবং পরে বাংলাদেশ থেকেই শ্রমিকরা গিয়ে সেখানে কাজ করবে ও ফসল ফলাবে। ‘এটি সরকার সরাসরি বা কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও ক্রয় করতে পারে। আর এ জন্য আফ্রিকার দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি উপযোগী। কারণ তাদের প্রচুর কৃষিজমি অনাবাদী পরে আছে। দেশগুলোতে অভাবও অনেক। সুতরাং আমরা জমি নিয়ে চাষাবাদ করলে তারাও কম মূল্যে কিনতে পারবে আবার আমাদেরও কর্মসংস্থান হলো। আবার সেখানকার উৎপাদিত ফসল প্রয়োজনমতো বাংলাদেশেও আনা যাবে’, বলছিলেন জনাব মসিহ।

তিনি বলেন, ২০১০ সালে একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো সরকারের তরফ থেকে এবং একটি টিম বিভিন্ন দেশ সফরও করেছিলো কিন্তু পরে আর তা নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ‘নানা দিক থেকে আফ্রিকার দেশগুলোর সাথে আমাদের কিছু মিল আছে। সেখানে প্রচুর ভারতীয় ও পাকিস্তানী আছে যা বাংলাদেশিদের জন্য সহজ পরিবেশ তৈরিতে ভ‚মিকা রাখবে। আফ্রিকার প্রচুর জমির পাশাপাশি পানি আছে। আবহাওয়াও আমাদের সাথে মিল আছে। এসব মিলিয়ে চিন্তা করলে বাংলাদেশের জন্য দারুণ সুযোগ অপেক্ষা করছে’, বলছিলেন জনাব মসিহ। তিনি জানান, কিছু বাংলাদেশি এখনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে আফ্রিকার নানা দেশে বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি লিজ নিয়ে কাজ করছে।

সরকার সুযোগ খুঁজছে, বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী : ২০১২ সালে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে নিজের সফরের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে সাড়ে ৫ গুণ বড়, কিন্তু ফসল ফলে না এবং যুদ্ধের কারণে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে তারা। তিনি বলেন, ‘সেখানে আমাদের দেশের মতো বৃষ্টি হয় ও মাটি উর্বর। আমি সেখানকার প্রেসিডেন্টকে বলেছিলাম, আপনার জমি আমাদের দিন, আমরা কৃষক আনবো যারা এখানে ফসল ফলাবে। জবাবে প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, দশ হাজার লোকের জন্য জমি বর্গা দিতে রাজি আছেন তারা। কিন্তু তারপর আর বিষয়টি এগোয়নি’। তিনি জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কর্মকর্তারা অনেকগুলো দেশে গেছে কৃষিকাজ দেখার জন্য কিন্তু সেগুলোও বেশি অগ্রসর হয়নি। ‘এখন আমাদের সেখানে বিনিয়োগ করতে হবে। কৃষি জমি নিতে হবে। নিজেদের লোক সেখানে নিতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে সেই সুযোগ তৈরি করা যায়। সুদানের সাথে আলাপ করেছি। কেনিয়া জমি দেবে এমন প্রস্তাব আসছে। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের কোনো টাকাও লাগবে না’।

১০ বছর আগে তানজানিয়ায় শুরু করেছে বাংলাদেশি একটি সংস্থা : কর্মকর্তারা বলেছেন, সরকারি উদ্যোগে না হলেও বেসরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশিরা ইতোমধ্যেই আফ্রিকার নানা দেশে কাজ শুরু করেছেন। বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠান পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান, ভুট্টা ও ডালের আবাদ শুরু করে ২০১১ সালে। তখন যেই চুক্তি হয়েছিলো দু’পক্ষের মধ্যে তাতে সেখানে প্রয়োজনীয় শ্রমিকের ৭০ শতাংশ বাংলাদেশ থেকেই নেয়ার কথা ছিলো। এর আগের বছর থেকেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফ্রিকা বিষয়ক অনুবিভাগ মহাদেশটির বিভিন্ন দেশে বিপুল পরিমাণ পতিত জমিতে আবাদের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে শুরু করে।

কর্মকর্তারা বলছেন, যথাযথ উদ্যোগ নিলে কেনিয়া, উগান্ডা, জাম্বিয়া, সেনেগাল, লাইবেরিয়া, আইভরি কোস্ট এবং গানার মতো দেশগুলোতেও কৃষিজমি নিয়ে চাষাবাদের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তবে রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলছেন, সরকারিভাবে কিছু করার বিষয়টি এখনো ধারণা পর্যায়ে আছে। ‘তবে সরকার ভালোভাবে পর্যালোচনা করে দ্রæত সিদ্ধান্ত নিতে পারলে, এটি বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে বিরাট সুযোগ ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে’, বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Mohammad Anwar Jahid ২২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:৪২ এএম says : 0
উন্নত প্রযুক্তি ও বীজের অভাব সহ সঠিক ভূমি ব্যবস্থার ঘাটতির কারনে দেশের অনেক জমি অনাবাদে পরে আছে সেখানে মনোযোগ দেযার খবর নাই। খবর আছে যেখানে দুর্নীতি ও লুটপাট করা যাবে সেখানকার।
Total Reply(0)
Mehedi Hasan Sohel ২২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:৪৩ এএম says : 0
সেক্ষেত্রে শুধু টাকাই পাচার হবে। বাংলাদেশের উর্বর জমির সর্বোচ্চ ব্যাবহার নিশ্চিত না করেই বিদেশে জমি কেনা ধান্দা ছাড়া আর কিছুই না।
Total Reply(0)
Prince Akbar ২২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:৪৩ এএম says : 0
আমি মনে করি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ এটি।এতে অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।কিন্তু কতটা লাভজনক হবে সেটাই দেখার বিষয়।
Total Reply(0)
Sumon ২২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:৪৩ এএম says : 0
নিজের দেশের কৃষি বিভাগ উন্নতি করতে পারে না , এখনো সেভাবে কোনো সাধারণ কৃষকের কাছে সার এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি পৌঁছে দিতে পারেনাই কিন্তু দেশের বাইরে আগে প্ল্যান না করে নিজের দেশেই যদি কৃষকের সাথে যোগাযোগ করতে পারে তাহলে সেটাই লাভবান হবে বেশি ।
Total Reply(0)
Firoz Alam ২২ জানুয়ারি, ২০২১, ১:৪৪ এএম says : 0
দেশেই উৎপাদিত ফসল দামের অভাবে ফেলে দিতে হয় আর বিদেশে ৷ পারলে বিদেশে সবজি রপ্তানি বাড়াক তাতে কৃষক, দেশ উভয় লাভবান হবে ৷
Total Reply(0)
Azad mullah ২২ জানুয়ারি, ২০২১, ৬:৫৫ পিএম says : 0
সরকারের সহযোগিতায় বেক্তি মালিকের উদ্দেশে কাজ করলে খুব ভাল হবে কিন্তু সরকারের মালিকানা থাকলে শুধু লছ হবে এছাড়া কিন্তু টাকা প্রাচার রূখতে ভালো ব্যবস্থা করা না হলে ত ঘুষ খুর রা ও সরকার দলীয় বাটপার ও দালাল রা দেশের সব টাকা বিদেশে পাচার করে দেশ খালি করে দেবে । এছাড়া লাখ লাখ টন আলু আর পেঁয়াজ যতনের অভাবে নষ্ট করে দিয়ে ভারতের দাসত্ব হতে হয় তার জন্য কি বেবসতা নেওয়া হবে?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন