সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

খাল বন্ধ করে কালনা সেতুর এ্যাপ্রোচ নির্মাণ

২ হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার আশংকা

গোপালগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:২৮ পিএম

গোপালগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাটিয়াপাড়া সেচ ও পানি নিষ্কাশন খাল বন্ধ করে কালনা সেতুর এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। সড়ক বিভাগ ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের অওতায় মধুমতি নদীর ওপর দেশের প্রথম ৬ লেনের কালনা সেতু বাস্তাবায়ন করছে। ওই সেতুর এপ্রোচ সড়ক কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া খাল বন্ধ করে নির্মাণ করায় ৬ গ্রামের ২টি বিলের ২ হাজার হেক্টর ফসলী জমিতে জলাবদ্ধতার আশংকা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা ভাটিয়াপাড়া খালের পানি সরবরাহ ঠিক কালনা সেতুর এ্যাপ্রোচ দাবি জানিয়েছেন।

গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়নবোর্ড ওই খাল বন্ধ না করে খালের ওপর সেতু নির্মাণ করে খালের পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রেখে কালনা সেতুর এ্যাপ্রোচ নির্মাণের জন্য কালনা সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে,কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়ায় পাউবোর সেচ ও নিষ্কাশন খালটি একদিকে ধুসর ও বিলপবনের বিল এবং অন্যদিকে মধুমতি নদীর সাথে একটি পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামোর মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছে। বর্তমানে ‘পশ্চিমাঞ্চলীয় পানি সম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পুরুলিয়া-চরভাটপাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ উপ-প্রকল্পের পুনর্বাসন কর্মসূচীর অধীনে খালটি পুন:খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ না হলে খাল খননের উদ্যোগ সফল হবে না। ব্রিজ নির্মাণ করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা হলে খালের উভয়পাড়ে ৩ হাজার হেক্টর আবাদী জমির কৃষিপণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া ধুসর ও বিলপবনের বিলের পানি নির্গমনসহ এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।

জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি নান্টু শরীফ বলেন, মধুমতি নদীতে কালনা সেতু হচ্ছে। এ সেতুর ৬ লেনের এ্যপ্রোচ সড়ক হচ্ছে ২টি বিলে সেচ ও পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খাল ভাটিয়াপাড়া খাল বন্ধ করে। এ খালের পানি দিয়ে ভাটিয়াপাড়া, বরাশুর, ধুসর, বুধপাশা, রাতইল ও পোনা গ্রামের ধূসর বিল ও বিলপবনের বিলের চাষাবাদ ও সেচ কাজ করে কৃষক। এ খাল দিয়ে বিলের পানি মধুমতি নদীতে ওঠা নামা করে। এখন এ খাল বন্ধ করে কালনা সেতুর এ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ করা হচ্ছে। এমনকি পাইপ লাইনের মাধ্যমে বালু এনে খালের মধ্যে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মজুদ করছেন । এতে ওই দু’ বিলের ২ হাজার হেক্টর ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতার আশংকা দেখা দিয়েছে। অনিশ্চিয়তার মুখে পড়েছে বোরো আবাদ ও সেচ ব্যবস্থা। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরবে। তাই আমরা পানি উন্নয় বোর্ডের চিঠির বাস্তাবায়ন চাচ্ছি।’

বুধপাশা গ্রামের বেলাল হোসেন বলেন, ‘খাল বন্ধ করে সড়ক নির্মাণের কারণে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। শুষ্ক মৌসুমেও বোরো আবাদে সেচ সংকট দেখা দিবে। কোন কোন এলাকায় বসতবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়বে। জলাবদ্ধতার কারণে বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার ফসল ডুবে হাজার হাজার কৃষক অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হবে। দ্রæত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রেখে সড়ক নির্মাণ কাজ করা হোক।’
কৃষক বাবু শরীফ বলেন, ‘খাল ভরাট করে সড়ক নির্মাণ করায় জমিতে পানি আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এমনকি শুষ্ক মৌসুমে বোরো আবাদে সেচ ব্যবস্থাও একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী বছর আর এসব জমিতে চাষাবাদ করা যাবে না। এখনই কোন স্থায়ী উদ্যোগ না নিয়ে আগামীতে এসব এলাকার ফসলি জমিতে বড় ধরণের বিপর্যয় দেখা দেবে।’

খালের তীরবর্তী বরাশুর গ্রামের বাসিন্দা সুফিয়া বেগম (৬০) বলেন, ‘খাল ভরাট করে সড়ক নির্মাণ ও খালের মধ্যে বালুর চাতাল করে সেখানে বালু ফেলার পর থেকে একটু বৃষ্টি হলেই আমাদের বাড়ি-ঘরে পানি উঠে যায়। হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগলের ঘর, রান্না ঘর ও সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায়। আমাদের কষ্টের শেষ থাকে না।’

সাবেক ইউপি সদস্য জাকির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘সওজের উদাসিনতা ও খামখেয়ালিপনা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের স্বার্থন্বেষী মনোভাবের কারণে ব্রিজ নির্মাণের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই আমরা ব্রিজ নির্মাণের জন্য এমপি সাহেবের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম কনস্ট্রাকশনের মহাসড়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জোনায়েদ রাহবার বলেন, ‘বিষয়টি সম্পূর্ণ সওজ ও পাউবোর ওপর নির্ভর করছে। আমরাতো ঠিকাদার। আমাদের যেভাবে নির্দেশ দেবে, আমরা সেভাবে কাজ করবো। তবে দু’বিভাগের বিষয়টি মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গেছে। আমরাও বিষয়টি আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখনও কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি।’
নির্মাণাধীন এপ্রোচ সড়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিপিএম (সওজ) প্রকৌশলী সৈয়দ গিয়াসউদ্দিন জানান, মূল ডিজাইনে ওখানে কোন ব্রিজ বা কালভার্ট নেই। খালটি অনেক আগে থেকে বন্ধ ছিল। কাজ বন্ধ রাখার ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কোন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।
কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘জনগণের দাবিতে ভাটিয়াপাড়া খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। বিষয়টি দু’ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন