বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দক্ষিণাঞ্চলে বন্ধ সরকারি বেসরকারি টেক্সটাইল মিল

তুলা সঙ্কটসহ বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি

বরিশাল ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

তুলা সঙ্কটসহ বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে দক্ষিণাঞ্চলের সরকারী-বেসরকারী প্রায় সবগুলো টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে হাজার হাজার শ্রমিক পরিবারে চরম দূর্দশা নেমে এসেছে। অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে এসব পরিবারগুলো। কোন কোন মিল শ্রমিকরা বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রামকরছেন। মহাসড়ক অবরোধওকরছেন। কিন্তু ফলাফল শূন্য। গত প্রায় বছরখানেক ধরে ভারত তুলা রফতানি বন্ধ রাখায় সুতা উৎপাদনকারী এসব টেক্সটাইল মিল চালু রাখা যাচ্ছে না। মিল মালিকদের মতে, একটি টেক্সটাইল মিলের মূল কাঁচামাল তুলা। ইতোপূর্বে ভারত ছিল বাংলাদেশে তুলার প্রধান যোগানদাতা। কিন্তু করোনা মহামারি শুরু হবার পরে ভারত বাংলাদেশে তুলা রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের অধিকাংশ স্পিনিং মিল ও টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে গেছে। 

দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম বরিশালের বিসিক শিল্প নগরীর প্রায় ২৫ হাজার টাকুর ‘ফাইভ-আর টেক্সটাইল মিল’টি বন্ধ রয়েছে। তুলা সঙ্কটের সাথে বিদ্যুতের অধিক দামে সুতার উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তা বিক্রি করে পুঁজি ফেরত না আসায় ২০১৯-এর শেষভাগে এ মিলটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে এখানের প্রায় হাজারখানেক শ্রমিক সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়েছে। অদূর ভবিষ্যতেও মিলটি চালু হবার কোন সম্ভবনার কথা বলতে পারেন নি মিল মালিক কর্তৃপক্ষ।
একই ব্যবস্থাপনা কতৃপক্ষের বরিশালে রূপাতলী এলাকার ‘সোনারগাঁও টেক্সটাইল মিল’টিও বন্ধ হয়ে গেছে করোনা সঙ্কটের মুখে গত মার্চের শেষভাগে। প্রায় ৩৭ হাজার টাকুর এ মিলটিতে শ্রমিকের সংখা প্রায় ১২ শ। গত মার্চ পর্যন্ত বেতন-ভাতা পরিশোধ করে মিলটি বন্ধ করে দেয় মালিক-কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে শনিবার সোনাারগাঁও টেক্সটাইল মিলের দায়িত্বশীল মহলে আলাপ করা হলে তারা জানান, একটি টেক্সটাইল মিলের প্রধান কাঁচামাল তুলার প্রধান যোগানদাতা ভারত করোনা সঙ্কট শুরুর পনের দিন আগে থেকেই তুলা রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও কোন অবস্থাতেই টেক্সটাইল মিলগুলো সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন একাধিক দায়িত্বশীল মহল।
বরিশালের এদুটি মিল ছাড়াও মাদারীপুরের একমাত্র টেক্সটাইল ও স্পিনিং মিলটি বন্ধ রয়েছে প্রায় দুবছর যাবত। বিটিএমসি’র এ মিলটি ইতোপূর্বে বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয় হলেও সরকারি পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় বছর দুয়েক আগে বিটিএমসি মিলটির দায়িত্ব গ্রহণ করলেও তা আর চালু করেনি উৎপাদন ব্যায় উঠে না আসার আশঙ্কায়। ফলে এখানেও প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক ও আরো প্রায় ৫শ বিভিন্ন স্তরের কর্মচারি বেকার হয়ে পড়েছে। এমনকি মিলটি চালু করারও কোন উদ্যোগ নেই সরকারি পক্ষ থেকে।
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় বেসরকারী খাতে স্থাপিত ‘ফরিদপুর স্পিনিং মিল’টিও বন্ধ আরো কয়েক বছর আগে থেকে। এছাড়াও ফরিদপুরের বিভিন্নস্থানে ছোট ও মাঝারী আরো কয়েকটি সুতা উৎপাদনকারী স্পিনিং মিল বন্ধ হয়ে গেছে।
মূলত গত এক দশকে বিদ্যুতের দাম প্রায় দেড়গুণ বৃদ্ধির পাশাপাশি করোনা সঙ্কট শুরুর পর থেকে ভারত তুলা রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো টেক্সটাইল ও স্পিনিং মিল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ইতোপূর্বে দেশীয় কাপড় কলগুলো স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুতার সাহায্যে উৎপাদন অব্যাহত রাখলেও এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বৈদেশিক মূদ্রা ব্যয় করে আমদানিকৃত সুতার ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে দেশীয় বস্ত্রশিল্প। পাশাপাশি দেশীয় স্পিনিং মিলগুলো বন্ধের কারণে বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার শ্রমিক।
এ পরিস্থিতি উত্তরণে দেশীয় তুলা উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানির বিকল্প উৎস সন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন ওয়াকিবাহল মহল। পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয় বিক্রীত পণ্যের নিচে রাখার লক্ষ্যে বিদ্যুতের মূল্য যুক্তি সঙ্গত পর্যায়ে নির্ধারণেরও দাবি রয়েছে সুতাকল মালিকদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন