শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

প্রচার মাইকের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ পৌরবাসী

নলছিটি পৌরসভা নির্বাচন

ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:৫০ পিএম

দুপুর দুইটার পরেই মাইকে শুরু হয় প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা। চলে টানা রাত ৮টা পর্যন্ত। মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের নানা গুণগান সমৃদ্ধ স্লোগান প্রচার করা হয় মাইকে। কেউ নিজের কণ্ঠেই বলে যাচ্ছেন, কেউ আবার রেকর্ড করা স্লোগান ছেড়ে দিচ্ছেন। এতে এক রকমের অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসবার বাসিন্দারা। আগামী ৩০ জানুয়ারি এ পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গত ১১ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শুরু হয় প্রচারণা।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২৪.১৬ বর্গ কিলোমিটারের পৌরসভায় ৫৫ হাজার মানুষের বসবাস। ভোটার রয়েছেন ২৪ হাজার ১০১ জন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়ও ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪০ ও সংরক্ষি কাউন্সিলর ১৩ জন লড়ছেন। ঠিক দুপুর ২ টার সময় থেকেই প্রার্থীদের সর্মথকেরা মাইকে প্রচারণার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন। অনেক সময় ভিন্ন ভিন্ন প্রার্থীদের একই সড়কে অটোরিকশায় ৭-৮টি প্রচারণার মাইক চলে। জনসাধারণকে শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে ওই সময়টুকু দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরতে দেখা গেছে। শহরের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পথচারীরাও উচ্চ শব্দের যন্ত্রণা ভোগ করছেন। বাসা বাড়িতেও শিশু ও বয়স্কদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মাইকের উচ্চ শব্দ।
শহরের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, শহরে দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতিদিন উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে প্রার্থীদের নানা প্রচারণা চালানো হয়। ফলে রাস্তার পাশে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাসপাতাল, অফিস, ব্যাংক-বিমার দাপ্তরিক কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ এ ‘নীরব’, ‘আবাসিক’, ‘মিশ্র’, ‘বাণিজ্যিক’ ও ‘শিল্প’ এ পাঁচটি এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিধিমালায় নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ডেসিবল ও রাতে ৪০ ডেসিবল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ রাতে ৪৫, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০, রাতে ৫০, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০, রাতে ৬০ ও শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ রাতে ৭০ ডেসিবল শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু নলছিটি পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার মাইকে এ নিয়মন মানা হচ্ছে না। মাইকে সর্বোচ্চ শব্দ দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এতে একদিকে বিরক্তি অন্যদিকে কানে সমস্যা দেখা দিতে পারে জনসাধারণের।
শহরের ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, প্রতিদিন প্রধান সড়ক দিয়ে ৭-৮টি মাইক উচ্চ শব্দে প্রচারণা চালায়। অনেক আবার গান বাজিয়ে প্রার্থীদের নানা স্লোগান দেন। দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মারাতœক যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে। কাউকে বলেও লাভ নেই, এ বিষয়ে কেউই গুরুত্ব দিচ্ছে না।
হাসপাতাল সড়কের বাসিন্দা মোশারেফ হোসেন বলেন, প্রার্থীদের প্রচার মাইক হাসপাতালের সামনে দিয়ে গেলেও থামে না। শব্দ দূষণে আমরাই অতিষ্ঠ, রোগীদের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।
নলছিটি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির ছাত্রী কানিজ ফাতেমা জানায়, মাইকের উচ্চ শব্দের কারণে পড়ালেখায় বিঘœ ঘটছে। সামনে এসএসসি পরীক্ষা দুপুরের পর থেকে শব্দে কান ফেটে যায়।
এ ব্যপারে একাধিক প্রার্থী জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডে কমপক্ষে চারজন কাউন্সিলর প্রার্থী ও দুইজন মেয়র প্রার্থীর প্রচারণা চলছে। কম করে হলেও সাতটি সাইক বিভিন্ন সড়কে প্রচার করছে। শব্দ নিয়ন্ত্রণে রাখার কথা বলা হলেও যিনি মাইকিংয়ের দায়িত্বে থাকেন, তাঁর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে কতটুকো শব্দ ব্যবহার করা হবে। তবে নিয়ন্ত্রিত শব্দ দিয়ে প্রচারণা চালানোর কথা জানিয়েছেন কয়েকজন প্রার্থী।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আবুয়াল হাসান বলেন, নিয়মিত শ্রবণে সাধারণত ৬০ ডেসিবল শব্দের তীব্রতায় মানুষ সাময়িক বধির ও ১০০ ডেসিবল স্থায়ী বধির হয়ে যেতে পারে। মাইকিংয়ের শব্দ মানুষের মস্তিষ্কে আঘাত করে। এতে শ্রবণশক্তি হ্রাস ছাড়াও হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে। তবে শব্দদূষণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। শব্দদূষণ তিন বছর বা তার কম বয়সী শিশুদের মানসিক বিকাশের অন্তরায়।
এ ব্যপারে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, নীতিমালার চেয়েও প্রার্থীদের কাছে ভোটারের পছন্দ অপছন্দ বিবেচনা করতে হবে। উচ্চ শব্দ সবার জন্যই ক্ষতিকর। আমাদের ভ্রাম্যমাণ টিম রয়েছে মাঠে, তাঁরা প্রয়োজনে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
নলছিটি পৌরসভা নির্বাচন
প্রচার মাইকের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ পৌরবাসী
ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা ॥
দুপুর দুইটার পরেই মাইকে শুরু হয় প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা। চলে টানা রাত ৮টা পর্যন্ত। মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের নানা গুণগান সমৃদ্ধ স্লোগান প্রচার করা হয় মাইকে। কেউ নিজের কণ্ঠেই বলে যাচ্ছেন, কেউ আবার রেকর্ড করা স্লোগান ছেড়ে দিচ্ছেন। এতে এক রকমের অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসবার বাসিন্দারা। আগামী ৩০ জানুয়ারি এ পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গত ১১ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শুরু হয় প্রচারণা।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২৪.১৬ বর্গ কিলোমিটারের পৌরসভায় ৫৫ হাজার মানুষের বসবাস। ভোটার রয়েছেন ২৪ হাজার ১০১ জন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়ও ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪০ ও সংরক্ষি কাউন্সিলর ১৩ জন লড়ছেন। ঠিক দুপুর ২ টার সময় থেকেই প্রার্থীদের সর্মথকেরা মাইকে প্রচারণার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন। অনেক সময় ভিন্ন ভিন্ন প্রার্থীদের একই সড়কে অটোরিকশায় ৭-৮টি প্রচারণার মাইক চলে। জনসাধারণকে শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে ওই সময়টুকু দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরতে দেখা গেছে। শহরের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পথচারীরাও উচ্চ শব্দের যন্ত্রণা ভোগ করছেন। বাসা বাড়িতেও শিশু ও বয়স্কদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মাইকের উচ্চ শব্দ।
শহরের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, শহরে দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতিদিন উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে প্রার্থীদের নানা প্রচারণা চালানো হয়। ফলে রাস্তার পাশে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাসপাতাল, অফিস, ব্যাংক-বিমার দাপ্তরিক কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ এ ‘নীরব’, ‘আবাসিক’, ‘মিশ্র’, ‘বাণিজ্যিক’ ও ‘শিল্প’ এ পাঁচটি এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিধিমালায় নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ডেসিবল ও রাতে ৪০ ডেসিবল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ রাতে ৪৫, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০, রাতে ৫০, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০, রাতে ৬০ ও শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ রাতে ৭০ ডেসিবল শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু নলছিটি পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার মাইকে এ নিয়মন মানা হচ্ছে না। মাইকে সর্বোচ্চ শব্দ দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এতে একদিকে বিরক্তি অন্যদিকে কানে সমস্যা দেখা দিতে পারে জনসাধারণের।
শহরের ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, প্রতিদিন প্রধান সড়ক দিয়ে ৭-৮টি মাইক উচ্চ শব্দে প্রচারণা চালায়। অনেক আবার গান বাজিয়ে প্রার্থীদের নানা স্লোগান দেন। দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মারাতœক যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে। কাউকে বলেও লাভ নেই, এ বিষয়ে কেউই গুরুত্ব দিচ্ছে না।
হাসপাতাল সড়কের বাসিন্দা মোশারেফ হোসেন বলেন, প্রার্থীদের প্রচার মাইক হাসপাতালের সামনে দিয়ে গেলেও থামে না। শব্দ দূষণে আমরাই অতিষ্ঠ, রোগীদের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।
নলছিটি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির ছাত্রী কানিজ ফাতেমা জানায়, মাইকের উচ্চ শব্দের কারণে পড়ালেখায় বিঘœ ঘটছে। সামনে এসএসসি পরীক্ষা দুপুরের পর থেকে শব্দে কান ফেটে যায়।
এ ব্যপারে একাধিক প্রার্থী জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডে কমপক্ষে চারজন কাউন্সিলর প্রার্থী ও দুইজন মেয়র প্রার্থীর প্রচারণা চলছে। কম করে হলেও সাতটি সাইক বিভিন্ন সড়কে প্রচার করছে। শব্দ নিয়ন্ত্রণে রাখার কথা বলা হলেও যিনি মাইকিংয়ের দায়িত্বে থাকেন, তাঁর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে কতটুকো শব্দ ব্যবহার করা হবে। তবে নিয়ন্ত্রিত শব্দ দিয়ে প্রচারণা চালানোর কথা জানিয়েছেন কয়েকজন প্রার্থী।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আবুয়াল হাসান বলেন, নিয়মিত শ্রবণে সাধারণত ৬০ ডেসিবল শব্দের তীব্রতায় মানুষ সাময়িক বধির ও ১০০ ডেসিবল স্থায়ী বধির হয়ে যেতে পারে। মাইকিংয়ের শব্দ মানুষের মস্তিষ্কে আঘাত করে। এতে শ্রবণশক্তি হ্রাস ছাড়াও হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে। তবে শব্দদূষণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। শব্দদূষণ তিন বছর বা তার কম বয়সী শিশুদের মানসিক বিকাশের অন্তরায়।
এ ব্যপারে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, নীতিমালার চেয়েও প্রার্থীদের কাছে ভোটারের পছন্দ অপছন্দ বিবেচনা করতে হবে। উচ্চ শব্দ সবার জন্যই ক্ষতিকর। আমাদের ভ্রাম্যমাণ টিম রয়েছে মাঠে, তাঁরা প্রয়োজনে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন