ইলিশপোনা জাটকা এবং সামুদ্রিক মাছের ডিম, লার্ভী ও পোনা রক্ষায় নিষিদ্ধ ঘোষিত বেহুন্দি জাল, কারেন্ট জাল ও ক্ষতিকর মৎস্য আহরন উপকরন সমুহ প্রতিরোধ সহ কার্যকরিভাবে বন্ধে দেশের উপক’লীয় ১৭টি জেলায় ‘বিশেষ কম্বিং অপারেশন’ শুরু হয়েছে সোমবার সকাল থেকে। সপ্তাহব্যপী এ কার্যক্রম চলবে ১ ফেব্রুুয়ারী পর্যন্ত। প্রথম পর্যায়ে গত ১০ জানুয়ারী থেকে ১৬ জানুয়ারী পর্যন্ত উপক’লীয় এলাকায় এ ধরনের অভিযানে বিপুল সংখ্যক কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জাল সহ বিাভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ এবং ক্ষতিকর মৎস্য উপকরন বাজেয়াপ্ত করে মৎস্য অধিদপ্তর।
দেশের ইলিশ সহ সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা এবং তা আরো সমৃদ্ধ করতে জাটকা নিধন বন্ধের পাশাপাশি গত বছরও উপক’লীয় এলাকায় ক্ষতিকর মৎস্য আহরন উপকরসমুহ ধংশে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। যার সুফল ইতোমধ্যে মিলতে শুরু করেছে বলে মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। এবারো এলক্ষে মৎস্য অধিদপ্তরের সাথে বাংলাদেশে নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, কোষ্ট গার্ড, র্যাব ও পুলিশ ছাড়াও জেলা প্রশাসন সহ সরকারী মোট ৭টি সংস্থা একযোগে কাজ করছে।
এ কর্মসূচীর আওতায় বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠী, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের সাথে এবার গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরিয়তপুর জেলাকেও অন্তভর্’ক্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিটি জেলা ও উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা ছাড়াও জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগনকে নিয়ে টাস্কফোসর্ এলক্ষ্যে কাজ করছে।
বর্তমানে দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি’তে মৎস্য সেক্টরের অবদান ৩.৫০%। আর কৃষিজ আয়ের ২৫.৭২% আসে মৎস্য উপখাত থেকে। আর দেশের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যে প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশই যোগান দেয় মাছ। বর্তমানে মানুষের দৈনিক গড়ে চাহিদার ৬০ গ্রাম চাহিদার বিপরিতে ৬২.৫৮ গ্রাম মাছ গ্রহন করছে দেশের মানুষ। পাশাপাশি দেশের ১২% মানুষ কোন না কোনভাবে এখন মৎস্য সেক্টর থেকে জীবিকা নির্বহ করছে। যার মধ্যে ১৪ লক্ষ নারী।
গত ১ নভেম্বর থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে জাটকা আহরন,পরিবহন ও বিপনন নিষিদ্ধ রয়েছে। বর্তমান বিশেষ অভিযান চলমান থাকলে আগামীতে ইলিশ সহ দেশের উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মৎস্য অধিপ্তরের দায়িত্বশীল মহল। গত এক দশকে দেশে ইলিশের উৎপাদন সোয়া ২ লাখ টন থেকে প্রায় ৫.৩৩ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে বলে জানা গেছে। যা চলতি অর্থ বছরে ৫.৪০ লাখ টনে ও আগামী অর্থবছরে সাড়ে ৫ লাখ টনে উন্নীত হবার সম্ভবনার কথা জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছওে দেশেমাছের উৎপাদন চিল ৪৩.৮৫ লাখ টন।
২০১৮-এর ৭Ñ২৮ অক্টোবর আহরন বন্ধ থাকাকালে উপকূলের প্রজননস্থল সহ অভ্যন্তরীন মূক্ত জলাশয়ে ৪৮% মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পায় । প্রজননক্ষম মা ইলিশের হার ২০১৭ সালে ৭৩% থেকে ’১৮ সালে ৯৩%-এ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি এসময়ে প্রজনন সাফল্যও ৮০%-উন্নীত হয়। ইলিশ আহরন নিষিদ্ধের ফলে ২০১৮ সালে দেশে ৭ লাখ ৬ হাজার কেজি উৎপাদিত ডিমের ৫০%-এর সাফল্যজনক পরিস্ফুটন ও ১০% বেঁচে থাকলেও ইলিশ পরিবারে নতুন ৩ হাজার কোটি জাটকা যূক্ত হয়। এমনকি গতবছর প্রজনকালীন সময়ে দেশের প্রধান ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র সমুহে পরিক্ষামূলক নমুনায়নে ৮৩% ইলিশের রেনু পাওয়া গিয়েছিল। এসময়ে ঐসব এলাকায় ১৭% অন্যান্য মাছের রেনু পোনা পাওয়া যায়।
এসব রেনু ও লার্ভী সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার লক্ষেই ক্ষতিকর মৎস্য আহরন উপকরনাদী বন্ধে বর্তমান বিশেষ কম্বিং অপরাশেন পরিচালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক। তার মতে, দেশের মৎস্য সম্পদের জন্য বড় ধরনের হুমকি কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জাল সহ এসব ক্ষতিকর মৎস্য উপকরনসমুহ। এসব ক্ষতিকর উপকরনসমুহ চিঞ্হিত করেই সরকার তা বন্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে বলেও জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন