শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ব্রিটেনে করোনার তাণ্ডব : চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে হাজার হাজার রেস্তোরাঁ-ক্লাব-পাব : জরিপ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:৩২ পিএম

ব্রিটেনের ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা সংস্থা এলিক্সপার্টনার্স ও সিজিএর এক যৌথ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে গত বছর বৃটেনে প্রায় ১০ হাজারের বেশি পাব, ক্লাব এবং রেস্টুরেন্ট চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে বৃটেনজুড়ে ৯ হাজার ৯৩০টি লাইসেন্স করা পাব, ক্লাব ও রেস্টুরেন্ট চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। বছরের প্রথম অংশের তুলনায় শেষ অর্ধেকে অধিক সংখ্যক ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। মূলত কঠিক লকডাউনের কারণেই এই ধস নামে বলে জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ৩৯.৩ ভেন্যু চিরতরে ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। প্রথম লকডাউনের প্রভাবে এই অবস্থা হয়। এরপরে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে আরেকটা বড় ধাক্কা আসে।
লন্ডনের কাছে কেন্ট কাউন্টির একটি আবাসিক এলাকায় ২৮ বছর ধরে চলছে মিঠু চৌধুরির বাংলাদেশি কারি রেস্তোরাঁ- মোগল ডাইনাস্টি। তিনি ব্রিটেনে বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ সমিতির জেনারেল সেক্রেটারি। করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর অতিথির (কাস্টমারের) সংখ্যা দ্রুত এত কমতে থাকে যে সরকারি নির্দেশনার আগে থেকেই তাকে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিতে হয়।
এ বিষয়ে চরম হতাশা নিয়ে মিঠু বলেন, ‘আমার ৩৪ বছরের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় এমন সঙ্কট আমি আগে কখনো দেখিনি।’ এখন টেক-অ্যাওয়ে অর্থাৎ অনলাইন এবং টেলিফোনে খাবারের অর্ডার নিয়ে মানুষের বাসায় খাবার পৌঁছে দিয়ে রেস্তোরাঁটি চালু রাখার চেষ্টা করছেন তিনি। তিনি জানান, বিক্রি কমে গেছে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ। তার ১৬ জন কর্মীর মধ্যে সাতজন নিয়ে কাজ করছেন। বাকি নয়জন বাড়িতে বসে আছেন। তিনি আরও জানালেন, কারি রেস্তেরাঁ শিল্পে সাপ্লায়ারদের সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে করা এক জরিপে তারা দেখেছেন, কয়েক হাজার রেস্টুরেন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে, যার মধ্যে আছে অনেক বাঙ্গালী রেস্তোরা। তিনি বলেন, ‘সদস্যদের কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে আমাদের বলেছেন, ব্যবসা বন্ধ রেখে ভাড়া গোনা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। অনেকে দরজায় তালা ঝুলিয়ে ভবন মালিকের হাতে চাবি দিয়ে এসেছেন।’
কম-বেশি এমন চিত্র এখন ব্রিটেনজুড়ে হাজার হাজার বাংলাদেশি মালিকানাধীন কারি রেস্তোরাঁয়। লন্ডনের ব্রিক লেন এলাকাটি ব্রিটেনের কারি ক্যাপটাল নামে পরিচিত। সারি সারি বাংলাদেশি খাবারের রেস্তোরাঁর প্রায় সবগুলোতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তালা। দুই-একটি গত কয়েকদিন ধরে সন্ধ্যায় টেক-অ্যাওয়ে সার্ভিস শুরু করেছে।
বার্মিংহামের রাজনগর রেস্তোরাঁর কর্ণধার গোলাম মওলা বলছেন, রেস্তোরাঁ খুলে দেওয়ার পরও তা চলবে কিনা তা নির্ভর করছে সরকার যে সব সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তা হাতে আসে কিনা তার ওপর। তিনি বলেন, ‘আমার দুটো রেস্টেুরেন্টই সবসময় লাভজনক। দুটো ব্যাংকের কাছে লোন চেয়েছিলাম। একটি দিয়েছে, অন্যটি প্রত্যাখ্যান করেছে। আমি তো স্টাফের বেতন কমাতে পারবো না? ভাড়া বছরে ৮০,০০০ পাউন্ড, তা কি কমবে? ট্যাক্স কি কমবে? যে কাস্টমার আগে পেতাম তারা কি সবাই আসবেন?’
লন্ডনের পাশে এসেক্স কাউন্টিতে এভিলি নামে ছোটো একটি গ্রামে গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ‘টেস্ট অব এভিলি’ নামে ৬২টি সিটের একটি মাঝারি আকারের কারি রেস্তোরাঁ চালান ওয়াহিদুর রহমান। রেস্তোরাঁ বন্ধ কিন্তু তিনিও টেক-অ্যাওয়ে সার্ভিস শুরু করেছেন। তিনি জানান, ‘টেক-অ্যাওয়েতে লাভ হয় না। কাস্টমার ভেতরে ঢুকে টেবিলে না বসলে বিক্রি বাড়ে না। তবুও শুধু গ্রামের কাস্টমার ধরে রাখতে টেক-অ্যাওয়ে চালাতে হচ্ছে।’ আট জন স্টাফের চার জনকে বিদায় করে দিয়েছেন তিনি। মি রহমান ভয় পাচ্ছেন, রেস্তোরাঁ খুললেও সহসা মানুষজন আসবেন না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন